স্বপ্নের শাহ আমানত সেতু এখন দুঃসহ ভোগান্তি

দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের স্বপ্নের শাহ আমানত সেতু এখন দুঃসহ ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে। সেতুর উত্তর পাড়ের গোলচত্বরে সকাল-বিকেল সবসময় থাকে দীর্ঘ যানজট। অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় হাজারো যাত্রীকে। অবৈধ পার্কিং ও সড়ক দখল করে দোকানপাট ও দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কারণেই পরিস্থিতি এমন হয়েছে।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন সকালে অফিসে যাওয়ার সময় এই গোলচত্বরে আটকে যাই। ঘণ্টা দেড়েক লেগে থাকে জট। সেই যানজট পৌঁছে যায় ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তের টোল প্লাজা পর্যন্ত। এতে আমার ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা কোনো চত্বর নয়, যেন নরকের দ্বার! অবৈধভাবে অটোরিকশা আর বাসগুলো সড়ক দখল করে রাখে, কেউ দেখার নেই।

সরকারি হাজী মুহম্মদ মুহসিন কলেজের শিক্ষার্থী ত্বাহা বলেন, বাসা থেকে বের হলেই মনের মধ্যে ভয় কাজ করে সময়মতো কলেজে পৌঁছাতে পারবো তো!

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে  চলাচলকারী হানিফ পরিবহনের বাস চালক অমল প্রামানিক বলেন, এ চত্বরের নরক যন্ত্রণা আমরা চালকরাই সবচেয়ে বেশি ভুগি। ইঞ্জিন চালু রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। তেল খরচ হয়, যাত্রীরা গালাগাল করে, আবার গাড়ির যন্ত্রাংশও নষ্ট হয়।

এ রুটের বাসের নারী যাত্রী ফরিদা খানম বলেন, যানজটে ধুলোবালি আর শব্দের কারণে শ্বাসকষ্ট হয়। এভাবে আটকে থাকা অসহ্য। যদি গোলচত্বরটি ভেঙে ছোট করে সরাসরি রাস্তা করা হয়, তাহলে সমস্যা অনেকটাই কমবে।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাত্রীদের মতে, সড়কের উভয় পাশে দোকানপাট এবং অবৈধ পার্কিং যানজটের প্রধান কারণ। যদি এগুলো সরিয়ে না নেওয়া হয় তাহল সমস্যার সমাধান হবে না।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা সকাল থেকে রাত অবধি চেষ্টা করি কিন্তু কর্মী সংখ্যা কম।সিন্ডিকেটের চাপে অবৈধ যানগুলো নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। গত সপ্তাহে একদিনে ৫০টিরও বেশি চালান কাটা হয়েছে, কিন্তু পরদিন আবার একই দশা।

ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট এনামুল হক বলেন, আমরা নিয়মিত যানবাহন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। কিন্তু রাস্তার সংকীর্ণতা, অব্যবস্থাপনা আর গাড়ির চাপ এতটাই বেশি যে স্বাভাবিক রাখাটা অনেক সময় সম্ভব হয় না। ট্রাফিক ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তি ও অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়া স্থায়ী সমাধান আসবে না।

এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের রোড অ্যান্ড বিল্ডিং বিভাগের পরিচালক এইচ এম আল আমিন বলেন, আমরা এই সমস্যা সম্পর্কে সচেতন। গোলচত্বরের চারপাশে অবৈধ দখলদারি অপসারণের জন্য অভিযান চালানো হয়েছে। তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য নতুন রাস্তার নকশা প্রস্তুত করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে গোলচত্বরের আকার কমিয়ে সরাসরি লিঙ্ক রোড তৈরি করা হবে।

অপরদিকে চট্টগ্রামের নগর পরিকল্পনাবিদ আশিক ইমরান বলেন, শাহ আমানত সেতুর উত্তর প্রান্তের গোলচত্বরের বর্তমান নকশা উপযুক্ত নয়। এটি ভেঙে ছোট করে সরাসরি রাস্তা তৈরি করলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এছাড়া স্মার্ট সিগন্যাল এবং পার্কিং জোন তৈরি দরকার। চট্টগ্রামের মতো ব্যস্ত শহরে এমন প্রাচীন নকশা আর চলে না।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm