‘সংকটে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ’ চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর

সংকট মোকাবেলায় সিটি করপোরেশন দিনরাত সেবা দিতে প্রস্তুত আছে মন্তব্য করে নগরবাসীকে শঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মেয়র বলেন, আমরা এখন নানামুখী সংকট ও দুর্যোগপূর্ণ সময় পার করছি। একদিকে ক্রমাগত কোভিড-১৯’র সংক্রমণের হার বৃদ্ধি, অন্যদিকে নিম্নচাপ ও মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। ফলে আমাদের করোনার সঙ্গে অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়া নিম্নাঞ্চল, পাহাড়ধসের মত দুর্যোগ মোকাবেলায়ও কাজ করতে হচ্ছে। তাছাড়া গত একযুগ ধরে বর্ষা মৌসুম এলে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার মত মারাত্মক ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। এ ব্যাপারে চসিক সকল প্রকার সতর্কতা অবলম্বন করে বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।

আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, চট্টগ্রামে এখনো পর্যন্ত ডেঙ্গুর ওরকম প্রকোপ হয়নি। তবুও সিটি করপোরেশন প্রতিটি ওয়ার্ডে ওষুধ ছিটানোসহ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পরিচালনা করছে। নগরবাসীর কাছে আমাদের অনুরোধ, নিজেদের বাসা-বাড়ির ছাদ, ব্যালকনি, আঙিনা ও আশপাশ নিজেরাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন এবং প্রয়োজনে সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড অফিসে যোগাযোগ করে এ ব্যাপারে সহযোগিতা নিন।

অতিবর্ষণের ফলে ইতিমধ্যে নগরে পাহাড়ধসের মত কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। আল্লাহর রহমতে এসব ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন পাহাড় থেকে ৫০০ মানুষকে সরিয়ে নেওয়ায় প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। এজন্য জেলা প্রশাসনকে আন্তরিকতা ধন্যবাদ। এখনো যারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ের চূড়ায় কিংবা পাদদেশে রয়ে গেছেন, অচিরেই তাদেরকে সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নিতে বলেছি। টানা চার-পাঁচদিনের বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক এলাকা থেকে এখনো পানি সরেনি।

জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগাপ্রকল্পের কাজের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) যে বাঁধগুলো দিয়েছে সেগুলো খুব খারাপ অবস্থায় আছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ’র মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে খালের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চসিককে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। তবুও থেমে নেই আমাদের কাজ। চাক্তাই খালসহ নগরীর খালগুলোতে দেয়া বাঁধের সঙ্গে খুব সরু একটা জায়গা রাখা হয়েছে পানি চলাচলের জন্য। এপথে পানি নামছে খুব ধীরে, তাই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জলাবদ্ধতা হচ্ছে এবার। খাল ও নালার ব্রিজ, কালভার্ট, গ্যাস ও ওয়াসার পাইপের সাথে লেগে এবং বিভিন্ন বাঁকে জমে যাওয়া পলিথিন ও আবর্জনা সরাতে প্রকল্প বাস্তবায়নকারীদের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ। এছাড়া ছোট বড় সকল নালা, নর্দমায় যেখানেই পানির গতি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে সেখানে দ্রুত বাধা অপসারণে সার্বক্ষণিক কাজ করছে করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। যেহেতু মেগা প্রকল্প চলছে তাই আমরা চাইলেও সব খালে কাজ করতে পারছি না।

তাই স্বাভাবিকের চেয়ে দুর্ভোগটা কিছু বেশিই হচ্ছে এবার। আমরা নাগরিক সমাজ যদি সচেতন হই, তবে খাল-নালায় পলিথিন ও বর্জ্যের উপস্থিতি অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারি। এতে আমরা নাগরিকরাই এর সুফল পেতে পারি।

কোভিড মোকাবেলায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রথম থেকেই প্রস্তুত ছিল। দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের শুরুতেই করপোরেশন লালদীঘির পাড়ে আইসোলেশন সেন্টার চালু করেছে। সেখানে প্রাথমিক উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীরা বিনামূল্যে নিয়মিত চিকিৎসা পাচ্ছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সুরক্ষা বুথ খোলা হয়েছে। সেসব বুথ থেকে চাইলেই সকলে বিনামূল্যে মাস্ক, স্যানিটাইজারসহ সুরক্ষাসামগ্রী সংগ্রহ করতে পারছে। এছাড়া বিভিন্ন পয়েন্টে বুথ স্থাপন করে করোনা পরীক্ষার জন্য বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করেছে করপোরেশন। দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক ও জনগণ যাতে সুরক্ষা পায়, প্রতিষেধক টিকা পায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে তা অনেকটাই নিশ্চিত করেছেন। আগামী মাসের ৭ তারিখ থেকে প্রতিটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে আঠারো বছর এবং তদূর্ধ্ব বয়সের সকলকে টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

সংকট মোচনে নাগরিকদের একটি সচেতন অংশের অংশগ্রহণ আমাদেরকে আশান্বিত করেছে, অনুপ্রাণিত করেছে। কোভিড-১৯ ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বেচ্ছাসেবক হতে এসেছেন অনেকেই। তারা করপোরেশনের সঙ্গে এ ধরনের মহৎ কাজে শামিল হয়েছেন এবং যে কোনো দুর্যোগে স্বেচ্ছাসেবক ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে আরবান কমিউনিটি ভোলান্টিয়ার দল গঠিত হয়েছে। এ উদ্যোগ মানবিকতা ও সচেতনতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এছাড়াও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীই ব্যক্তিগত ও দলগত উদ্যোগে রোগীসেবা এবং খাদ্য সহায়তায় পূর্ণ উদ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের সকলকে করপোরেশনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই।

জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালার আলোকে করপোরেশনের গঠিত ৬ সদস্যের কমিটি এই ভোলান্টিয়ারদের কার্যক্রম তদারকি করছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ২ জন করে প্রশিক্ষিত ভোলান্টিয়ারের নেতৃত্বে ২৫জন করে স্বেচ্ছাসেবী সদস্য সংযুক্ত করা হয়েছে। তারা জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় দেশের যে কোনো প্রান্তে কাজ করতে সক্ষম।

এবার কোরবানির ঈদে যেমন বর্জ্য পরিষ্কারে চসিক সাফল্য দেখিয়েছে, তেমনি করোনা ও ডেঙ্গুর মতো দুর্যোগে চসিক গঠিত স্বেচ্ছাসেবক দলও সফলতা দেখাতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। আমরা প্রমাণ করতে চাই, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলাসহ জাতীয় যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে চট্টগ্রাম সবসময় অগ্রগামী ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

আপনারা সকলে সচেতন হোন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, সুস্থ থাকুন।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!