একসঙ্গে বেড়ে উঠা—বিয়ে, মৃত্যুতেও কেউ কাউকে ছাড়েননি

মিরসরাইয়ে মুহূর্তেই ৪ লাশ, চালক-হেলপার পলাতক

দুভাই একসঙ্গে ছোট থেকে বেড়ে উঠেছেন। বিয়েও করেছেন একসঙ্গে। আর পৃথিবীটাও ছাড়লেন একসঙ্গেই। বলছিলাম মিরসরাই উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের গড়িয়াইশ গ্রামের শামসুদ্দীন ও নুরজাহান দম্পতির ছেলে শেখ ফরিদ (৩০) ও শেখ জাহেদ সুমনের (২৬) কথা। পেশায় দুজনই অটোরিকশা চালক।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী অংশের রায়পুর এলাকায় কাভার্ডভ্যান চাপায় ঘটনাস্থলে নিহত হন চারজন। বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় উপজেলার গড়িয়াইশ গ্রামে একসঙ্গে দুভাইয়ের জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে পাশাপাশি কবর।

জানা গেছে, অটোরিকশা চালিয়ে অনেক দুঃখ-কষ্টে জীবন পার করেছেন বৃদ্ধ শামসুদ্দীন (৬০)। তিন ছেলেকে বড় করেছেন, তারা এখন উপার্জন করে সংসারের হাল ধরেছেন। বলতে গেলে অনেকটা অবসর সময় কাটে শামসুদ্দীনের। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! একসঙ্গে চলে গেলেন তাঁর বড় দুছেলে শেখ ফরিদ ও শেখ জাহেদ সুমন।

এদিকে পরিবারের বড় দুই ছেলেকে হারিয়ে শামসুদ্দীন এবং তার স্ত্রী নুরজাহান পাগলপ্রায়। তাঁরা বলেন, এভাবে আমার বুক খালি করে দুছেলে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে কখনো চিন্তা করতে পারিনি। আমরা এখন কাকে নিয়ে বাঁচব? ছোট ছোট নাতি-নাতিনদের কী হবে? ছেলের বউদের কী হবে? আপনারা আমার ছেলেদের মাফ করে দিবেন। এভাবেই বিলাপ করে কাঁদছেন তাঁরা।

বৃহস্পতিবার সকালে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, একপাশে কান্না করছেন মা, একপাশে কাঁদছেন নিহতদের স্ত্রী-সন্তান। এক কোণায় বসে কাঁদতে দেখা গেল তাদের আদরের একমাত্র ছোট বোন কুমছুমা বেগমকেও। স্বজনরা চেষ্চা করছের তাদের সান্তনা দিতে।

শেখ ফরিদের ছেলে রাহিম (৩) বাবাকে হারিয়ে যেন নিস্তব্ধ। আন্টির কোলে, কোনো শব্দ নেই। অথচ এই রাহিমই সবসময় পরিবারের সবাইকে হাসিখুশিতে রাখতো। সেই ছোট্ট রাহিমও যেন বুঝে গেছে তার বাবা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে।

এলাকার বাসিন্দা নুরুল মোস্তফা বলেন, ফরিদ এবং সুমন দুভাই বন্ধুর মতো চলাফেরা করতো। এলাকার কারো সাথে কোনদিন ঝগড়া-বিবাদ করতে দেখা যায়নি। দুভাই একসঙ্গে বিয়ে করেছেন, আবার একসঙ্গে মারাও গেলেন। তারা এভাবে চলে যাবে কখনো ভাবতে পারিনি।

ফরিদ এবং সুমনের ফুপু বলেন, আমার ভাই শামসুদ্দীন এবং নুরজানের ঘরে ৩ ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে বড় দুছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তারা দুজন ১২ বছর আগে একসঙ্গে বিয়ে করেছেন। তাদের দুজনের ঘরে ৪ ছেলে-মেয়ে রয়েছে। শেখ ফরিদের বড় মেয়ে তাসফিয়া (৭) স্থানীয় একটি নূরানী মাদরাসায় পড়াশোনা করে এবং রাহিম নামে ছেলে সন্তান রয়েছে। সুমনের বড় ছেলে নিশাত (৭), সেও স্থানীয় একটি নূরানী মাদরাসায় পড়াশোনা করে এবং মারিয়া (৪) নামে একটি মেয়ে রয়েছে।

এর আগে বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের সোনাপাহাড় ফিলিং স্টেশনের রায়পুর এলাকায় একটি লরি ও চট্টগ্রামগামী জোনাকি পরিবহনের গাড়ি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঝগড়া করছে। খবর পেয়ে সেখানে দায়িত্বরত হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তখন এলাকার লোকজন ও স্থানীয় অটোরিকশা চালকরাও ছিলেন। এ সময় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী একটি কাভার্ডভ্যান দাঁড়ানো সবাইকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে চারজন প্রাণ হারান। এতে দুপুলিশসহ আহত হয়েছেন ৬ জন। আহতদের মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল এএসআই মোস্তফার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশের ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর হোসেন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আহত এএসআই মোস্তফার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রাতে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত তার জ্ঞান ফিরে আসেনি। এ ঘটনায় দুর্ঘটনাকবলিত এলাকা থেকে গাড়ি তিনটি পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে গাড়ির চালক এবং হেলপার পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!