হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ। এর মাঝে এবার নিজেদের শক্তি প্রদর্শনে মাঠে নেমেছে হেফাজতে ইসলাম।
বেশ কয়েক বছর ‘নীরব’ থাকার পর বিজয়ের মাসে আবারও সরব হয়ে উঠছে সংগঠনটি। আগামী ১৭ ডিসেম্বর গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে ‘ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনের’ ডাক দিয়েছে সংগঠনটি।
এদিকে বিজয়ের মাসে সংগঠনটির শক্তি প্রদর্শনের পেছনে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর সরকার পতন আন্দোলনের যোগসাযোশ খোঁজার চেষ্টা করছেন অনেকে। তবে হেফাজত নেতারা বলছেন, কোনোরকম রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নয়, ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়ন ও সারাদেশে কর্মী-সমর্থকদের মনোবল চাঙা করতেই এই সমাবেশ।
দীর্ঘদিন ঝিমিয়ে থাকা সংগঠনটির হঠাৎ সমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের বিষয়টিকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নিজেদের দাম বাড়ানো অংশ হিসেবে দেখছেন অনেকে। এই কর্মসূচির মধ্যদিয়ে ২০১৩ সালের ঢাকায় শাপলা চত্বরের মতো নতুন কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচির জন্ম দেয় কি-না তা নিয়ে শঙ্কিত অনেকেই।
হেফাজতে ইসলামের নেতাদের দাবি, তাদের সংগঠন অরাজনৈতিক ও ধর্মভিত্তিক। প্রত্যেক মুসলিম মানে হেফাজতে ইসলামের কর্মী। আওয়ামী লীগ, বিএনপি কিংবা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই। প্রত্যেকে কোনো না কোনো দল সমর্থন করেন। এটি তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। সমাবেশের মাধ্যমে সংগঠনের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়ন এবং সংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে করা মামলা প্রত্যাহার দাবিতে এই সম্মেলন।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রয়াত মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ গঠিত হয়। ২০১৩ সালে ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে ১৩ দফা দাবি আদায়ে অবস্থানের মাধ্যমে সারাদেশে সংগঠনটি আলোচনায় আসে।
শাহ আহমদ শফীর মৃত্যু নিয়ে সংঘর্ষ ও সংগঠনের ভাঙন, পরবর্তীতে আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুর পর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও জেল নিয়ে সংগঠনটি অনেকটা ঝিমিয়ে পড়ে। একপর্যায়ে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মামলা ও জেল থেকে মুক্তির জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের কাছে দৌড়ঝাপ করে। তবে সম্প্রতি সংগঠনটি আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ডিসেম্বরে ঢাকায় বড় ধরনের শোডাউনের ঘোষণা দেয় সংগঠনটি।
রাজনৈতিক সচেতন মহলের মতে, হেফাজত যতই অরাজনৈতিক দাবু করুক না কেন, রাজনৈতিক ছায়া তাদের মধ্যে সবসময় থাকে। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসলে তাদের তৎপরতা বেড়ে যায়। তখন তারা নিজেদের সুবিধা আদায়ে শত্রুর সঙ্গে হাত মেলাতেও দ্বিধা করে না। সর্বশেষ তাদের সঙ্গে সরকারের ঘনিষ্ঠতাই এর প্রমাণ। এবারও নির্বাচনের আগের বছরে শক্তি প্রদর্শন করে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নিজেদের দাম বাড়াতে এই তৎপরতা।
যোগাযোগ করা হলে হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিছ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ঢাকায় সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। হল বুকিং দেওয়া হয়েছে। এখনো ঢাকা মেট্রাপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বাধা পাইনি। সমাবেশে হেফাজতের শীর্ষস্থানীয় নেতারা যোগ দেবেন। কোনো রাজনৈতিক লক্ষ্য নয়, সংগঠনের কারাবন্দী নেতাকর্মীদের মুক্তি, হেফাজতের নামে সব মামলা প্রত্যাহার ও সংগঠনের কার্যক্রমে গতি আনার লক্ষ্যে এই সমাবশের ডাক দিয়েছি। প্রত্যেক মুসলমান হেফাজতে ইসলামের কর্মী। এটি কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। আমরা কোনো রাজনিতক দলের হয়ে কাজ করি না। তবে প্রত্যেক মানুষ ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন দল সমর্থন করতে পারেন। সেটি তার ব্যক্তিগত বিষয়।
অপরদিকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব স উ ম আবদুস সামাদ বলেন, স্বাধীন দেশে যেকেউ সভা-সমাবেশ করতে পারে। তবে সংগঠনটি অতীতে শাপলা চত্বরে সহিংসতা করেছে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদেরও অভিযোগ রয়েছে। এখন কেউ যদি সমাবেশের নামে সহিংসতা করে তা সরকার ও প্রশাসন দেখবে। নামে অরাজনৈতিক হলেও নির্বাচনের আগে নিজেদের দাম বাড়ানোর জন্য এই সমাবেশ হেফাজতে ইসলামের।
এসআই/আলোকিত চট্টগ্রাম