আমেরিকা প্রবাসীকে মালিক সাজিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সিটি স্ক্যাপ প্ল্যানার্স

আমেরিকা থাকেন মো. বাবুল মিয়া। আমেরিকা থাকাকালেই তাঁকে মালিক সাজিয়ে করা হয় সিটি স্ক্যাপ প্ল্যানার্স নামে একটি লিমিটেড কোম্পানি। আর সেই কোম্পানিকে হাতিয়ার করে বিভিন্ন গ্রাহকের সঙ্গে করা হয় কোটি কোটি টাকার প্রতারণা। দেশে আসার পর বাবুল জানতে পারেন তাঁকে মালিক সাজিয়ে এসব প্রতারণার কথা। এ অবস্থায় সিটি স্ক্যাপ প্ল্যানার্স লিমিটেড কোম্পানির ১৬ মালিকের বিরুদ্ধে তিনি মামলা ঠুকে দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৩ মে) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে এ মামলা করেন ভুক্তভোগী সেই প্রবাসী। পরে শুনানি শেষে মামলা তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন আদালত।

মামলায় আসামিরা হলেন- সন্দ্বীপ সমিতির হাট মুসাপুর কায়সারের বাড়ির আবুল খায়েরের ছেলে মো. আরাফাত (৪০), একই গ্রামের বাসস্থান চাঁদেরগো বাড়ির মৃত আবদুল বাতেনের ছেলে মো. মোমেন (৪৭), মাস্টার শফিক উদ্দিনের ছেলে শিহাব উদ্দিন (৪৩), মো. ইসার ছেলে মো. নাজমুস সাকিব (৪০), মৃত ইয়াছিনের ছেলে মাহবুবুর রহমান (৪৫), এএসএম সুফিয়ানের ছেলে এএসএম রফিকুল ইসলাম (৪১) ও এসএম সাইফুল ইসলাম (৩৯), মোশাররফ হোছাইনের ছেলে ইকবাল হোছাইন (৪২), ইকরামুল কবিরের ছেলে মোহাররামুল কবির (৪৯), গোপাল চন্দ্র রায়ের ছেলে পিযুষ চন্দ্র রায় (৪০), জাহিদুল ইসলামের মেয়ে সুরাইয়া বেগম (৬১), মৃত মো. ইমরান সওদাগরের ছেলে মো. শাহজাহান (৮০), আবুল খায়েরের মেয়ে জেসমিন মান্নান (৪৫), মো. শামসুল আলমের ছেলে শাহরিয়ার মাহমুদ (৩৯), রবিউল আলমের ছেলে রাশেদ হোছাইন (৩৫) এবং মো. মোদাছছার আহমদের ছেলে খন্দকার শামীম আহমদ (৫২)।

আরও পড়ুন: বাবা-ছেলে মিলে ১৭ লাখ টাকা হাতিয়েছে আমেরিকা প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধার

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. ফয়সাল নূর বলেন, মো. বাবুল মিয়াকে (৬৭) কখনো চেয়ারম্যান, কখনো ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিচয়ে সিটি স্ক্যাপ প্ল্যানার্স লিমিটেড কোম্পানি প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ ও ফ্ল্যাট বরাদ্দের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে নির্দিষ্ট সময়ে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে না পারায় বাবুলসহ বিবাদীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন গ্রাহকরা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাবুল দেশে ফিরে আসার পর মামলার বিষয়ে জানতে পেরে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছেন। আদালত তার মামলা গ্রহণ করে পিবিআইকে (মেট্রো) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাবুল মিয়া গত ৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী প্রবাসী হিসেবে বসবাস করছেন। চট্টগ্রামে কিছু পরিচিত ও আত্মীয়-স্বজন তার নাম ব্যবহার করে সিটি স্ক্যাপ প্ল্যানার্স লিমিটেড কোম্পানি নামে নগরের নাসিরাবাদ জাকির হোসেন রোড বাই লেইন ৩৬৯৫ শান্তিধারা আবাসিক এলাকার আনন্দ হাউসে অফিস খুলেন। পরে এ কোম্পানির নামে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বাবুলের স্বাক্ষর জাল করে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি কেনাবেচা করা হয়। এছাড়া কেনা জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের প্রতিশ্রুতিতে ফ্ল্যাট বুকিংয়ের নামে হাতিয়ে নেওয়া হয় কোটি কোটি টাকা। পরে ফ্ল্যাট বুঝে না পেয়ে গ্রাহকেরা বাবুলসহ আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মামলায় বাবুলের নামও রয়েছে।

মামলার অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা বাবুল দেশে বেড়াতে এলে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে মামলার বিষয়ে জেনে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। বিভিন্ন ব্যক্তি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করা মামলাসহ বিভিন্ন দপ্তরে এবং ভুয়া কোম্পানিতে ব্যবহার করা কাগজপত্র, কোম্পানির নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা কাগজপত্র, ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা এবং সেই হিসেবের চেকের বিষয়ে তদন্তের জন্য আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মামলা করেন।

এদিকে জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস তৈরির সময় বাদী যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন। কোম্পানির নামে তৈরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের কাগজপত্রে বাদীর কোনো স্বাক্ষর নেই। এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়ার কাগজপত্রেও বাবুলের স্বাক্ষর নেই। বিভিন্ন ব্যক্তি ও কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিপত্র কিংবা লেনদেনের রশিদে বাবুলের স্বাক্ষর নেই বলেও উল্লেখ করা হয়।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!