ঋণখেলাপি মামালায় ক্রিস্টাল গ্রুপের মালিক ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম ও তাঁর ভাই রাশেদ মুরাদ ইব্রাহিমের পাঁচ মাসের সাজাসহ গ্রেপ্তারে হুলিয়া দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
সাজাপ্রাপ্ত বিবাদীরা নগরের সদরঘাট থানার ২৬২ মাঝিরঘাট এলাকার মরহুম সেকান্দর হোসেন মিয়ার ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিবাদীদের বিরুদ্ধে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার পক্ষ থেকে এ মামলা করা হয়। ওই সময় পর্যন্ত ব্যাংক তাদের কাছ থেকে পাঁচ কোটি ৯৪ লাখ ৫৫ হাজার ১০৩ টাকা পাওনা ছিল। এ টাকা দুমাসের মধ্যে পরিশোধ করার কথা থাকলেও বিবাদীরা পরিশোধ করেনি। পরে একই বছরের ৩০ নভেম্বর আট কোটি ৭৯ লাখ ২৮ হাজার ৭৩৩ টাকা আদায়ে মামলা করে। এছাড়া এ ঋণের বিপরীতে কোনো বন্ধকি সম্পত্তিও ছিল না।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তিন দফা সময়ের আবেদন করেও ঋণ পরিশোধ না করে আবারও সময়ের আবেদন করা হয় বিবাদীদের পক্ষ থেকে। তবে আদালত এ আবেদন নামঞ্জুর করেন। এছাড়া চলতি বছরের ১৫ জুলাই বিবাদীদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয় ব্যাংকের পক্ষে। সেই আবেদন মঞ্জুর করে বিবাদীদের পাঁচ মাসের সাজাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
আরও পড়ুন : ব্যাংকের ৩০০ কোটি টাকা খেলাপি, বিদেশ যেতে মানা মোরশেদ মুরাদ—মেহজাবিনের
জানা যায়, সাবেক ফারমার্স ব্যাংক পরিচালক থাকাকালীন চট্টগ্রামভিত্তিক ক্রিস্টাল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম ‘রয়েল ডিপ সি ফিশারিজ’ নামে একটি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ পাইয়ে দেন। পরে তাঁর মালিকানাধীন আরেক প্রতিষ্ঠানের পুরাতন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ট্রলার ওই প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করে টাকাগুলো হাতিয়ে নেন। এসব তথ্য উঠে আসে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের তদন্তে।
একই সময়ে তিনি ওই ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে ছয় প্রতিষ্ঠানকে ১৭২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দেন। এর মধ্যে রয়েছে মো. মনজুরুল ইসলামের মালিকানাধীন রয়েল ডিপ সি ফিশারিজের কাছে ২৪ কোটি ৩৪ লাখ ৮১ হাজার টাকা, জাহাজভাঙা ব্যবসায়ী দিদারুল ইসলামের শীতল এন্টারপ্রাইজে ৭৭ কোটি ৭৫ লাখ ৮৭ হাজার টাকা, জাহাজভাঙা খাতের খেলাপি ব্যবসায়ী সাহেদ মিয়ার মালিকানাধীন সাহেদ শিপব্রেকিংকে ৪৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা, হারুন উর রশিদের বেঙ্গল ট্রেডিংয়ে ১২ কোটি ৪৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এবং মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমের চাচা ও পলাতক খেলাপি ব্যবসায়ী জাহিদ হোসেন মিয়ার জাহিদ এন্টারপ্রাইজে আট কোটি ১০ লাখ ২১ হাজার টাকা।
জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য মাহজাবিন মোরশেদের স্বামী চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম নিজের এবং তাঁর পরিবারের মালিকানাধীন আইজি নেভিগেশন লিমিটেড, ক্রিস্টাল নেভিগেশন লিমিটেড, বে নেভিগেশন লিমিটেড, আইজি নেভিগেশন লিমিটেড, ক্রিস্টাল ল্যান্ডমার্ক লিমিটেড, ইব্রাহিম ফার্মস লিমিটেড, ম্যাক ট্রেড লিমিটেড, ক্রিস্টাল ফিশারিজ লিমিটেড, এমআরএফ ফিশারিজসহ ফারুক অ্যান্ড সন্স লিমিটেড নামে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়ে তোলেন ক্রিস্টাল গ্রুপ।
আরএস/আরবি