চট্টগ্রামে ছাত্রের রক্ত ঝরাচ্ছে ছাত্র। নগরজুড়ে রক্তের হোলি খেলা। ভয়ঙ্কর এ পরিস্থিতির মধ্যেই দেখা গেল মানবতার এক অনন্য দৃশ্য।
বিকেল সাড়ে ৫টা, রিকশা নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এলেন এক যুবক। সেই যুবকের রিকশায় ছিলেন রক্তাক্ত ৩ ছাত্র। তাদের হাসপাতালে দিয়েই তিনি ছুটে গেলেন মুরাদপুরে। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি ফের এলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। না, এবার রিকশা নয়; এবার সেই যুবক নিয়ে এলেন ভ্যানগাড়ি নিয়ে। যেখানে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন আহত ৩ ছাত্র।
এখানেই শেষ নয়। ওই যুবক আবারও ভ্যানগাড়ি নিয়ে এসেছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে। সেবার তাঁর ভ্যানগাড়িতে ছিলেন সংঘর্ষে রক্তাক্ত ৬ ছাত্র।
রক্তাক্ত রাজপথে যন্ত্রণায় কাতরানো ছাত্রদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসা যুবকের নাম নারায়ণ দে। তিনি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই ডিপার্টমেন্টের ছাত্র।
মঙ্গলবার বিকেল থেকে নগরের মুরাদপুর ও দুনম্বর গেইট এলাকায় কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষে নিহত হন ৩ জন। আহত হন শতাধিক। সেই আহতদের মধ্যে রাস্তায় পড়ে থাকা ১২ জনকে উদ্ধার করে রিকশায় ও ভ্যানগাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন নারায়ণ।
বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সরেজমিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগে দেখা গেছে রিকশা করে আহত তিন ছাত্রকে নিয়ে আসার চিত্র। এসময় যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন আহতরা। এদের কাউকে স্ট্রেচারে, আবার কাউকে কোলে করে নিয়ে যাওয়া হয় ২ নম্বর ক্যাজুয়াল্টি ওয়ার্ডে। এরপর রিকশা ঘুরিয়ে চলে যান নারায়ণ।
ফের চট্টগ্রাম মেডিকেলে আসেন নারায়ণ। তবে এবার আর রিকশা নয়, এলেন ভ্যানগাড়ি নিয়ে। আহত তিন ছাত্রকে মেডিকেলে দিয়েই ছুটে গেলেন নারায়ণ।
সন্ধ্যা ৬টা। আবারও ভ্যানগাড়ি নিয়ে হাসপাতালে নারায়ণ। এবার আর তিনজন নয়, ভ্যানগাড়িতে দেখা গেল রক্তাক্ত ৬ ছাত্রকে। দ্রুত তাদের নিয়ে যাওয়া হলো জরুরি চিকিৎসা দিতে।
ঠিক সেই মুহূর্তে আলোকিত প্রতিবেদক কথা বলে রক্তাক্ত রাজপথে মানবতার দূত হয়ে আসা যুবকের সঙ্গে। তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে জানান, তাঁর নাম নারায়ণ দে। তিনি নগরের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যায়ের সিএসই ডিপার্টমেন্টের ছাত্র।
নারায়ণ বলেন, সংঘর্ষের সময় কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছিল না। সড়কজুড়ে আহতরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে ছিল। এসময় তাদের উদ্ধার করতে কেউ এগিয়ে আসেনি। প্রথমে তিন আহতকে একটি রিকশায় করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে আসি। এরপর আবারও ছুটে যায় মুরাদপুরে। সেখানে একটি ভ্যান গাড়ি নিয়ে আবারও তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। পরে আবার ফিরে গিয়ে ছয়জনকে ভ্যান করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এভাবে মোট ১২ জনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আনি। যাদের মধ্যে কেউ ছিলেন ছাত্রলীগ কর্মী, আবার কেউ ছিলেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী।
আলোকিত চট্টগ্রাম