স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক পিআরও শরীফের সম্পদের নেপথ্যে পুলিশের বদলি ও অস্ত্রের লাইসেন্স বাণিজ্য

পুলিশের এসপি, ওসি ও এসআই পদে বদলি বাণিজ্য এবং ব্যবসায়ীদের অস্ত্রের লাইসেন্স পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণের অভিযোগ ছিল বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রের উপআঞ্চলিক পরিচালক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) মো. শরীফ মাহমুদের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে অবৈধভাবে ৫৮ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ শেখ মুজিব সড়কের বাংলাদেশ বেতার ভবনের কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের একটি দল শরীফ মাহমুদকে অবরুদ্ধ করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর তাঁকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।

শরীফ মাহমুদ কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার পূর্ণমতি গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বাবা ইঞ্জিনিয়ার জয়নাল আবেদিন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বুড়িচং সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি শরীফ মাহমুদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। মামলায় বলা হয়, সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে অবৈধভাবে ৫৮ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন : অবসরের ৫ দিন আগে ধরা খেলেন সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা মনিরুজ্জামান

এদিকে দুদকের অনুসন্ধানে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের বিভিন্ন পদে বদলি ও অস্ত্রের লাইসেন্স পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনের সত্যতা পাওয়া যায়।

এছাড়া ব্যবসায়ীদের কাছে অস্ত্রের লাইসেন্স পাইয়ে দিতে দালালচক্র গড়ে তুলেন তিনি। একটি লাইসেন্সের জন্য ৫ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

দুদকের তদন্তে জানা যায়, শরীফ মাহমুদ সরকারি চাকরির বাইরে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। ঢাকার বসুন্ধরা, উত্তরা ও গুলশানে একাধিক দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে তাঁর। শুধু তাই নয়, তিনি ব্যাংককের পর্যটন এলাকা পাতায়ায় একটি রেস্টুরেন্ট কিনেছেন।

এছাড়া শরীফ মাহমুদ ও তাঁর স্ত্রীর নামে ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ অস্বাভাবিক লেনদেনেরও প্রমাণ মিলেছে।

অভিযোগ উঠেছে, বদলি বাণিজ্যে শরীফ মাহমুদের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতা ছিল। বিশেষ করে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের জন্য ১৫ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হতো । এসব লেনদেনের একটি বড় অংশ পৌঁছানো হতো মন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের কাছে।

অভিযোগে বিষয়ে শরীফ মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, আমি তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলাম না। আমি ছিলাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অনুযায়ী কাজ করেছি। যেই সেখানে থাকত, তাকেই এই দায়িত্ব পালন করতে হতো।

যোগাযোগ করা হলে ডবলমুরিং থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, শরীফ মাহমুদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে কিনা জানতে দুদকে যোগাযোগ করা হয়েছে। আপাতত তাঁকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জেজে/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm