৩ কারণে চট্টগ্রামের ছয়টি আসনে প্রার্থী দেয়নি বিএনপি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে ১০টিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। ৬টি আসনে এখনো কোনো প্রার্থী নিশ্চিত করেনি দলটি। কিন্তু কেন? এই প্রশ্নটিই এখন আলোচনার কেন্দ্রে চট্টগ্রামজুড়ে।

রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বিএনপির নির্বাচনী কৌশল। এর পেছনে তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, যেসব আসনে বিএনপির শক্ত প্রার্থী নেই; দ্বিতীয়ত, যেসব আসনে জোটবদ্ধ নির্বাচনের সম্ভাবনা আছে; তৃতীয়ত যেসব আসনে অন্তর্কোন্দলে ভুগছে বিএনপি।

বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতাও। তাঁরা বলছেন, এটি জাতীয় নির্বাচন, দেশের সবচেয়ে বড় নির্বাচন। এই নির্বাচনে জিততে হলে দলীয় শক্তির পাশাপাশি প্রার্থী বাছাই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক প্রার্থী নিশ্চিত করা না গেলে এর প্রভাব পড়বে ভোটে।

যেসব আসনে প্রার্থী নেই

এখনো ছয়টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম ৬ (রাউজান) আসন। আসনটিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। দুই নেতার বিরোধে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে রাউজানে ১৪টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। দুজনের কাউকে প্রার্থী করা হলে দলে বিরোধ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) ও চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে নেই বিএনপির হেভিওয়েট কোনো মনোনয়ন প্রত্যাশী। ধারনা করা হচ্ছে, আসন দুটি জোটের জন্য হাতে রাখা হয়েছে। এলডিপির সঙ্গে জোট হলে অলি আহমদ ও তাঁর ছেলেকে এ দুটি আসন দেওয়া হতে পারে। আবার সমঝোতা হলে জামায়াতকে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসন ছেড়ে দেওয়া হবে।

প্রার্থী দেওয়া হয়নি চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনেও। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ইস্রাফিল খসরু দীর্ঘদিন ধরে মাঠে আছেন। আমীর খসরুকে একটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করায় তাঁর ছেলেকে প্রার্থী করা হবে কিনা, চলছে সেই হিসাব-নিকাশ।

এদিকে চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে রয়েছেন বেশ কয়েকজন। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা কামাল পাশা, উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তরিকুল আলম। এ অবস্থায় কোন্দল ঠেকাতেই আপাতত আসনটিতে প্রার্থী হিসেবে কারও নাম ঘোষণা করেনি বিএনপি।

জনশ্রুতি আছে, চট্টগ্রাম-৯ (কেতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে যে দলের প্রার্থী জয়ী হয় সেই দলই সরকার গঠন করে। গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটিতেও এখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। দলের ঐক্য ধরে রাখতেই এমন কৌশল, বলছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, যেসব আসনে আমাদের একাধিক মনোনয়নপ্রার্থী আছেন, সেখানে এই মুহূর্তে নাম ঘোষণা করা হলে ঝামেলা হতে পারে। তাই দলের নীতিনির্ধারকেরা একটু সময় নিচ্ছেন। এছাড়া কয়েকটি আসন জোটের জন্য রাখা হয়েছে, যদি জোট হয়।

যেসব আসনে প্রার্থী ঘোষণা

চট্টগ্রামের ১০টি আসনে প্রার্থী নিশ্চিত করেছে বিএনপি। এর মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন (চেয়ারম্যান), চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার আলমগীর, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী সালাউদ্দিন, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) চট্টগ্রাম বিভাগে বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী; চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী ও চান্দগাঁও) চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ; চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী-হালিশহর) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী; চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ এনামুল হক; চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী।

এর মধ্যে নতুন মুখ হিসেবে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের ছেলে মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী ছেলে মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী, দলীয় নেতা নুরুল আমিন ও সরওয়ার আলমগীর এবং একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm