নগরের আকবরশাহ থানাধীন নিউ শহীদ লেইন বস্তি ও সংলগ্ন রেললাইন ঘিরে গড়ে উঠেছে মাদকের আখড়া। মদ, গাঁজা, ইয়াবা থেকে শুরু করে এমন কোনো মাদক নেই যা এখানে পাওয়া যায় না। দিনদুপুরে মাদকের রমরমা বাণিজ্য চললেও প্রশাসন চুপ।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, মাদক বাণিজ্যে জড়িতরা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আবার এই মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মাসোহারা পায় পুলিশ। তাই তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান চালানো হয় না।
এলাকাবাসী জানায়, শহীদ লেইন বস্তিতে তিনটির বেশি মাদকের স্পট রয়েছে। আকবরশাহ পাহাড়তলী সীমানা রেলবিট পুরোটাই মাদক বিকিকিনির প্রধান স্পট। এছাড়া বস্তির ভেতর আছে আরও অন্তত দুটি স্পট। এসব স্পটে ওপেন গাঁজা ও ইয়াবা বিক্রি করেন খুচরা বিক্রেতারা। স্পটে বসেই তা সেবন করে অনেক মাদকাসক্ত। এসব স্পটে মাদক সাপ্লাই দেন হানিফ সুমন প্রকাশ লম্বা সুমন। তিনি ওই এলাকার ইয়াবা ও গাঁজার পাইকারি ডিলার।
এছাড়া মাদক সরবরাহ ও বিকিকিনিতে লম্বা সুমনকে সঙ্গ দেন মমতাজ আলী প্রকাশ ড্রাইভার মমতাজ। শহীদ লেইন এলাকায় তিনি এসি মহিউদ্দিন সেলিমের ড্রাইভার হিসেবে পরিচিত। এ পরিচয় মমতাজ আলী নিজেই প্রচার করে বেড়ান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, হানিফ সুমন প্রকাশ লম্বা সুমন মাদকের গডফাদার। তিনি শহীদ লেইন এলাকায় মাদকের একমাত্র যোগানদাতা। তিনি ৯নং ওয়ার্ড যুবলীগের সহসভাপতি। তার পুরো পরিবার মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। হানিফ সুমনের ভাই রাজন প্রকাশ ইয়াবা রাজন এবং হাবিবের বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক মাদক ও ছিনতাই মামলা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহীদ লেইন এলাকার মাদক ব্যবসায় জড়িতদের বেশিরভাগই হানিফ সুমন প্রকাশ লম্বা সুমনের আত্মীয়-স্বজন। তার ভাই রাজন প্রকাশ ইয়াবা রাজন ও হাবিব শহীদ লেইন এলাকা অন্যতম মাদক ব্যবসায়ী। তাদের বিরুদ্ধে মাদক ও ছিনতাইয়ের একাধিক মামলা রয়েছে। সুমনের বউয়ের বড় বোন রিনা ও শিরিন ডজনখানেক মাদক মামলার আসামি।
এছাড়া শিরিনের স্বামী আব্দুল ওয়াদুুদ আকাশের বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক মাদক মামলা। তবে হানিফ সুমন প্রকাশ লম্বা সুমনে বিরুদ্ধে মাদকের কোনো মামলা না থাকলেও রয়েছে ডাকাতি, হত্যা ও অস্ত্র মামলা। হানিফ সুমন ও তার সহযোগী মমতাজ আলী মাদকের হোল্ড সেলার হলেও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকায় বারবারই তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান। তিনটি মাদকের স্পটের বাইরে রেললাইনে সুমন ও মমতাজের হয়ে মাদক বিক্রি করেন সুন্দরী নামে দুই নারী।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হানিফ সুমন। তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমি ও আমার ভাইদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে সবই ষড়যন্ত্রমূলক। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আমাদেরকে এসব মামলার আসামি করেছে। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। মিথ্যা মামলা দেওয়ায় একজন পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে আমি মামলা দিয়েছি।
অপর অভিযুক্ত মমতাজ আলী পুলিশের এসির ড্রাইভার পরিচয় দেন না জানিয়ে আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, হানিফ সুমন আমার বন্ধু। সে রাজনীতি করে এ হিসেবে তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তার ভাই ও স্ত্রীর বড় বোনরা মাদকের সাথে জড়িত থাকলেও হানিফ এসবের সাথে জড়িত নেই। তার স্ত্রীর বোনরা এখানকার মাদকের গডফাদার। এসবের সাথে আমি এবং বন্ধু সুমন জড়িত নই। তবে আমি একসময় পাহাড়তলী থানা পুলিশের গাড়ি চালাতাম।
যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সুমন ও মমতাজ শহীদ কলোনির মাদকের হোল্ড সেলার। তাদের পুরো পরিবার মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে সরকারি জায়গা দখল করারও অভিযোগ রয়েছে। হানিফ সুমন ও মমতাজের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আকবরশাহ থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) শাকের আহমেদ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, এখানে মাদক বিক্রেতা হিসেবে অনেকের নাম আসছে। আপনার কাছে কোনো নাম থাকলে একটু পাঠান। সেখানে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
যোগাযোগ করা হলে সিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি-পাহাড়তলী) মো. মহিউদ্দিন সেলিম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বস্তি এলাকা মানে মাদক একটু থাকে। তবে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলমান আছে।
তিনি বলেন, আমার কোনো সিভিল ড্রাইভার নেই। যিনি আমার ড্রাইভার পরিচয় দেন তার ছবি থাকলে আমার কাছে পাঠান। খোঁজ নিয়ে আমি ব্যবস্থা নেব।