‘গলাকাটা’ লাইভ ফিশের ফাঁদ—১৭০ টাকার তেলাপিয়া পর্যটকের হাতে যায় ১১০০ টাকায়

কক্সবাজারের গলাকাটা বাণিজ্যের ‘খ্যাতি’ রয়েছে দেশজুড়ে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে লাইভ ফিশ (ইএফসি) রেস্টুরেন্ট। ঈদ ঘিরে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমনের পূর্ণ ফায়দা লুটছে এই রেস্টুরেন্ট।

পর্যটকের নজর কাড়তে ‘অ্যাকুরিয়াম’ নাম দিয়ে নামমাত্র পানির মধ্যে রাখা হয় মাছ। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি পাইকারি ১৭০ টাকা কেজিতে কিনেন তেলাপিয়া মাছ। আর সেই মাছ পানি থেকে তেলে পড়লেই হয়ে যায় হাজার টাকা! তাদের এমন গলাকাটা বাণিজ্যে চরম ক্ষুব্ধ পর্যটকের পাশাপাশি স্থানীয়রাও।

গত ৫ মে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা তিন বন্ধু খাবার খেতে যান লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্টে। ওই সময় তাদের তেলাপিয়া ও সরপুটি মাছ দেখানো হয়। তবে তখন তাদের মাছের দাম বলা হয়নি। এরমধ্যে তারা একটি তেলাপিয়া ও একটি সরপুটি মাছ পছন্দ করে দেন। পছন্দের সেই মাছ খাওয়ার পর বিল দেখে তারা হতভম্ব!

আরও পড়ুন: টিকটক ফাঁদ—ধর্মান্তরিত হয়েও সুখে নেই পিংকি, কপালে জুটল ৪ সতীনের ঘর

বিলে দেখা যায়, একটি ৫৮০ গ্রাম ওজনের তেলাপিয়া মাছের দাম ৬৩৮ টাকা! কেজি হিসেবে যার দাম ১ হাজার ১শ টাকা! অথচ এই মাছটিই তারা কিনেছিল ১৭০ টাকা কেজি দরে! এই হিসেবে ৫৮০ গ্রাম ওজনের মাছটির দাম পড়ে ৯৮ টাকা ৬০ পয়সা।

শুধু তাই নয়, ৪৪০ গ্রাম ওজনের একটি সরপুটি মাছের দাম ৬১৬ টাকা। কেজি হিসেবে যার দাম পড়ে ১ হাজার ৪শ টাকা! অথচ বাজারে এই সাইজের এক কেজি সরপুটি মাছের দাম সর্বোচ্চ ৪৩০ টাকা।

ওই বিলটিতে ৩ প্লেট ভাতের দাম লেখা আছে ২৭০ টাকা! আর এক প্লেট আলু ভর্তা ৯০ ও এক প্লেট ডাল ১৫৫ টাকা। মোট বিলের সঙ্গে আবার অতিরিক্ত যোগ করা হয়েছে ১৭৯ টাকা। এই বিল দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন তিন বন্ধু।

এদেরই একজন ইয়াছিন আরাফাত চৌধুরী। তিনি এমন গলাকাটা বিল নিয়ে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। তরুণের এমন অগ্নিমূর্তি দেখে অবশ্য রেস্টুরেন্ট মালিক ও ম্যানেজার তাদের কিছু ডিসকাউন্ট দিয়ে ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টা করেন।

এদিকে ওই লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে গলাকাটা বিলের যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে রাজধানী ঢাকার ধানমণ্ডি থেকে পরিবার নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে আসা হিল্লুল চৌধুরীকেও।

আরও পড়ুন: রাতের আঁধারে ছিনতাইয়ের ফাঁদ পেতেছিল হামকা গ্রুপের ৩ তরুণ

হিল্লুল চৌধুরী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, রেস্টুরেন্টের নামে লাইভ ফিশ পর্যটকদের ওপর জুলুম করছে। এটি প্রশাসনের অবশ্যই নজরে নেওয়া দরকার। এভাবে চললে পর্যটকেরা কক্সবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্টের পাশেই রয়েছে একটি পুকুর। যেখানে চাল করা হয় তেলাপিয়া। পুকুরের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তাঁর কাছ থেকেই তেলাপিয়া মাছ কিনে নিয়েছে লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্ট। প্রতি কেজি তেলাপিয়া তিনি বিক্রি করেছেন ১৭০ টাকায়।

১৭০ টাকা কেজির তেলাপিয়া মাছ লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্টে পর্যটকদের কাছ থেকে ১ হাজার ১শ টাকা করে আদায় করার বিষয়ে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনের রাঁধুনী রেস্টুরেন্টের মালিক খোরশেদ আলম বলেন, ২৫০ কিংবা ৩০০ গ্রামের একটি তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ১০০ টাকায়। কিন্তু লাইভ ফিশ নাম দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ৭০০-৮০০ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যা খুবই অস্বাভাবিক।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অবশ্য ভিন্ন সুরে কথা বলেন লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্টেুর মালিক আকতার হোসেন। তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমরা অন্যান্য রেস্টুরেন্টের মতো পচা-বাসি খাবার পরিবেশন করি না। তাই আমাদের খাবারের দাম একটু বেশি।

১৭০ টাকা কেজি দরে কেনা তেলাপিয়া মাছ পর্যটকদের কাছ থেকে কেন ১ হাজার ১শ টাকা নেওয়া হচ্ছে জিজ্ঞেস করা হলে এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি আকতার হোসেন।

আরও পড়ুন: রমজানের বাজার গরম—ফায়দা লুটতে ‘ফাঁদ’ পেতেছে নামিদামি মার্কেটও

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজার জেলা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমাদের সমিতির অন্তর্ভুক্ত ১২০টির অধিক রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তার মধ্যে লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্ট নেই। পুরো জেলাজুড়ে রান্না করা এক পিস তেলাপিয়া মাছের দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আর লাইভ ফিশ রেস্টুরেন্টে একই মাছ বিক্রি করা হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকায়। পাশাপাশি সবকিছুই অতিরিক্ত দাম নেয় এই রেস্টুরেন্টটি। পর্যটক কিংবা স্থানীয়দের কথা মাথায় রেখে এই রেস্টুরেন্টের খাবারের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে প্রশাসনের নজরদারি জরুরি।

যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, পর্যটক কিংবা স্থানীয়দের কাছ থেকে কোনো রেস্টুরেন্ট যদি খাবারের দামে মাত্রাতিরিক্ত টাকা আদায় করে তাহলে প্রমাণসাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!