‘মাত্র ২০ সেকেন্ডে ছিনতাই’ অটোরিকশা টার্গেট করে টাকা কামায় বৌ-জামাই

হীরা নামিদামি মোবাইল টাকা সবই আছে তাদের

নগরে অভিনব পন্থার ‘ভয়ঙ্কর’ ছিনতাই চক্রের স্বামী-স্ত্রীসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। হীরা নামিদামি মোবাইল ও টাকা সবই আছে তাদের।

এদের মধ্যে ‘ভয়ঙ্কর’ আকাশ ছিনতাই করছে ১০ বছর ধরে। তিন বছরে করেছে দুই শতাধিক ছিনতাই । আকাশের এ কাজে সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে সহযোগিতা করতেন স্ত্রী তানিয়া। চলন্ত অটোরিকশায় উঠে মাত্র ২০ সেকেন্ডে অভিনব উপায়ে পর্দা কেটে যাত্রীর ব্যাগ, মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যেত আকাশ। আকাশ ছিনতাই করলেও ভাগ দিতে হত ‘সোর্স’ আনোয়ার ও তাজুলকে।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) গভীর রাতে নগরের আগ্রাবাদ বাদামতলি মোড় থেকে ছিনতাই চক্রর প্রধান মো. আকাশ (২৪), তার স্ত্রী তানিয়া বেগম (২৫), আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (৪৫) এবং মো. তাজুল ইসলামকে (৪০) গ্রেফতার করে ডবলমুরিং থানা পুলিশ।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ৮ পিস ডায়মন্ড, বিভিন্ন সময় ছিনতাই করা ১৬টি ভ্যানিটি ব্যাগ, ছিনতাই করা নামিদামি ব্র্যান্ডের ১১টি মোবাইল সেট, নগদ ২০ হাজার টাকা এবং অটোরিকশার হুড কেটে নেওয়ার একটি কাটার উদ্ধার করা হয়।

আকাশ চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বরুমচড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন থানায় তিনটি মামলা রয়েছে।

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নিজেকে পুলিশের সোর্স বলে পরিচয় দেয়। তাজুল ইসলাম আকাশের মামা।

অভিনব পন্থায় ‘ভয়ঙ্কর’ ছিনতাই!

অভিনব পন্থায় ভয়ঙ্করভাবে ছিনতাই করে আকাশ। তার প্রধান টার্গেট সিএনজি। চলন্ত সিএনজিতেই সে অভিনব পন্থায় পেছনে উঠে পর্দা কেটে ভেতরে থাকা যাত্রীর ব্যাগ, মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যেতে মাত্র ২০ সেকেন্ডের মধ্যে। পাশাপাশি গাড়ির জানালার পাশে বসা কোন যাত্রী ফোনে কথা বললে চোখের পলকেই টান দিয়ে হাওয়া হয়ে যেত আকাশ!

বছরেই শতাধিক ছিনতাই!

আকাশ ছিনতাই করে ১০ বছর ধরে। আগে তিনি নারী ছিনতাইকারী ফারজানার গ্রুপে কাজ করত। পরে গ্রুপ থেকে বের হয়ে এখন নিজেই করে এ কাজ। গত ৩ বছরেই ২ শতাধিক ছিনতাই করেছে সে! ডবলমুরিং থানার দেওয়ানহাট থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকা পর্যন্ত তার অপরাধ সীমানা।

ছিনতাই করে স্বামী, জামিন করায় স্ত্রী!

গ্রেফতারকৃত তানিয়া আকাশের স্ত্রী। তিনি আকাশ সম্পর্কে সব জেনেই বিয়ে করেন। স্বামীর অপকর্মে সহযোগিতাও করেছেন সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে! আকাশ ছিনতাইকৃত সব মালামাল জমা রাখতেন স্ত্রীর কাছে! আবার স্বামী ধরা পড়লে আদালত পাড়ায় ছুটতেন স্ত্রী তানিয়া! এর আগেও আকার ৩ বার গ্রেফতার হলে জামিন করান তার স্ত্রী! সর্বশেষ এপ্রিলেও একবার গ্রেফতার হয় । কিন্তু জামিনে বের হয়ে আবারও একই কাজে নেমে পড়েন।

পাথর মনে করে হীরা ফেলে দেয় আকাশ!

ছিনতাই শেষেই অধিকাংশ মালামাল ‘চোরাই’ মার্কেটে বিক্রি করে আকাশ। কিছু কিছু মালামাল আবার ফেরি করেও বিক্রি করে। তাই শুধুমাত্র মোবাইল, ব্যাগ আর টাকা ছাড়া বাকি জিনিসপত্র ফেলে দেয় আকাশ। ছিনতাইকৃত একটি ব্যাগ থেকে হীরা পায় সে। কিন্তু সেগুলো পাথর মনে করে রাস্তায় ফেলে দেয় সে! পরে তাজুল ও আনোয়ারের কাছে জানতে পারে এগুলো হীরা! সাথে সাথেই আবার কুড়িয়ে নিয়ে আসে।

ছিনতাই করে আকাশ, ভাগ পায় তাজুল-আনোয়ার!

গ্রেফতারকৃত আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নিজেকে পুলিশের সোর্স পরিচয় দেয়। আর তাজুল সম্পর্কে আকাশের মামা। এই পরিচয়ের সুবাদেই ছিনতাইকৃত মালামালের চার ভাগের তিনভাগ তাদের দিতে হয়। ছিনতাই কাজের একটি ভাগ প্রতি সপ্তাহেই কথিত এই ২ সোর্স তাজুল ও আনোয়ারকে দিতে হয়।

পুলিশের অভিযানেও এই তথ্যের সত্যতা মেলে। উদ্ধারকৃত ৮ টি ডায়মন্ডের মাত্র দুইটি পাওয়া গেছে আকাশের স্ত্রী তানিয়ার কাছে। বাকি ৬ টি ডায়মন্ডের ৩ টি উদ্ধার করা হয়েছে আনোয়ারের কাছ থেকে এবং বাকি তিনটি তাজুলের কাছ থেকে।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!