পাওয়ার ট্রান্সফরমার হঠাৎ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় টানা সাত ঘণ্টা ধরে নগরের চকবাজার ও বাকলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। এতে ভোগান্তিতে দিন পার করেছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। এদের মধ্যে শিশুদের অবস্থা ছিল কাহিল। এছাড়া দীর্ঘক্ষণ ধরে বিদ্যু না থাকায় অনেকের চার্জ ফ্যান, লাইট, মোবাইলে চার্জ শেষ হয়ে যায়। বাসা-বাড়ির ও দোকানের ফ্রিজে থাকা খাদ্যসামগ্রীও নষ্ট হয়ে যায়। এ নিয়ে অনেকেই জানিয়েছেন ক্ষোভ।
শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আসে। ৫ মিনিট পর আবার চলে যায়। আবার আসে ৭টার দিকে। এরপর থেকে এভাবে আসা-যাওয়া করতে থাকে।
এদিকে বাকলিয়া বিদ্যুৎ অফিস কর্তৃপক্ষ বলছে, ভোগান্তি সহসা কাটবে না। আরও ২-৩ দিন বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যেই থাকবে। কারণ নষ্ট হয়ে গেছে পাওয়ার সাপ্লাই। মেরামতের কাজ চলছে। নতুন আরেকটি ট্রান্সফরমার না আসা পর্যন্ত এরকম সমস্যা থাকবে। যদিও আগের মতো দীর্ঘক্ষণ হবে না।
পূর্ব ষোলশহর ওমর আলী মাতব্বর লেইনের বাসিন্দা মো. মোবিন বলেন, সাড়ে সাত ঘণ্টা ধরো বিদ্যুৎ নেই। গরমে বাচ্চারা অস্থির হয়ে উঠেছে। দুপুরেও একেবারে ঘুমাতে পারেনি।
এদিকে দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় ভোগান্তির পাশাপাশি অনেক দোকানি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
কেবি আমান আলী রোডের দিদার স্টোরের স্বত্বাধিকারী মু. মোরশেদুল আলম বলেন, আজ সকাল থেকে দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকায় ঠাণ্ডাজাতীয় কোনো পণ্যই বিক্রি করতে পারিনি। এছাড়া ফ্রিজ বন্ধ থাকায় অনেক আইসক্রিম একেবারে গলে গেছে।
আরও পড়ুন : বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার রিচার্জে হঠাৎ ২২০ ডিজিট কেন?
অন্যদিকে টানা বিদ্যুৎ না থাকায় অনেকের বাসা-বাড়ির চার্জার ফ্যান, চার্জার লাইট ও মোবাইলের চার্জ ফুরিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আবার ফ্ল্যাট-বাড়ির জেনারেটর দীর্ঘক্ষণ চলার পর বন্ধ রাখতে হয়।
ওমর আলী মাতব্বর লেইনের গৃহিনী রিয়া দাশ বলেন, সকাল থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় টানা দুঘণ্টা চলার পর চার্জার ফ্যান ও লাইন বন্ধ হয়ে যায়। ঘর হয়ে পড়ে অন্ধকার। এরপর বিকেলে চলে যায় মোবাইলের চার্জ। ফ্রিজে রাখা কিছু খাবার নষ্ট হয়ে গেছে।
কেবি আমানী আলী রোড আনছুর আলী বাইলেনের বাসিন্দা ইব্রাহিম মো. সোহেল বলেন, লোডশেডিং মাঝেমধ্যে হচ্ছে। তবে আজ সবচেয়ে বেশি সময় ধরে লোডশেডিং হয়েছে। কিন্তু কী কারণে হয়েছে জানি না। এলাকায় কোনো মাইকিং কিংবা সংবাদপত্রে বিদ্যুৎ বন্ধের কোনো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি।
চকবাজার এলাকার দোকানদার দীপক দত্ত বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় দোকান ছিল পুরোটাই অন্ধকার। গরমের কারণে দোকানে বসতে পারিনি। অন্ধকারের কারণে কোনো ক্রেতাই দোকানের ভেতর ঢুকেনি। ফলে বেচাবিক্রির খুবই খারাপ অবস্থা।
দীপক দত্তের সুরে কথা বলেন পাশের আরেক দোকানি মো. ইয়াসিনও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেল চট্টমেট্রো (পূর্ব) শহীদুল ইসলাম মৃধা আলোকিত চট্টগ্রাম বলেন, বাকলিয়া বিদ্যু অফিসে একটি পাওয়ার ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে। ওই ট্রান্সফরমারে ৫টি ফিডার ছিল। বর্তমানে সেটি মেরামতের কাজ চলছে।
যোগাযোগ করা হলে বিদ্যুৎ ও বিতরণ বিভাগ বাকলিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রিয়াজুল হক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমাদের একটি পাওয়ার সাপ্লাই নষ্ট হয়ে গেছে। ওই ট্রান্সফরমারকে রেখে বাকিগুলো থেকে ম্যানেজ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে। নতুন আরেকটি ট্রান্সফরমার না আসা পর্যন্ত আপাতত এই সমস্যা থাকবে। তবে আজকের মতো হয়ত এত লম্বা সময় ধরে থাকবে না। কিছুক্ষণ থাকবে, কিছুক্ষণ থাকবে নাে এভাবে চালাব।
তিনি বলেন, আমরা আরেকটি ট্রান্সফরমার চালুর চেষ্টা করছি। এটা যদি চালু হয় তাহলে আমাদের সমস্যার সমাধান হবে। সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যুৎ আসবে, যাবে। এই সমস্যা হয়ত আরও ২-৩ দিন থাকতে পারে। এ পর্যন্ত গ্রাহকদের মানিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
আলোকিত চট্টগ্রাম