ঢাকা-চট্টগ্রাম ও লাকসাম-আখাউড়া রেলপথে যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের এক নাম আমিনুল। লাকসামে আন্ত:নগর ট্রেন থামানো, যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা আদায়-মারধরসহ অজস্র অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি চাঁদা না পেয়ে মারধরের পর লাকসামে আন্ত:নগর ট্রেন থামিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ভর্তিচ্ছুকে রেলওয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনায় তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ঘটনার পর ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তার প্রশ্রয়ে আমিনুল বেপরোয়া হয়ে উঠলেও তাঁর বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, আমিনুল ইসলাম লাকসাম রেলওয়ে জংশনে ভারপ্রাপ্ত জুনিয়র রেলওয়ে পরিদর্শক (জেআরআই) ও ভ্রাম্যমাণ টিটিই (ট্রেন টিকিট এক্সামিনার) হিসেবে কর্মরত। লাকসাম স্টেশন থেকে আখাউড়া পর্যন্ত তার ডিউটি। কিন্তু তিনি সেখানে ডিউটির অধিকাংশ সময় কম্বল মুড়িয়ে সময় পার করেন। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম আন্ত:নগর ট্রেনে সোনার বাংলা ও সুবর্ণ এক্সপ্রেসের যাত্রীদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে চাঁদাবাজিসহ নানা হয়রানি করে আসছেন। যাত্রীরা টাকা দিতে না চাইলে গালিগালাজ-মারধরসহ বিভিন্ন হয়রানি করেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হলে যাত্রীদের রেলওয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ফলে যাত্রীরা সম্মান রক্ষা ও হয়রানি থেকে বাঁচতে টাকা দিতে বাধ্য হন। চাঁদাবাজির পর লাকসাম রেলওয়ে স্টেশনে আন্ত:নগর ট্রেন থামিয়ে নেমে যান। এছাড়া ব্যক্তিগত প্রয়োজনেও আন্ত:নগর ট্রেন দুটি লাকসামে থামিয়ে চট্টগ্রাম-ঢাকা যাতায়াত করেন।
সংশ্লিটরা বলছেন, আমিনুল লাকসাম -আখাউড়া লোকাল মেইল এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠতে পারবে। এখানেই তাঁর ডিউটি। তবে চট্টগ্রাম-ঢাকা কোনো আন্ত:নগর ট্রেনে উঠতে পারবেন না।উঠতে হলে ডিসিও’র (বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা) অনুমতি লাগবে। কিন্তু আমিনুল প্রায়সময় আন্ত:নগর ট্রেন লাকসামে থামিয়ে যাতায়ত ও চাঁদাবাজি করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আখাউড়া রেলস্টেশনে যাত্রীদের কাছ থেকে জোর করে চাঁদা আদায়ের সময় গণধোলাইয়ের শিকার হন আমিনুল ইসলাম। পরে বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা তাকে আটকে রাখেন। এসময় রেলওয়ে কর্মকর্তারা এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। আমিনুল ইসলামের এসব অনিয়মের খবর চট্টগ্রাম রেল স্টেশন মাস্টার, রেলওয়ে পুলিশ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, ট্রেনের গার্ড, টিটিই ও লাকসাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. শাহাবুদ্দিন জানলেও কখনো কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেননি। আবার অনেকে আমিনুল ইসলামের হয়রানির ভয়ে মুখ খুলেননি। এছাড়া বিভিন্ন সময় তাঁর বিরুদ্ধে যাত্রীরা হয়রানির অভিযোগ দিলেও নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ।
সর্বশেষ গত ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়ের ভর্তিচ্ছু দুই শিক্ষার্থীর কাছে চাঁদা না পেয়ে তাঁদের মারধর করেন। এরপর বিনা টিকিটে ভ্রমণের অভিযোগ এনে ঢাকাগামী আন্ত:নগর ট্রেন সোনার বাংলা লাকসামে থামিয়ে তাঁদের রেলওয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পরে শিক্ষার্থীরা ট্রেন থামিয়ে বিক্ষোভ করলে তিনি মাফ চান। এ ঘটনায় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, আমিনুল ইসলাম লাকসামের ভারপ্রাপ্ত জুনিয়র রেলওয়ে পরিদর্শক হয়েও চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে আন্ত:নগর ট্রেন সোনার বাংলা ট্রেনে উঠে শিক্ষার্থীদের কাছে চাঁদা না পেয়ে মারধর করেন। পরে তাঁদের লাকসাম রেলওয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। যদিও সোনার বাংলা ট্রেনটি ঢাকা বিমানবন্দর রেলস্টেশন ছাড়া কোথাও থামার নিয়ম নেই। এছাড়া তিনি সোনার বাংলা ট্রেনের যাত্রীদের কাছে কোনো ধরণের কৈফিয়ত চাইতে পারেন না। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আন্ত:নগর ট্রেনে উঠে যাত্রীদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় ও হয়রানি করে আসলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনায় ফেঁসে যান।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম রেলস্টেশন ধরা পড়ল মোবাইল আইএমইআই বদলের ‘বড় চক্র’
অভিযোগ রয়েছে, রেলওয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তার প্রশ্রয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে এসব অনয়িম করে আসলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এবারও পার পেতে তিনি নানা ধরণের তদবির করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে তদন্ত কমিটির সদস্য রেলওয়ে পুর্বাঞ্চলের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, তদন্তের কাজ চলছে। কাজের অগ্রগতিও আছে। শিগগির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে আমিনুল ইসলাম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুদের সাথে ঝামেলার দিন ডিসিও স্যারের অনুমোদন নিয়ে ট্রেনে উঠেছিলাম। আমি কখনো লাকসামে ট্রেন থামাইনি। সে ক্ষমতা আমার নেই। আমি যাত্রীদের কাছ থেকে কখনো কোনো টাকা আদায় করিনি। এসব অভিযোগ মিথ্যা।