করোনা—‘হেভিওয়েট’ নেতাদের ঘিরে বিএনপিতে ক্ষোভ

করোনাকালে চট্টগ্রামে দেখা মিলছে না বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের। কারামুক্তির আগে-পরে নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানকে দলীয় কর্মসূচি ও সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা গেছে। তবে নির্বাচনি প্রচারণার কয়েকদিন ছাড়া করোনার প্রায় পুরো সময়টাতেই রাজপথে অনুপস্থিত দলটির কেন্দ্রীয় ‘হেভিওয়েট’ নেতারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী থেকে শুরু করে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান, সাবেক মন্ত্রী এম মোরশেদ খান এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সিটি মেয়র মীর মো. নাছির উদ্দিনের কেউই রাজপথে নেই। অথচ বিএনপির এই চার সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে জায়গা করে নিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশাও তাই তাদের কাছে অন্যদের চেয়ে কিছুটা হলেও বেশি।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের সরকারি ঘোষণা আসার পর থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচি ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে একরকম অনুপস্থিত বিএনপির এই শীর্ষ নেতারা। নগর বিএনপির তৃণমূল নেতৃবৃন্দের ভাষ্য ও গণমাধ্যমের খবর বিশ্লেষণে গত এক বছরে এই চার নেতার উল্লেখযোগ্য কোনো তৎপরতার খবর মেলেনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ও সরকারের মন্ত্রিপরিষদে চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্ব করা বিএনপির এই রাজনীতিবিদদের কাছে দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। করোনার মতো জাতীয় দুর্যোগে তাদের ‘মাঠে না থাকায়’ দলের ভেতরে-বাইরে তাই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, করোনা মহামারীতে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, দলীয় নেতা-কর্মীদের অনেকেই তাদের দেখা পাননি!

এরমধ্যে সাবেক মন্ত্রী এম মোরশেদ খান গত বছর প্লেন ভাড়া করে সস্ত্রীক দেশত্যাগ করেছেন। তবে এর আগেই ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর তিনি দলীয় পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। ওই সময় তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ব্যক্তিগত কারণে আমি পদত্যাগ করছি। অনেক বিচার-বিশ্লেষণ করে করে আমার উপলব্ধি হয়েছে- এই দলে আমার আর কনট্রিবিউশন করার কিছু নেই। সেজন্য পদত্যাগ করেছি।’

তবে মোরশেদ খানের পদত্যাগপত্র দলের হাইকমান্ড গ্রহণ করেছেন কি-না তা অজানাই রয়ে গেছে।

এদিকে দুই সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আবদুল্লাহ আল নোমানকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর প্রচারণায় দেখা গেলেও এরপর থেকে তাদের উল্লেখযোগ্য কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

এছাড়া উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার, নগর বিএনপির দুই নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রার্থী মো. সামসুল আলম এবং এরশাদ উল্লাহর রাজপথে অনুপস্থিতিও আলোচনার খোরাক যুগিয়েছে।

এর বাইরে উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরী কারাবন্দী অবস্থায় আছেন। সালাউদ্দিন কাদের-গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী পরিবারের সদস্যরাও রাজনীতির মাঠে একরকম অনুপস্থিতই বলা চলে।

অপরদিকে করোনাকালের শুরু থেকেই নগর ও দক্ষিণ জেলার দুই শীর্ষ নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবু সুফিয়ানকে পাশে পেয়েছেন দলের নেতা-কর্মীরা। দলীয় কর্মসূচি ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে তাদের সরব উপস্থিতি গণমাধ্যমের খবরে উঠে এসেছে। এছাড়া বাঁশখালীর সাবেক সাংসদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী ও চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করও দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে করোনাকালীন সময়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন নীরবতায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে খোদ নগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের মধ্যেই। তবে সাংগঠনিক সীমাবদ্ধতার কারণে চাইলেও কেউ মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছেন না।

জানতে চাইলে নগর যুবদলের এক নেতা নিজের ক্ষোভের কথা জানান এ প্রতিবেদককে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নেতা বলেন, বিএনপির ওই কেন্দ্রীয় নেতারা আসলেই ভাগ্যবান। সেই দশ-বারো বছর আগে ক্ষমতায় ছিলেন। দল, কর্মী কিংবা সাধারণ মানুষের জন্য কোনো ভূমিকা না থাকার পরও বিএনপির তৃণমূল কর্মীরা এখনও তাদের অনুসরণ করে চলেছে। এখনও প্রধান অতিথির ‘স্পেসটা’ তারা বিনা পরিশ্রমে, বিনা পারিশ্রমিকে উপভোগ করে যেতে পারছেন। এক এগারোতে এসব নেতার মুখোশ উন্মোচিত হয়েছিল অনেকটাই।

জানতে চাইলে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমি অসুস্থ। তাছাড়া করোনা-লকডাউনের কারণে এখন রাজনৈতিক কর্মসূচিও তো সেভাবে হচ্ছে না।

একই ব্যাপারে জানতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমকে একাধিকবার ফোন করা হয়। তবে ফোন বন্ধ থাকায় তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!