মেয়রকে ২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে ক্ষোভ ঝাড়লেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ৩টা। হঠাৎ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) সামনে ক্ষু্দ্ধ কর্মীদের জটলা। মুহূর্তেই ক্ষোভের অনল রূপ নিল উত্তাল বিক্ষোভে। আর সেই অনলে পুড়তে হয়েছে সিটি মেয়র রেজাউল করিমকে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মেয়রকে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় অবরুদ্ধ করে ক্ষোভ ঝাড়লেন।

দুপুর ৩টা থেকে ক্ষোভ বিক্ষোভ, সমাবেশ চলছিল বিকেল ৫টার পরও। মেয়র এ সময় সিটি করপোরেশন অফিসে থাকলেও বের হওয়ার চেষ্টা করেননি বলে জানান আন্দোলনকারীরা।

বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদের ব্যানারে এই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়। মূলত চাকরি স্থায়ী করার দাবিতেই ছিল কর্মসূচি। চাকরি স্থায়ী না করলে শিগগির আরও বড় আন্দোলনের আগাম ঘোষণাও দিয়ে রেখেছে সংগঠনের ক্ষুব্ধ নেতারা।

জানা যায়, চাকরি স্থায়ী না হওয়ার দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ ছিল বঞ্চিত শ্রমিকদের মধ্যে। পুঞ্জিভূত সেই ক্ষোভেরই বিস্ফোরণ ঘটল আজ। বঞ্চিত শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে অনেকটা অসহায় ছিলেন মেয়র।

আরও পড়ুন: হঠাৎ ‘রেগে আগুন’ মেয়র রেজাউল

এদিকে বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদের আহ্বায়ক আবু তাহের। তিনি বলেন, দীর্ঘ ২০-২৫ বছরের অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। ১ হাজার ১৫৮টি পদ পুরণের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে চারবার সময় বাড়ানো হয়েছে। সবমিলিয়ে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আমাদের স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া শুরু না হলে আমরা আইনি জটিলতায় পরে যাবো।

তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের বেধে দেওয়া সময়য়ের দুমাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু স্থায়ীকরণের কোনো অগ্রগতিই হয়নি। আমরা আজকে এক দাবিতে জণজমায়েত দিয়ে আগামীর কর্মসূচিতে চলে যাচ্ছি। আগামী সপ্তাহে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদের সংবাদ সম্মেলন ঘোষণা করা হলো।

সংগঠনের সদস্য সচিব সাজু মহাজন বলেন, নিজেদের নায্য দাবি আদায়ে আজ আমরা আন্দোলনে নেমেছি। অথচ এই সময়টাতে আমাদের জনসেবা করার কথা ছিল। কিন্তু চাকরি স্থায়ীকরণ আমাদের অধিকার। কর্তৃপক্ষ আমাদের অধিকার রক্ষা করেনি বলেই আজ আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথেই থাকব। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে অস্থায়ীদের স্থায়ী করার যে সময়সীমা তা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।

আরও পড়ুন: চসিক মেয়র—মশার জ্বালায় ‘অস্থির’, নিজেও পাশে রাখেন মশার কয়েল

এদিকে বঞ্চিত বেশ কয়েকজন কর্মচারী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, দীর্ঘ ২০-২৫ বছরেও আমাদের চাকরি স্থায়ী করা হচ্ছে না। এ কারণে আমরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। পরিবার নিয়েও আমাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। বিভিন্ন সময় চাকরি স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। মন্ত্রণালয়ের বিধিনিষেধ কিংবা নিয়োগ বিধির অজুহাতে আমাদের চাকরি আর স্থায়ী হয় না।

তারা আরও বলেন, চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর আমরা মানববন্ধন করি। দায়িত্বশীল কর্মকর্তার কথায় পূর্ব ঘোষিত প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি স্থগিত করি। কিন্তু দুমাস পেরিয়ে গেলেও চাকরি স্থায়ীকরণের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে আমাদের আন্দোলনে ফিরে আসতে হয়েছে। এবার আমাদের সবার এক দফা, এক দাবি। চাকরি স্থায়ী না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন থামবে না।

আরও পড়ুন: মেয়র রেজাউল প্রধান সমন্বয়ক নন, মাহতাবের নেতৃত্বেই রিভিউ কমিটি—স্পষ্ট জানালেন মাহবুব উল আলম হানিফ

সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম সচিব জাহিদুল ইসলাম জোমাদ্দারের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ডা. হাসান মুরাদ চৌধুরী, ডা. সুমন তালুকদার, শফিউল আযম, যুগ্ম আহ্বায়ক লিটন বড়ুয়া, খাইরুল বশর তসলিম, রবিউল হোসেন, বোরহানুল আলম, ইরফানুল হক, রাজু তালুকদার, অর্পণ চাকমা ও অলকা বিশ্বাস।

আন্দোলনের বিষয়ে জানতে আলোকিত চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা তাদের অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছি। চাকরি কাঠামোর বাইরে তো কাউকে স্থায়ী করা যাবে না। এরপরও বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!