সাউথইস্ট ব্যাংকের ২৬৮ কোটি টাকার ঋণখেলাপি মামলায় নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কানাডায় টাকা পাচারকারী ধনকুবের জহির আহমেদ রতন এবং তাঁর ভাই ম্যারিন ভেজিটেবল অয়েলের চেয়ারম্যান টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। এছাড়া রতনসহ তাঁর দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চার হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণের দায় রয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) অর্থঋণ আদালতের বিচারক যুগ্ম জেলা জজ মুজাহিদুর রহমান শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামিরা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ কেনদুরবাগ মোহাব্বাতপুর এলাকার হাজী আব্দুল খালেকের ছেলে।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সাউথইস্ট ব্যাংক জুবলী রোড শাখা থেকে ম্যারিন ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেড ২৬৮ কোটি ৯১ লাখ ৯০ হাজার ৪৫২ টাকার খেলাপি ঋণ পরিশোধ করেনি। তাই নুরজাহান গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জহির আহমেদ রতন এবং তাঁর ভাই টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে দেওয়ানি আটকাদেশের সঙ্গে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের পাওনা টাকার জামানত হিসেবে বন্ধক দেওয়া সম্পত্তি দরপত্রের মাধ্যমেও বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। এজন্য ব্যাংকের পক্ষের আইনজীবী তাঁদের দেওয়ানি আটকের আবেদন করেন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
এর আগে ৮ সেপ্টেম্বর একই ব্যাংকের একই শাখা থেকে ৪৬৫ কোটি ৪৬ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭০ টাকার ঋণখেলাপি মামলায় নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ রতনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন আদালত। বাকি পাঁচজন হলেন- জহিরের স্ত্রী আসমিন মনোয়ারা প্রকাশ তাসমিন আহামেদ, ভাই টিপু সুলতান ও জসিম উদ্দিন, ইফতেখার আল-জাবের এবং ফরহাদ মনোয়ার। তাঁদের বিরুদ্ধে ৫ মাসের দেওয়ানি আটকাদেশে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।
আদালত সূত্রে জানা যায়, নুরজাহান গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের নামে এমডি জহির আহমদ রতন সবমিলিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ১৫টি মামলা আছে। এ কারণে আদালত তাঁর বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তাছাড়া বিভিন্ন মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলেও রতনের কোনো হদিস পায়নি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
আরও পড়ুন: ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ৪০০ কোটি টাকা মেরে দিল ব্যাংকেরই ‘পরিচালক’, পরোয়ানা
আরো জানা গেছে, নুরজাহান গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান জাসমির ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড ১১২ কোটি ৪৭ লাখ ৬২ হাজার ৮০১ টাকা ঋণ নেয় জনতা ব্যাংক লালদীঘি শাখা থেকে। ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় তা সুদ ও দণ্ড সুদসহ ৩২৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি এ পাওনা আদায়ের জন্য ৫ মাসের কারাদণ্ড দেন অর্থঋণ আদালত।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড জুবলী রোড শাখা নুরজাহান গ্রুপের দুই অঙ্গপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ২৯৭ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এর বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তির মূল্য ৪০ কোটি টাকা হতে পারে।
জহির আহমদ রতন মেসার্স আহমদ ট্রেডার্সের নামে ১১৮ কোটি ৫০ লাখ ৫১ হাজার ৮৮৩ টাকা ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। এ ঘটনায় ২০২০ সালে মামলা দায়ের করা হয়। ঋণের বিপরীতে কোনো স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক না থাকায় বাদীপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন করেন। আদালত তাঁর বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
রতনের স্ত্রী-সন্তান বসবাস করেন কানাডায়। এদিকে ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালত নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমদ রতনের পাসপোর্ট জব্দ ও তাঁর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।