আতঙ্ক—‘ইয়াস’ আঘাত হানলে কী হবে গুলিয়াখালীর

তিন বছরেও সংস্কারের ছোঁয়া পায়নি গুলিয়াখালীর স্লুইস গেট। ২০১৭ সালে পাহাড়ি ঢলে ধসে পড়ে এটি। এরপর আইলা, আম্পান, মহাসেনের মতো কয়েকটি প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে তাণ্ডব চালিয়ে গেলেও সংস্কার হয়নি জীবন রক্ষাকারী বাঁধটি।

এদিকে এর চড়া মাশুল দিতে হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের তাদের ফসল ডুবে যায় পানিতে। আর যদি ঘূর্ণিঝড় হয় তাহলেতো কথাই নেই। ক্ষেত থেকে শুরু করে পুকুরের মাছ—সবই ভেসে যাবে স্রোতে।

উপজেলার ৪ নম্বর মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালীর স্লুইস গেটটি ধসে পড়লে গতবছর খুব ক্ষতির সম্মুখীন হন কৃষকরা। এ ইউনিয়নে প্রায় চার হাজার কৃষক পরিবার রয়েছে। ফসল-সবজি চাষ করে সংসার চলে তাদের। আর এখান থেকে সবজি উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা।

এদিকে গতবারের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই এবার চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। যদি ইয়াস উপকূলে আঘাত হানে তাহলে আবারো স্রোতে ভেসে যাবে ফসল। এ অবস্থায় ইয়াসআতঙ্কে ঘুম চেলে গেছে এখানকার কৃষকদের।

ইউনিয়নের পশ্চিমে রয়েছে সমুদ্র উপকূল। তাই জীবন রক্ষাকারী এই স্লুইস গেটটি ভেঙে যাওয়ার পর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানির কারণে চলাচলের রাস্তাটি একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া সাগরসংযুক্ত খাল ও ছড়াগুলো মাটিতে ভরাট হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সবজি ক্ষেতগুলোতে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় কৃষক আয়ুব আলী ও মো. আবু তাহের জানান, গতবছর পাহাড়ি ঢলে তাদের ক্ষেতের সবজি পানিতে তলিয়ে যায়। এ বছর অনেক ঝুঁকি নিয়ে তারা ধানসহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজির চাষ করেছেন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস তাঁদের শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সাগরের বেড়িবাঁধ ও সমুদ্রের সঙ্গে সংযুক্ত খালগুলো মাটিতে ভরাট হয়ে গেছে। স্লুইস গেটটিও দীর্ঘদিন ধরে অকেজো পড়ে আছে।

মুরাদপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাহেদ হোসেন নিজামী (বাবু) আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ২০১৭ সালে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে গুলিয়াখালী স্লুইস গেটটি ধসে পড়েছিল। তখন প্রায় কোটি টাকার পুকুরের মাছ ও সবজি পানির স্রোতে ভেসে যায়। খাল ও স্লুইস গেট সংস্কার বিষয়ক একটি ফাইল তিন বছর পানি মন্ত্রণালয় অধিদপ্তরে ঝুলে আছে। আমি বারবার চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে স্লুইস গেটটি নির্মাণের বিষয়ে জানালেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেননি। অথচ খাল ও স্লুইস গেটটি দ্রুত সংস্কার করা না গেলে প্রতিবছর বর্ষায় কৃষক ও মৎস্যচাষিরা বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আসছি। তারা ব্যবস্থা নেবে বলে আমাকে জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনিস হায়দার খাঁন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী স্লুইস গেটের স্থায়ী নির্মাণকাজের কোনো বরাদ্দ এখনো আসেনি। গত তিন বছর ধরে বরাদ্দের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বরাদ্দ আসামাত্রই স্লুইস গেটের নির্মাণকাজ শুরু হবে।

ডিসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!