এশিয়ার একমাত্র মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদাপাড়ে এখন উৎসবের অপেক্ষায় ডিম সংগ্রহকারীরা। কারণ ইতোমধ্যে নমুনা ডিম ছেড়েছে মা মাছ। এবার ডিম সংগ্রহের অপেক্ষায় আছেন হালদাপাড়ের প্রায় ৬শ’ সংগ্রহকারী।
আজ (শনিবার) সকাল থেকেই বালতি, নেট ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে নদীতে নৌকা ও বাঁশের ভেলা ভাসিয়ে ডিম সংগ্রহের অপেক্ষায় আছেন সংগ্রহকারীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হালদার নদীর হাটহাজারী ও রাউজান অংশের আজিমের ঘাট, অংকুরি ঘোনা, কাগতিয়ার মুখ, গড়দুয়ারা নয়াহাট, বিনাজুরী সোনাইর মুখ, রাম দাশ মুন্সির ঘাট, মাছুয়া ঘোনা, সত্তার ঘাট, নাপিতের ঘাট,নয়াহাটসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ডিম সংগ্রহকরীরা অপেক্ষা করছেন।
আরও পড়ুন: মা মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুমেও হালদায় চলছে বালু উত্তোলন—যান্ত্রিক নৌযান
ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, গত শুক্রবার (১৩ মে) রাতে মাছুয়াঘোনা, নয়াহাটসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ডিম সংগ্রহকারীরা নমুনা ডিম সংগ্রহ করেছেন। তবে নমুনা ডিমের পরিমাণ সামান্য হলেও এটি পূর্ণ ডিম ছাড়ার লক্ষণ। সাধারণত বর্ষা মৌসুমের শুরুতে (এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে) হালদায় ডিম ছাড়ে মা মাছ। ওই সময় পূর্ণিমা বা অমাবস্যার তিথিতে যখন নদীতে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় তখন মা মাছ ডিম ছাড়ে। বিশেষ করে পূর্ণিমা অথবা অমাবস্যার তিথিতে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হয় এবং সঙ্গে পাহাড়ি ঢল নামে তখন মা মাছ ডিম ছাড়ে।
এদিকে আজ (শনিবার) মা মাছ ডিম ছাড়ার ‘জো’ হলেও এখনও বৃষ্টির দেখা নেই। আকাশে মেঘ ও বাতাস দেখে বেশিরভাগ ডিম সংগ্রহকারীরা মনে করেন রাতে বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
হালদাপাড়ের ডিম সংগ্রহকারী মো. শফি বলেন, নদীর মাছুয়াঘোনা ও নয়াহাট অংশে মা মাছ নমুনা ডিম ছেড়েছে। আজ (শনিবার) ‘জো’ হিসেবে মা মাছ ডিম ছাড়ার কথা। আকাশে মেঘ রয়েছে। রাতে বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নামলেই মা মাছ ডিম ছাড়বে।
হাটহাজারী উপজেলা সূত্রে জানা গেছে, হাটহাজারী মাদার্শা, শাহ মাদারি, মদুনাঘাট বড়ুয়াপাড়া, মাছুয়াঘোনাসহ তিনটি হ্যাচারি ও প্রায় একশ মাটির কুয়া প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনটি হ্যাচরি মিলে ২৯২টি নৌকা ডিম সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত আছে।
আরও পড়ুন: ইটভাটা শেষ করছে হালদার জীববৈচিত্র্য
এদিকে রাউজান অংশে একটি হ্যাচারি ও একাধিক মাটির কুয়া প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ডিম সংগ্রহকারী সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ডিম সংগ্রহকারী নৌকার সংখ্যা প্রায় ৬শ’। তবে মা মাছ ডিম ছাড়ার সময় কিছু শিকারী মা মাছ ধরার জন্য ওঁৎ পেতে থাকেন। সাধারণত মা মাছ ডিম ছাড়ার সময় খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সুযোগে মাছ শিকারীরা জাল ও বড়শি দিয়ে মা মাছ শিকারে মেতে উঠে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ডিম সংগ্রহকারী জানান, নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বড়শি ও জাল দিয়ে মা মাছ শিকারের প্রস্তুতি নিয়েছে কিছু শিকারী।
তবে এ বিষয়ে ব্যবস্থার নেওয়ার কথা জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল আলম। তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম পুলিশ নদীর পাড়ে অবস্থান করছেন। নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে ডিম সংগ্রহকারীদের সঙ্গে কথা বলে পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে ডিম সংগ্রহ ছিল মাত্র ৬ হাজার কেজি, ২০২০ সালে সর্বোচ্চ ডিম সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি।
আরও পড়ুন: হালদা—ভুল বিশেষজ্ঞদের, খেসারত ডিম সংগ্রহকারীদের
এর আগে ২০১৯ সালে ১০ হাজার কেজি ডিম থেকে রেণু মিলেছিল ২০০ কেজি। ২০১৮ সালের ৬৮০ কেজি ডিম থেকে রেণু মিলেছিল ৩৭৮ কেজি।
২০১৭ সালের ১ হাজার ৬৮০ কেজি ডিম পাওয়া যায়। ২০১৬ সালে নমুনা ডিম পাওয়া যায় ৭৩৫ কেজি। ওই বছর তিনবার নমুনা ডিম পাওয়া গেলেও আর ডিম ছাড়েনি মা মাছ।
২০১৫ সালের দুদফায় মোট ২ হাজার ৮০০ কেজি, ২০১৪ সালের ১৬ হাজার ৫০০ কেজি, ২০১৩ সালের ৪ হাজার ২০০ কেজি এবং ২০১২ সালে ২১ হাজার ২৪০ কেজি ডিম পাওয়া গিয়েছিল হালদা থেকে।
আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম