অন্তরালে ছিলেন দীর্ঘদিন। নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দেখা মেলে না। স্থানীয় কিংবা জাতীয় কোনো কর্মসূচিতেও দীর্ঘদিন ধরে নেই বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য এমএ লতিফ। দলের কোনো কর্মসূচিতে না থাকার বিষয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমের জিজ্ঞাসার উত্তরে সাংসদ লতিফের সহজ উত্তর ছিল ‘অসুস্থ’। অসুস্থতার কারণেই নাকি তিনি আওয়ামী লীগের কোনো কর্মকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে পারছেন না।
অসুস্থ সেই লতিফকেই এবার দেখা গেল প্রকাশ্যে, তা-ও রাতের আঁধারে। না, দলীয় কোনো কর্মসূচিতে নয়, লতিফ এসেছিলেন গোপন বৈঠকে।
আরও পড়ুন: হাসপাতালের পক্ষে ‘অর্থলোভী শকুনের দল’—কড়া সমালোচনার মুখে সুজন
এ ঘটনায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, অসুস্থতার কথা বলে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচিতে আসছেন না এমপি লতিফ। সেই অসুস্থ লতিফ সাহেব শীতের রাতে ঘর থেকে বের হলেন। অসুস্থ একজন মানুষ এত কষ্ট করে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন দলের প্রয়োজনে নয়। উনি ‘গোপন’ বৈঠকেই যোগ দিয়েছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ ডলফিনের নগরের ফিরিঙ্গিবাজারের বাসায় বৈঠকটি হয়েছিল মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে। যেখানে ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, ইব্রাহিম হোসেন বাবুল, কোষাধ্যক্ষ ও সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এবং বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ ডলফিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, এখন একটা মিটিংয়ে আছি। পরে কথা বলব।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের ৩ নেতার সুতোয় ঝুলছে ১৫ ইউনিট সম্মেলন
সূত্র জানায়, অত্যন্ত গোপনে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ওই নেতারা ছাড়া নগর আওয়ামী লীগের আর সব নেতার কাছে বৈঠকের বিষয়টি গোপন রাখা হয়। তবে ‘গোপন’ সেই বৈঠক শেষ পর্যন্ত গোপন থাকেনি।
রাতে আলোকিত চট্টগ্রামের কাছেও খবর আসে গোপন সেই বৈঠকের। দোভাষের ফিরিঙ্গি বাজারের বাসায়ও যান আলোকিত চট্টগ্রামের আলোকচিত্র সাংবাদিক। সেখানে গিয়ে রাত সাড়ে ১০টায় সিটি মেয়র রেজাউল করিম ও উপমন্ত্রী নওফেলের গাড়ি দেখতে পান। এরপর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যান নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।
ওইসময় ডলফিনের বাসার এলাকাটি ছিল পুলিশের কড়া প্রহরায়। দায়িত্বরত পুলিশ কঠোর ভাষায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন, অনুমতি ছাড়া এখানে কোনো ছবি তোলা যাবে না।
এদিকে লতিফ যে গোপন বৈঠকে গিয়েছিলেন সেখানে ছিলেন খোরশেদ আলম সুজন। অথচ এই সুজনই লতিফের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। সেটি ২০১৬ সালের নভেম্বরের ঘটনা। ওইসময় অভিযোগ করা হয়- বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন সাংসদ লতিফ।
এ ঘটনায় ২২ নভেম্বর ‘জাগ্রত ছাত্র যুব জনতা’র ব্যানারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করা হয়। যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন খোরশেদ আলম সুজন।
সেই সমাবেশে লতিফের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের দাবি জানিয়ে খোরশেদ আলম সুজন বলেছিলেন, যেখানে পাকিস্তানিরাও বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করার সাহস পায়নি, সেখানে আওয়ামী লীগের তথাকথিত এক সাংসদ এ দুঃসাহস দেখিয়েছেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় চিহ্নিত গণদুশমনদের কেউ কেউ সংসদে বসে আছেন। দলের কতিপয় নেতা তাঁদের আশ্রয় দিচ্ছেন। যাঁরা আশ্রয় দিচ্ছেন, তাঁদের মনেও কালিমা রয়েছে।
আরও পড়ুন: সিআরবি ‘আন্দোলনের’—আওয়ামী লীগ ‘নেতাদের’ পদত্যাগ চান মাহতাব উদ্দিন
এদিকে ‘গোপন’ সেই বৈঠকের বিষয়ে কেউই সরাসরি মুখ খুলেননি। নাম গোপন রাখার শর্তে নগর আওয়ামী লীগের প্রবীণ এক নেতা আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, যিনি ওই গোপন বৈঠকের আয়োজক কিংবা যাঁরাই বৈঠক করেছেন তাঁরা কেউ দলের প্রয়োজনে সেখানে যাননি এটা নিশ্চিত। কারণ দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বিষয় থাকলে অন্তত আমি সেটা জানতাম। আবার ওই বৈঠককে ব্যক্তিগত বৈঠকও বলা যায় না।
আলোকিত চট্টগ্রাম