মেহেদির রঙ না শুকাতেই ‘লাশ’ তরুণী—ভাই বলছেন ‘খুন’

বিয়ের ১৮ দিনের মাথায় রাউজানে জাহেদা আফরিন নামের এক নববধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় স্বামীসহ তিনজনকে আসামি করে আদালতে মামলার আবেদন করেছেন নিহতের ভাই ইব্রাহীম খলিল। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে রাউজান থানার ওসিকে তিনদিনের মধ্যে মামলা করে জানানোর আদেশ দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম কামরুন নাহার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) নোয়াপাড়া গুজরা মাদারপাড়া গনি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন: রাউজানে বৌদ্ধ অনাথালয়ে ঝুলছিল মারমা ছাত্রীর লাশ, নাকে রক্ত

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- রাউজান নোয়াপাড়া গুজরা মাদারপাড়া গনি বাড়ির মো. ইসমাইল (৪০) তাঁর বোন জেসমিন আকতার (৪৪) ও ভাগ্নি জিসান (২৬)।

Yakub Group

এ বিষয়ে জেলা পিপি ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আবেদনের ভিত্তেতে তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করে রাউজান থানার ওসিকে তিনদিনের মধ্যে আদালতে জানানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে। মামলা পরিচালনায় আরও ছিলেন আইনজীবী আজমুল হুদা ও শেখ সরফুদ্দীন সৌরভ।

মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ আগস্ট ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক মো. ইসমাইলের সঙ্গে জাহেদা আফরিনের ১২ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয়। বিয়ের পরদিন নববধূর পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে দেখতে যেতে চাইলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানান তার শ্বশুর হাসপাতালে ভর্তি আছেন। পরে জাহেদার সঙ্গে তাদের পরিবার একাধিকবার দেখা করতে চাইলে বিভিন্ন অজুহাতে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। এরপর বোন জাহেদাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানতে পারেন মামলার বাদী ইব্রাহিম।

বিয়ের চারদিন পর জাহেদার বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়িতে বিভিন্ন উপহার নিয়ে ১০ থেকে ১২ জন গেলে সেদিনও ইব্রাহীম দেখেন তার বোন দুর্বল ও ভীত। কী হয়েছে জানতে চাইলে কিছু বলতে পারেনি। তাছাড়া সেদিন জাহেদাকে তার বাবার বাড়িতে নিয়ে আসতে চাইলে বাধা দেয় শ্বশুরবাড়ির লোকজন। জাহেদার স্বামীকে ইব্রাহীমদের বাড়িতে বেড়াতে আসতে বললেও তিনি এড়িয়ে চলতেন।

জাহেদার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সে খুব ভীত কণ্ঠে কথা বলত। একদিন জাহেদা বড় বোনকে বলে, কেউ যেন তার শ্বশুরবাড়িতে না যায়। ইব্রাহীমকেও যেন না পাঠায়। কারণ তারা তাকে মেরে ফেলবে। এসব বিষয়ে জাহেদার ননদ জেসমিন আকতারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলতেন, নতুন জায়গায় এসেছে তাই হয়ত ভয় পাচ্ছে।

আরও পড়ুন: গোয়াল ঘরে গৃহবধূর ওড়না পেঁচানো লাশ, ভাই বললেন ‘খুন’

নিহতের ভাই ইব্রাহীম খলিল আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, গত ২ সেপ্টেম্বর জাহেদাকে আমাদের বাসায় আনার কথা ছিল। সকালে তাকে আনতে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে ননদ জেসমিন ফোন করে বলেন, দ্রুত আমাদের বাড়িতে আসেন। কিন্তু কী ঘটেছে কিছুই বলেনি। আমি, বড় বোন, চাচাসহ দ্রুত জাহেদার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখি জাহেদাকে বিছানায় শুইয়ে রাখা হয়েছে। স্বামী ইসমাইল, ননদ জেসমিন ও ননদের মেয়ে জিসানের কাছে কী হয়েছে জানতে চাইলে তারা বলেন, জাহেদা আত্মহত্যা করেছে।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার এক ঘণ্টা পর পুলিশকে ফোন করা হলে তারা এসে মরদেহ নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। এসময় তার শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। আমরা বুঝতে পারি জাহেদা আত্মহত্যা করেনি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের সময় শ্বশুরবাড়ির ১০ থেকে ১২ জন লোক এসে বোনোর লাশ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এরপর তারা একবারের জন্য খোঁজ-খবর রাখেনি।

আরএস/আরবি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

মন্তব্য নেওয়া বন্ধ।