মেয়র চলে যেতেই ১৫ টাকা বাড়ল সয়াবিন তেলের দাম

চট্টগ্রাম সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে খোলা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দিলেও সেই দামে হচ্ছে না বিক্রি। নির্ধারিত দামের ১৫-২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে খোলা সয়াবিন। রয়েছে বোতলজাত তেলের সংকটও। এছাড়া বেশিরভাগ দোকানে টাঙানো হচ্ছে না মূল্যতালিকা।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকাল ১০টায় সরেজমিন নগরের চকবাজার কাঁচাবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

সরেজমিন দেখা গেছে, কাঁচাবাজারের আশপাশের বিভিন্ন মুদি দোকান ও বাজারের নিচতলার মাংস ও মাছের দোকান এবং দ্বিতীয় তলার সবজির অধিকাংশ দোকানে টাঙানো হয়নি মূল্যতালিকা। তবে হাতেগোনা কয়েকটি দোকানে দেখা গেছে টাঙাতে।

এদিকে মুদি দোকানগুলোত প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া দামে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে না। এছাড়া রয়েছে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট। ফলে বাড়তি দামে খোলা সয়াবিন তেল কিনতে বাধ্য হচ্ছে ক্রেতারা।

আরও পড়ুন : আলোকিত চট্টগ্রামে প্রতিবেদনের ৫ দিন—চকবাজার কাঁচাবাজারের দুই ফ্লোরের একটি চালু

কাঁচাবাজারের পেছনে ছগীর স্টোরে গিয়ে দেখা যায়, দোকানের সামনে টাঙনো রয়েছে মূল্যতালিকা। সেখানে লেখা আছে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা। কেনা মূল্য ১৭১ টাকা। এছাড়া নজরুল স্টোরে টাঙানো মূল্যতালিকায় দেখা গেছে, খোলা সয়াবিন তেলের মূল্য ১৭৬ টাকা। অথচ প্রশাসন সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দেন খোলা ১৬০ টাকা। কিন্তু সেই নির্দেশনা মানার বালাই নেই।

এসময় ছগীর স্টোরে তেল কিনতে আসা গৃহিণী আলিজা মির্জা বলেন, শুনলাম ১৬০ টাকা খোলা সয়াবিন তেল পাওয়া যাবে। এসে দেখি মূল্যতালিকায় লেখা ১৭৫ টাকা। আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের আর কী করার আছে?

অন্যদিকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট কাটেনি বলে জানিয়েছে অনেক দোকানি। তারা বলছেন, বোতলজাতল সয়াবিন তেলের সঙ্গে চিনিগুঁড়া চাল, চাপাতাসহ বিভিন্ন পণ্য নেওয়ার শর্ত জুড়ে দিচ্ছে কোম্পানির লোকজন। এছাড়া বর্তমানে ৫ লিটার বোতালজাত তেলের সংকট তৈরি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুদি দোকানি বলেন, ১ লিটার ও ২ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল থাকলেও নেই ৫ লিটার। কোম্পানিগুলোর শর্ত পূরণ করলে তেল দিচ্ছে, না হয় দিচ্ছে না। এছাড়া তেল বিক্রিতে তারা বিভিন্ন কৌশলও অবলম্বন করছে।

এদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, বোতলজাত সয়াবিন তেল সাধারণ ক্রেতাদের দেওয়া হচ্ছে না। যারা প্রতিমাসে নির্দিষ্ট দোকান থেকে বাজার-সদাই করে তাদের কাছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিক্রি করা হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিনের গায়ে লেখা দামের চেয়ে ৫-১০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে গত ৭ মার্চ সকালে চকবাজার কাঁচাবাজার পরিদর্শনে যান সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এসময় তিনি নজরুল মার্কেটের বিভিন্ন মুদি দোকানে গিয়ে খোলা সয়াবিন তেল আছে কিনা জানতে চান। মেয়র খাতুনগঞ্জ থেকে খোলা তেল ১৫৫ টাকায় কিনে ক্রেতার কাছে ১৬০ টাকায় বিক্রির পরামর্শ দেন দোকান মালিক ও কর্মচারীদের। এছাড়া দাম বেশি নিলে জেল-জরিমানার হুঁশিয়ারি দেন। কিন্তু এতকিছুর পরও মেয়রের সেই নিদের্শনার বাস্তবায়ন হয়নি বাজারে। উল্টো ১৫ টাকা বেশি দামে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। রয়েছে বোতলজাত তেল সংকটের অজুহাত।

নজরুল মার্কেটের সায়েদ স্টোরে গিয়ে খোলা সয়াবিন তেল আছে কিনা জানতে চাইলে দোকানি নেই বলে জানান। এসময় ওই দোকানে মূল্যতালিকাও দেখা যায়নি। অথচ এই দোকানে সেদিন মেয়র নিজেই খোলা তেল এনে বিক্রির পরামর্শ দিয়েছিল।

এদিকে চকবাজার কাঁচাবাজার মেয়রের পরিদর্শনের সময় প্রায় সব দোকানে মূল্যতালিকা টাঙানো হয়েছিল। কিন্তু এরপর থেকে অনেক দোকান থেকেই উধাও হয়ে গেছে মূল্যতালিকা।

আরও পড়ুন : চকবাজার কাঁচাবাজারের দুই ফ্লোর চালু না হওয়ার নেপথ্যে

চকবাজার কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা মো. রাজ্জাক নামে এক ক্রেতা বলেন, প্রশাসনের অভিযান চললে সব দোকানে মূল্যতালিকা টাঙিয়ে নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি করা হয়। কিন্তু অভিযান শেষ হলে যে লাউ সেই কদু। প্রায় প্রতিবছর একই চিত্র দেখতে পায়। তবে গতবছরের চেয়ে এবার পণ্যমূল্য কিছুটা কম রয়েছে। প্রশাসন কঠোর হলেও দাম বাড়ানোর কেউ সাহস পাবে না।

প্রসঙ্গত, গত ৪ মার্চ (মঙ্গলবার) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে ভোজ্যতেল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এ সভায় চট্টগ্রাম সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৬০ টাকা করে নির্ধারণ করে দেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত আমদানিকারকেরা ১৫৩ টাকা দরে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল সরবরাহ করবেন। পাইকারি পর্যায়ে তা ১৫৫ এবং খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা বিক্রি করা যাবে। যদিও সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের বাজারে খোলা সয়াবিনের মূল্য নির্ধারণ করা রয়েছে ১৫৭ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন ১৭৫ টাকা।

এরপর গত ৫ মার্চ চকবাজার কাঁচাবাজারের মুদি দোকান, তেলের দোকান, সবজিবাজার, ফলের দোকান এবং মাংসের দোকানসমূহে মূল্য তালিকা না থাকা, বেশি দামে পণ্য বিক্রি ও মোড়কজাতকরণের নিয়ম না মানা এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর সামগ্রী বিক্রির অপরাধে ৫টি মামলায় সাড়ে ১৪ হাজার পাঁচশত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm