জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকের ৯১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলমসহ ৫২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) মামলার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন কমিশনের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে ৮২৭ কোটি ৪২ লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ টাকা মুনাফাসহ ৯১৮ কোটি ৫৭ লাখ ৫৪ হাজার ৭১৮ টাকা আত্মসাৎসহ বিনিয়োগকৃত অর্থের প্রকৃত উৎস ও প্রকৃতি গোপন করার জন্য হস্তান্তর/স্থানান্তর এবং রূপান্তরের মাধ্যমে অর্থপাচারের অপরাধ করেছেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন— সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম চৌধুরী, সদস্য মো. হাসানুজ্জামান, ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ড. মো. সেলিম উদ্দিন, সাবেক নমিনী পরিচালক সৈয়দ আবু আসাদ, সাবেক সদস্য ও ভাইস চেয়ারম্যান ডা. তানভীর আহমদ, সাবেক সদস্য মো. কামরুল হাসান, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক ড. মো. সালেহ জহুর, সাবেক পরিচালক প্রফেসর মো. নাজমুল হাসান, সাবেক পরিচালক ড. মো. ফসিউল আলম, সাবেক সদস্য আবু সাইদ মো. কাশেম, সাবেক পরিচালক জামাল মোস্তফা চৌধুরী, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুল মাওলা, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাহবুব উল আলম, সাবেক ডিএমডি তাহের আহমেদ চৌধুরী, ডিএমডি হাসনে আলম, ডিএমডি মো. আব্দুল জব্বার, এসইভিপি মো. সিদ্দিকুর রহমান, এসইভিপি এএএম হাবিবুর রহমান, এসইভিপি মো. সাঈদ উল্লাহ এবং এএমডি মো. ওমর ফারুক খান।
আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে গ্রাহকের টাকা মেরে দুদকের মামলায় ব্যাংক ম্যানেজারের ২৬ বছর কারাদণ্ড
এছাড়া কর্মকর্তাদের মধ্যে আসামির তালিকায় রয়েছেন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেকিউএম হাবিবুল্লাহ, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মু. কায়সার আলী, সাবেক ডিএমডি মোহাম্মদ আলী, সাবেক ডিএমডি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী, বর্তমান এএমডি মো. আলতাফ হোসেন, সাবেক ডিএমডি মো. সাব্বির, এসইভিপি জিএম মু. গিয়াস উদ্দিন কাদের, সাবেক ডিএমডি মিফতাহ উদ্দিন, সাবেক এসইভিপি মোহাম্মদ উল্লাহ, সাবেক ডিএমডি আবুল ফাইয়াজ মো. কামাল উদ্দিন, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. ফরিদ উদ্দিন, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. রেজাউল করিম, সাবেক এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট খালেদ মাহমুদ রায়হান ও ভিপি মো. ইহসানুল ইসলাম।
ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখা প্রধান মো. মনজুর হাসান, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মু. সিরাজুল কবির, এসএভিপি মো. মমতাজ উদ্দিন চৌধুরী, দুলারি এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর মো. ছাদেকুর রহমান, মুছা এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর মো. মুছা চৌধুরী, এমএম করপোরেশনের প্রোপ্রাইটর মো. রফিক, অ্যাপার্চার ট্রেডিং হাউজের প্রোপ্রাইটর এসএম নেছার উল্লাহ, ফেমাস ট্রেডিং করপোরেশনের প্রোপ্রাইটর আরশাদুর রহমান চৌধুরী, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাশেদুল আলম, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন লিমিটেডের পরিচালক মো. আব্দুস সবুর, আনছার এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর আনছারুল আলম চৌধুরী, রেইনবো করপোরেশনের প্রোপ্রাইটর রায়হান মাহমুদ চৌধুরী, কোস্টলাইন ট্রেডিং হাউসের প্রোপ্রাইটর এরশাদ উদ্দিন, গ্রিন এক্সপোজ ট্রেডার্সের প্রোপ্রাইটর এমএ মোনায়েম, ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী ও সোনালি ট্রেডার্সের প্রোপ্রাইটর সহিদুল আলম।
জানা যায়, গত ২১ আগস্ট এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। এরপর বিভিন্ন সময় ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি ঘটনা প্রকাশ্যে আসতে থাকে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসেও ইসলামী ব্যাংকের ব্যাপক ঋণ জালিয়াতির ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। নিয়ম না মেনে তিনটি প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকের চট্টগ্রামের তিন শাখা থেকে ৩ হাজার ২৫৭ কোটি ঋণ দেওয়া হয়।
দুদকে এসব অভিযোগ জমা হওয়ার পর কমিশন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় সংস্থার উপপরিচালক সিরাজুল হককে। পরে তিনি বদলি হলে দায়িত্ব বর্তায় দুদকের উপপরিচালক ইয়াছির আরাফাতের কাছে। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গত আগস্টে গতি পায় ইসলামী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির অনুসন্ধান। এরপর গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ব্যাংকটির অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।
এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর আহসানুল আলমের বিরুদ্ধে ইসলামী ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করে দুদক। ওই মামলায় আহসানুল আলম ছাড়াও ৫৭ জনকে আসামি করা হয়। এরপর গত ৯ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৯৯৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আরেকটি মামলা করে দুদক। সেই মামলায় আহসানুল আলমসহ ৫৪ জনকে আসামি করা হয়।
কেএ/আরবি