হাতে হাতে টিসিবির তেল চিনি ডাল—মুখে তৃপ্তির হাসি

চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে ‘ফ্যামিলি কার্ডে’ টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) পণ্য বিক্রি। এদিন নগরের বিভিন্ন এলাকার মানুষের হাতে হাতে ছিল তেল-চিনি-ডাল। বাজারের চেয়ে কম দামে এসব পণ্য কিনতে পারাদের মুখে ছিল তৃপ্তির হাসি।

আজ (রোববার) বেলা ১২টায় নগরের কাপাসগোলা রোডের পুরাতন ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র।

সরেজমিন দেখা যায়, কার্যালয়ে নিচে বাইরের কড়া রোদে দাঁড়িয়ে অপেক্ষারত বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের লম্বা লাইন। পুরুষ ৫ জন ও নারী ৫ জন এইভাবে কিছুক্ষণ পর পর নিচ থেকে উপরে তোলা হচ্ছিল। পণ্য নিয়ে ফেরত যাওয়াদের চোখে-মুখে ছিল খুশির ছাপ। এই উদ্যোগ যেন অব্যাহত থাকে এটাই প্রত্যাশা সকলের।

আরও পড়ুন: টিসিবির পণ্য—রহিমা অপর্ণা আঞ্জুমানরা শোনালেন কষ্টের গল্প

কথা হয় লাইনে দাঁড়ানো জানে আলম নামের একজনের সাথে। তিনি বলেন, প্রতিবছর রোজা আসার আগেই বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়ে যায়। এবারও তেল-চিনি-ডাল থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম এখন বাড়তি। আমার মত মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা এখন অনেক অসহায়। কিছু টাকা সাশ্রয় হবে এবং ঐ টাকা দিয়ে আমি অন্য একটা খরচ সামলাতে পারব সেই আশায় টিসিবির কার্ড সংগ্রহ করে লাইনে দাঁড়ালাম।

লাইনে দাঁড়ানো নার্গিস নামের আরেকজন জানে আলমের সুরেই কথা বললেন। তিনি দাবি জানান এই কার্যক্রম যেন বন্ধ না হয়। মাসে অন্তত দু’বার যাতে এই সুবিধা দেওয়া হয়।

রোববার (২০ মার্চ) সকাল ১০ টা থেকে নগরের ৪১ ওয়ার্ডের পূর্ব নির্ধারিত স্থানে শুরু হয় টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম। চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। প্রথম দফার পণ্য বিক্রি কার্যক্রম আগামী ১০ দিন পর্যন্ত চলবে।

আরও পড়ুন: ভোগ্যপণ্যে আগুনের আঁচ টিসিবিতেও—বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ডাল-তেল

টিসিবি জানায়, রমজানকে সামনে রেখে ফ্যামেলি কার্ডের মাধ্যমে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারকে নায্যমূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নেয় সরকার। চট্টগ্রাম জেলায় ৮৪ জন ডিলারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ড, ১৫ উপজেলার ১৯১টি ইউনিয়ন, ১৫ পৌরসভায় মোট ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮২ জনের কাছে টিসিবির পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হবে।

একজন ক্রেতা ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ দুই কেজি চিনি, ৬৫ টাকা কেজি দরে দুই কেজি মসুর ডাল, ১১০ টাকা দরে ২ লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারবেন। প্রথম দফায় যারা কার্ড দিয়ে মালামাল নিচ্ছেন একই ব্যক্তিকে দ্বিতীয় দফায় একই রকম মালামাল আরও কয়েকটি আইটেমসহ মোট ৫টি আইটেম এপ্রিলের ১৫ তারিখ থেকে দেওয়া হবে।

১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুজিত দে বলেন, দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়ানোর পর বাজারের চেয়ে কম দামে তেল-ডাল-চিনি কিনতে পেরেছি। বাজারে প্রতিকেজি চিনি ৮৫ টাকা, মসুর ডাল ১শ’ টাকা ও প্রতিলিটার বোতলজাত তেল ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু টিসিবির দেওয়া প্রতিকেজি চিনি ৫৫ টাকা, মসুর ডাল ৬৫ টাকা, পেঁয়াজ ৩০ টাকা ও সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ১১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এটাই চাইব। কারণ আমার মত অনেক নিম্ন ও মধ্যবিত্তের অনেক বেশি উপকার হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, টিসিবির ‘ফ্যামিলি কার্ড’ কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী এক কোটি পরিবারের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। করোনাকালে প্রধানমন্ত্রীর নগদ অর্থ সহায়তা বাবদ আড়াই হাজার টাকা করে পেয়েছেন দেশের মোট ৩৮ লাখ ৫০ হাজার সুবিধাভোগী পরিবার। এই সাড়ে ৩৮ লাখ পরিবারের সবাই পাচ্ছেন টিসিবির ‘ফ্যামিলি কার্ড’। এর সঙ্গে নতুন যুক্ত করা হয়েছে আরও ৬১ লাখ ৫০ হাজার পরিবার। এ কাজে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন যৌথভাবে কাজ করেছে।

আরও পড়ুন: টিসিবির পণ্য পেতে স্বল্প আয়ের মানুষের ভিড়, ১৭ জুনের পর কী হবে?

টিসিবি সূত্রে জানা যায়, ২০ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রথম পর্বে এক কোটি উপকারভোগী পরিবারের মাঝে ১১০ টাকা লিটার দরে দুই লিটার সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা কেজি দরে দুই কেজি চিনি, ৬৫ টাকা কেজি দরে দুই কেজি মসুর ডাল বিক্রি করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে ৩ এপ্রিল থেকে এসব পণ্যের সঙ্গে ৫০ টাকা কেজি দরে দুই কেজি ছোলা যুক্ত হবে।

একজন কার্ডধারী রোজার আগে এবং রোজার মধ্যে দুই দফায় এসব পণ্য পাবেন। প্রথম কিস্তির আজ রোববার দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির পণ্য দেওয়া হবে রোজার মাঝামাঝি সময়ে। এই কর্মসূচির জন্য দুই কোটি লিটার সয়াবিন তেল, ৪০ হাজার মেট্রিক টন চিনি, ৪০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল ও ৪০ হাজার মেট্রিক টন ছোলা এবং ২৫ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ প্রয়োজন হবে।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!