সিএমপিতে ‘শূন্যের কোটায়’ যাচ্ছে চাটগাঁইয়ারা—আতঙ্ক ‘খেদাও’ মিশনের

সিএমপিতে (চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ) চট্টগ্রামের বাসিন্দা পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলি কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। এমন বদলিতে চাকরির ভয়ে কেউ মুখ না খুললেও চাপা ক্ষোভ—অসন্তোষ বাড়ছেই। নিয়মিত বদলি দেখিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তাদের সরিয়ে ‘চাটগাঁইয়া খেদাও’ মিশন বাস্তবায়ন হচ্ছে সিএমপিতে।

দেশের কোনো জেলা ও নগরে এ ধরনের মিশনের অস্তিত্ব না থাকলেও চট্টগ্রামে তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে মনে করেন বদলির বলিতে পড়া পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকেই। তবে ‘চাকরি বিধির’ কারণে আলোকিত চট্টগ্রামের কাছে কেউ মুখ খুলতে চাননি। যদিও সিএমপির দাবি, এ ধরনের কোনো মিশন নেই, যারা বদলি হয়েছেন সবাই নিয়মিত বদলিই।

সিএমপি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সিএমপির তৎকালীন উপকমিশনার (সদর) শ্যামল কুমার নাথ (বর্তমানে সিএমপি ট্রাফিক বিভাগে অতিরিক্ত কমিশনার) সদর দপ্তরের মৌখিক নির্দেশে নগর পুলিশে বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত ‘চাটগাঁইয়াদের’ একটি তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে তালিকা প্রস্তুত প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।

এরপর চলতি বছরের শুরুতে সিএমপির তৎকালীন অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মোস্তাক আহমেদ (বর্তমানে পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত) ফের ‘চাটগাঁইয়াদের’ তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন। এ কথা জানাজানি হলে অসন্তোষ শুরু হয় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের মধ্যে।

আরও পড়ুন: ‘বিয়ে—সন্তান’ সবই অস্বীকার পুলিশের এএসআই’র, নালিশ গেল পুলিশ দপ্তরে

সিএমপি থেকে ‘চাটগাঁইয়া খেদাও’ মিশনে ২০২০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সদর দপ্তরের আদেশে ৩৬ জন কনস্টেবলকে একদিনে বদলি করা হয়। বদলির আদেশ পাওয়া ৩৬ জনের মধ্যে ৩৫ জনের বাড়িই চট্টগ্রামে। তাদেরকে কক্সবাজার ও খাগড়াছড়ি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ইউনিটে বদলি করা হয়।

১০ অক্টোবর বিভিন্ন পদে কর্মরত সিএমপির ১৫ কর্মকর্তাকে একযোগে বদলি করা হয়। যাদের সবাই চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। এর মধ্যে বন্দর ও চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ৭ জন পুলিশ পরিদর্শক। বাকি ৬ জন বিভিন্ন থানায় কর্মরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) ও পেট্রোল ইন্সপেক্টর (পিআই) পদমর্যাদার কর্মকর্তা।

২০২১ সালের ২৭ মে একদিনে সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ১৩ জন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। এর মধ্যে ১০ জনের বাড়িই চট্টগ্রামে। বাকি ৩ জনের বাড়ি পার্বত্য চট্টগ্রামে। বদলি হওয়া এসব কর্মকর্তার প্রায় সবাই সৎ, মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত।

সিএমপি থেকে বদলি হওয়া অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার-এডিসি পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন— এডিসি (সদর) মইনুল ইসলাম, এডিসি নাদিরা নুর, এডিসি (বন্দর) অলোক বিশ্বাস, এডিসি (কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ) আসিফ মহিউদ্দীন, এডিসি (প্রসিকিউশন) মো. রেজাউল করিম, এডিসি উক্য সিং ও এডিসি নুতান চাকমা ও এসি পরিত্রাণ তালুকদার।

বদলি হওয়া সহকারী পুলিশ কমিশনার-এসি পদমর্যাদার মধ্যে রয়েছেন এসি (প্রসিকিউশন) কাজী শাহবুদ্দিন আহমেদ, এসি উত্তম কুমার চক্রবর্তী, এসি আবু জাফর, এসি (সিটি এসবি) আতিক আহমেদ চৌধুরী ও এসি (পাঁচলাইশ) দেবদূত ভট্টাচার্য। এদের মধ্যে পরিত্রাণ তালুকদার, উক্য সিং ও নুতান চাকমা ছাড়া বাকিদের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলায়।

এছাড়া পাচঁলাইশ থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া, খুলশী থানার ওসি প্রণব চৌধুরী, বন্দর থানার ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী, ডবলমুরিং থানার ওসি সুদীপ দাশকেও বদলি করা হয়। এদের মধ্যে আবুল কাশেম ভূঁইয়ার বাড়ি মানিকছড়ি হলেও অন্যদের বাড়ি চট্টগ্রামে।

৭ আগস্ট চকবাজার থানার ওসি মো. আলমগীর ও বাকলিয়া থানার ওসি রহুল আমীনকে চট্টগ্রাম ছাড়তে হয়। বাকলিয়া থানার ওসি রুহুল আমিনকে রংপুর রেঞ্জে এবং চকবাজার থানার ওসি মো. আলমগীরকে রাজশাহী রেঞ্জে বদলি করা হয়। তারা দুজনই চট্টগ্রাম ও রাঙামাটির বাসিন্দা।

আরও পড়ুন: দুই ওসি নতুন ঠিকানায়—চকবাজারের আলমগীর রংপুরে, বাকলিয়ার রুহুল রাজশাহীতে

এর পরদিন (৮ আগস্ট) চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি করা হয় হালিশহর থানার ওসি রফিকুল ইসলামকে। একইদিন বদলি করা হয় পতেঙ্গা থানার ওসি জোবায়েরকেও। জোবায়েরের বাড়ি চন্দনাইশে এবং রফিকের বাড়ি রাউজানে।

সিএমপি থেকে ‘চাটগাঁইয়া খেদাও’ মিশনের ধারাবাহিকতায় ১৯ আগস্ট ইপিজেড থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া এবং পাহাড়তলী থানার ওসি হাসান ইমামকে বদলি করা হয়।

আদেশ অনুযায়ী উৎপল বড়ুয়াকে ডিএমপিতে এবং হাসান ইমামকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি করা হয়। এদের মধ্যে উৎপলের বাড়ি সাতকানিয়ায় এবং হাসানের বাড়ি রাঙ্গুনিয়ায়।

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সালেহ মো. তানভীরকে একাধিক ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়া ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!