১১৫ বছরের ইতিহাসসমৃদ্ধ ‘আবদুল জব্বারের বলীখেলা’। ১১৫তম আসরে সৃষ্টি হয়েছে নতুন ইতিহাস। এর আগে কখনোই হয়নি এমনটি।
ফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলে কুমিল্লার বাঘা শরীফ সঙ্গে একই জেলার রাশেদের। টানা ১০ মিনিটের লড়াইয়ে কেউ কাউকে পরাস্ত করতে পারেননি। ১১ মিনিটের মাথায় ঘটল এমন এক ঘটনা শতবর্ষী বলীখেলার ইতিহাসে যা কখনো ঘটেনি। ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের বালুর মঞ্চে হঠাৎ বাঘা শরীফের হাত তুলে তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করে দিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী রাশেদ!
এ বিষয়ে জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার বাদল আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ১১৫ বছরের বলীখেলার ইতিহাসে এবারই প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বীর হাত তুলে বিজয়ী ঘোষণা করার ঘটনা ঘটল।
তিনি বলেন, ১০৭তম আসর থেকে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন প্রথা বাতিল করা হয়। এরপর সিলেকশন পদ্ধতিতে একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন শামসু। পরের বছর সিলেকশন পদ্ধতিও বাতিল করা হয়। অর্থাৎ লড়াই করে একজন আরেকজনকে হারাতে হবে। কিন্তু এবার টানা ১০ মিনিট লড়াইয়ের পর বাঘা শরীফের হাত তুলে তাঁকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করলেন প্রতিদ্বন্দ্বী রাশেদ। ১১৫ বছরের বলীখেলার ইতিহাসে আগে কখনোই এমন ঘটনা ঘটেনি।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে শুরু হয় বলীখেলা। ফাইনাল খেলা শুরু হয় ৫টা ২৯ মিনিটে।
এর আগে তীব্র রোদ ও গরমের মাঝেই লালদীঘি মাঠ ও আশপাশের এলাকা পূর্ণ হয়ে উঠে বিভিন্ন বয়সী দর্শকে। এসময় ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের।
আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে জব্বারের বলীখেলা ২৫ এপ্রিল, ৩ দিনের জমজমাট মেলা
এবারের খেলায় তৃতীয় হয়েছেন খাগড়াছড়ির সৃজন চাকমা। আর চতুর্থ হয়েছেন সীতাকুণ্ডের রাসেল।
এর আগে খেলায় ৮০ জন বলী অংশ নেন। এর মধ্যে প্রথম রাউন্ডে উঠে ৩৫ জন। পরে ৮ জনের মধ্যে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা হয়। সেখান থেকে ৪ জন সেমিফাইনালে উত্তীর্ণ হয়।
সেমিফাইনালে সৃজন চাকমাকে হারিয়ে ফাইনালে যান কুমিল্লার রাশেদ। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে রাসেলকে হারান বাঘা শরীফ।
করোনা মহামারীর কারণে দুবছর (২০২০-২১) আবদুল জব্বারের বলি খেলা হয়নি। এরপর ২০২২ সালে ১১৩তম আসরে কুমিল্লার শাহজালাল বলীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন চকরিয়ার তারেকুল ইসলাম জীবন। পরের বছর ২০২৩ সালে ১১৪তম আসরে কুমিল্লার জীবনকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হন শাহজালাল বলী। এর আগে বলীখেলার ১১০তম আসরে কুমিল্লার শাহজালাল ও ১০৯তম আসরে চকরিয়ার জীবন চ্যাম্পিয়ন হন।
এবারের আসরে গতবারের চ্যাম্পিয়ন শাহ জালাল বলী নাম জমা দিলেও খেলেননি। কারণ শিষ্য বাঘা শরীফকে সুযোগ দিতে তিনি সরে দাঁড়ান। আর জীবন বলী মাঠে উপস্থিত থাকলেও খেলেননি শারীরিক অসুস্থতার জন্য। এজন্য চ্যাম্পিয়ন হয়ে গুরু শাহজালালের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বাঘা শরীফ।
এর আগে নগরের লালদীঘি মাঠে বেলুন উড়িয়ে বলীখেলার ১১৫তম আসর উদ্বোধন করেন অতিথিরা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। উদ্বোধক ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্পন্সর প্রতিষ্ঠান এনএইচটি স্পোর্টস কমপ্লেক্স ও মীন এগ্রো ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মো. তানসীর।
এবার চ্যাম্পিয়নকে নগদ ৩০ হাজার টাকা, রানার্সআপকে ২০ হাজার টাকা, তৃতীয়কে ১০ হাজার টাকা এবং চতুর্থকে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে পুরস্কার বিতরণের সময় তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা। এসময় হুমড়ি খেয়ে পড়ে দর্শনার্থীরা।
প্রসঙ্গত, ১০৩ বছর আগে ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর এ প্রতিযোগিতার সূচনা করেন। তার মৃত্যুর পর এ প্রতিযোগিতা জব্বারের বলীখেলা নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রতিবছর ১২ বৈশাখ নগরের লালদীঘি মাঠে এ বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ খেলায় অংশগ্রহণকারীদের বলা হয় ‘বলী’। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ‘কুস্তি’ বলীখেলা নামে পরিচিত।
আলোকিত চট্টগ্রাম