‘যৌতুকের বলি’—রান্না মাংস স্বাদ না হওয়ার অজুহাত, বধূকে পিটিয়ে হত্যা

রান্না করা মাংস স্বাদ না হওয়ায় আইরিন আক্তার (২১) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামে ঘটেছে এ ঘটনা।

বাঁশখালী থানা পুলিশ শনিবার (২৪ জুলাই) রাতে আনোয়ারা উপজেলা হাসপাতালে স্বামীর ফেলে যাওয়া গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছেন।

সরেজমিন গিয়ে, পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের মৃত আহমদ হোসেনের ছেলে অটোরিকশা চালক হারুনুর রশিদের সঙ্গে সাধনপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সাধনপুর গ্রামের আবু ছালেকের মেয়ে (ওইসময় সপ্তম শ্রেণিতে পড়তেন) আইরিন আক্তারের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ৩ বছর ও ৫ মাস বয়সের দুই ছেলে রয়েছে।

বিয়ের পর অটোরিকশা কেনার কথা বলে আইরিনের বাবার কাছ থেকে এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে আইনের শ্বশুরপক্ষ। টাকা না পেয়ে হারুনুর রশিদ প্রায়সময় আইরিনকে মারধর করতেন। একাধিকবার মারধর করে আইরনিকে বাপের বাড়িও পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানা পুলিশ ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে কয়েকদফা সালিশী বৈঠকও হয়। বৈঠকের পর স্বামীর ঘরে ফিরতেন আইরিন।

গত ২১ জুলাই হারুনুর রশিদ স্থানীয় এক প্রতিবেশীর দেওয়া কোরবানির গরুর মাংস এনে আইরিনকে রান্না করতে দেন। রান্না করা ওই মাংস খাওয়ার পর এর স্বাদ ভালো হয়নি বলে আইরিনের প্রতি অভিযোগ আনা হয়। মাংসের স্বাদ তেতো হওয়ার ঘটনা প্রতিবেশীদেরও ডেকে দেখানো হয়।

রান্না করা মাংস স্বাদ না হওয়ার অভিযোগে আইরিনকে কয়েকদফা পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করেন হারুনুর। এরপর থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত আইরিন ঘরের কাজকর্ম করলেও ভাত খাওয়া বন্ধ করে দেন। ২৪ জুলাই সকাল ৯টায় আইরিনকে আবারো পিটালে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পরিবারের লোকজন গোপনে আইরিনকে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা দেন। এরপর হাসপাতালে লাশ ফেলে সবাই সটকে পড়ে।

আনোয়ারা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু মো. সাইফুদ্দিন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, গৃহবধূ আইরিনকে তার স্বজনরা মৃত অবস্থায় হাসপাতালে এনেছিল।

হারুনুর রশিদের মা এবং আইরিনের শ্বাশুড়ী নুর বানু বলেন, মাংসের রান্না স্বাদ না হওয়ায় আইরিনকে আমার ছেলে পিটিয়েছে ঠিক, কিন্তু হত্যা করেনি। আমার ছেলে বলেছে ওড়না পেঁচিয়ে সে আত্মহত্যা করেছে। তবে কীভাবে আইরিন মারা গেছে, কোথায় ওড়না পেঁচানো হয়েছে আমি দেখিনি। কারণ ওইসময় আমি ঘরে ছিলাম না।

যোগাযোগ করা হলে সাধনপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সাধনপুর গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আইরিনের যৌতুকলোভী স্বামী হারুনুর রশিদের অত্যাচারে দফায় দফায় সালিশী বৈঠক হয়। বৈঠকে হারুনুর রশিদের দোষ প্রমাণ হতো। মূলত যৌতুক না পেয়েই মাংস রান্নার অজুহাতে আইরিনকে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে আইরিনের বাবা আবু ছালেহ এবং মা শামশুন্নাহার বলেন, আমার মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করেছে হারুনুর রশিদ। হত্যার পর তারা আমার মেয়ের লাশ গায়েব করার চেষ্টা করেছিল। তাই বাঁশখালী থেকে আমার মেয়ের লাশ আনোয়ারা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। আমার মেয়ের হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাঁশখালীর রামদাশ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক মিনহাজ মাহমুদ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আইরিনের মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ আইরিনের বাপের বাড়িতে দাফনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইরিনের বাবা-মা। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উজ্জ্বল বিশ্বাস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!