এক হালিমার চোখে অন্য হালিমার অপারেশন, অভিযোগের তীরে লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল

নগরের আগ্রাবাদ মিস্ত্রিপাড়ার বাসিন্দা হালিমা আক্তার (১৯)। নেত্রনালীর অপারেশন করাতে গিয়েছিলেন নগরের খুলশীর চট্টগ্রাম লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালে। কিন্তু অপারেশনের পর ধরা পড়ল এক হালিমার জায়গায় হয়েছে অন্য হালিমার অপারেশন!

নেত্রনালীর অপারেশন করাতে যাওয়া হালিমার চোখে বসিয়ে দেওয়া হলো লেন্স! এমন ভুলের পর দুঃখ প্রকাশ তো দূরে থাকুক তা ‘জায়েজ’ করতে চলে নানা তালবাহানা।

দীর্ঘ তিন ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হলো হালিমা ও তাঁর মাকে। এরপর আবার হালিমাকে নেওয়া হলো অপারেশন থিয়েটারে। সবশেষে বলা হলো, ১২ হাজার টাকা দিতে। অথচ হালিমার নেত্রনালীর অপারেশনের জন্য দেওয়ার কথা ছিল ৬ হাজার টাকা!

আরও পড়ুন: পার্কভিউ হাসপাতাল—আইসিইউ বেডেই ‘সাহসী’ অপারেশনের ‘যুদ্ধজয়’

পুরো ঘটনাটা শোনা যাক হালিমার মুখেই— আমার নেত্রনালীতে সমস্যা ছিল। ডাক্তার বলেছেন অপারেশন করতে হবে, ৬ হাজার টাকা লাগবে। এর আগে দুটো অপারেশনের তারিখ দিলেও অপারেশন হয়নি। শনিবার (৮ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী মায়ের সঙ্গে অপারেশন করতে যাই। এরপর আমাদের অপেক্ষা করতে বলা হয়। কিছুক্ষণ পর একজন এসে হালিমা আক্তার নাম ধরে ডাকলে আমি যাই। অপারেশন করা হলো।

এর পরপরই শুরু হয় ঝামেলা। অপারেশন শেষে ডাক্তার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমার স্বামীর নাম কী? বললাম, আমি তো অবিবাহিত। এরপর ডাক্তার আমার বাবার নাম জানতে চান। বাবার নাম বলতেই তিনি উনার সঙ্গে থাকা নার্সকে বলেন, ‘একটা ঝামেলা তো হয়ে গেছে। আরেক হালিমার অপারেশন একে করা হইছে।’

এরপর ডাক্তার চলে যান। আমরা অনেকক্ষণ বসে থাকলা। মা নার্সের কাছে গেলে, তারা এসে আমাকে আবার ওটিতে শুইয়ে দেয় সকাল ১০টার দিকে। বলে ডাক্তার আসবে, ওষুধ দেবে। তিন ঘণ্টা পর ডাক্তার আসলেন। নার্স বললেন— আমার যে অপারেশন হয়েছে, সেটার খরচ ১৫ হাজার টাকা। আমরা যেন ১২ হাজার টাকা জমা দিই।

আরও পড়ুন: ‘বিস্ময়’—হাসপাতালের কমোডেও বেঁচে ছিল নবজাতক

আমি বললাম, আপনারা লেন্স কেন লাগাইছেন, আমার চোখে তো কোনো সমস্যা নাই। তখন একজন আমাকে বললেন, আগে ছোট মেশিনে দেখে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। পরে সমস্যা মনে হওয়ায় আমার ভালোর জন্য তারা অপারেশন করেছে। এরপর আমাদের তাড়া দিতে থাকে বিল দিয়ে চলে যেতে।

ফোন ধরেননি সেক্রেটারি, পুলিশের বক্তব্যেও গড়মিল

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে লায়ন্স ক্লবের কেবিনেট সেক্রেটারি লায়ন এসএম আশরাফুল আলম আরজুর মোবাইলে কয়েক দফায় কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে হালিমা আক্তারের অভিযোগ তুলে ধরে এ সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য জানতে চেয়ে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালেও তিনি সিন করে কোনো উত্তর দেননি।

এদিকে ঘটনার ব্যাপারে খুলশী থানায় অভিযোগ করার কথা জানিয়েছেন হালিমা আক্তারের বড় ভাই আকাশ। যোগাযোগ করা হলে খুলশী থানার ডিউটি অফিসার বলেন, বিষয়টি দেখতে এসআই নুর ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তবে এসআই নুর ইসলাম বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তিনি জানলেও তাকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

এরপর খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উনারা মৌখিক অভিযোগ করেছেন, কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি। এরপরও আমরা বিষয়টি দেখছি।

এদিকে হালিমার পরিবার বলছে, তারা লিখিত অভিযোগ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সেটা নেওয়া হয়নি।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!