মাওলানার ‘শিশু বলাৎকার’—ইজ্জত বাঁচাতে যুবককে ‘চাঁদাবাজি’ মামলা!

৩ বছর আগেও বলাৎকার করতে গিয়ে ধরা খেয়েছিলেন মাওলানা ফোরকান উদ্দিন

বলাৎকারের বিকৃতি নেশা আছে ওই মাওলানার। একবার এক শিশুকে বলাৎকার করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরাও পড়েন। তবে তখন মুচলেকায় ছাড়া পান। আবারও বলাৎকারের অভিযোগ উঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এবার তাঁর শিকার ১১ বছরের এক শিক্ষার্থী।

যাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তিনি মাওলানা ফোরকান উদ্দিন, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার মারকাযুল কোরআন মাদ্রাসার পরিচালক। মাওলানা ফোরকানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ১১ বছরের এক শিক্ষার্থীকে দীর্ঘদিন ধরে বলাৎকার ও যৌন নির্যাতন করেছেন।

এদিকে তিন বছর আগেও বটতলী মার্কেটে এক শিশুকে বলাৎকার করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন মাওলানা ফোরকান। তবে মেম্বারের উপস্থিতিতে সেবার মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান তিনি। এবারও তাঁর বিরুদ্ধে বলাৎকারের অভিযোগ উঠলেও এখনো কোনো অ্যাকশনে যায়নি পুলিশ। বরং মাওলানার পক্ষে নিয়ে বলাৎকারের অভিযোগ ভিডিও করা যুবককে উল্টো কারাগারে পাঠাল আনোয়ারা থানা পুলিশ। এনিয়ে এলাকার লোকজনের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘হাসপাতালে ভর্তি’—মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকার, আটক হলেন শিক্ষক

জানা যায়, মাওলানা ফোরকান উদ্দিন আনোয়ারার বারসত ইউনিয়নের মারকাযুল কোরআন মাদ্রাসার পরিচালক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ১১ বছরের এক শিশুকে বলাৎকার করে আসছিলেন। এ বিষয়ে কাউকে কিছু না বলতে ওই শিক্ষার্থীকে হুমকিও দেন তিনি। এ কারণে নীরবে দিনের পর দিন নির্যাতন সহ্য করে চলছিল ওই শিশু। কিন্তু নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় একদিন মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যায় সে। এরপর পরিবারের কাছে এসে সবকিছু খুলে বলে।

এদিকে ঘটনা জানাজানি হলে মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) রাতে আনোয়ারা থানার ওসি (তদন্ত) সৈয়দ ওমর দুই পক্ষকে ডেকে এনে ‘সমঝোতা’ করে দেন। বুধবার সকাল ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি থানার মধ্যস্থতায় মীমাংসা হয়ে গেছে বলে জানান মাওলানা ফোরকান উদ্দিন।

অপরদিকে আনোয়ারা বটতলী হাজী ইমাম শপিং সেন্টার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক লিটন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মাওলানা ফোরকান উদ্দিনকে আমরা তিন বছর আগে মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় এক শিশুকে বলাৎকারের ঘটনায় হাতেনাতে আটক করি। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ লোকজনের সামনে মুচলেকা দিলে ছেড়ে দিই।

যোগাযোগ করা হলে বটতলীর ইউপি সদস্য মো. আবদুর সবুর বলেন, তিন বছর আগে বলাৎকারের ঘটনায় মাওলানা ফোরকানকে আটক করেন হাজী ইমাম শপিং সেন্টারের ব্যবসায়ীরা। আমাকে খবর দিলে আমি ঘটনাস্থলে যাই। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে তাঁর কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিই।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাওলানা ফোরকান উদ্দিন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই ছাত্রকে বাঁশখালী থেকে আনতে গেলে একটি চক্র আমাকে ফাঁসিয়ে স্বীকারোক্তি নেয়। এজন্য তারা আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদাও দাবি করেন। পরে তাদের বিরুদ্ধে আমার করা চাঁদাবাজি মামলায় পুলিশ একজনকে আটক করে আদালতে পাঠান।

তিন বছর আগে বটতলী এলাকায় বলৎকারের সময় হাতনাতে ধরে পড়ে মুচলেকার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে উঠা সব অভিযোগ মিথ্যা। আমি এদের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করব।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আনোয়ারা থানার ওসি (তদন্ত) ওমর সাঈদ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, তদন্তে বলাৎকারের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আসলে মাদ্রাসা থেকে তিনজন পালিয়ে গেলে হুজুর তাদের আসতে বলেন। শিশুরা মাদ্রাসায় না আসার জন্য হুজুরের বিরুদ্ধে বলাৎকারের অভিযোগ তোলে।

মাওলানা ফোরকান তিন মাস আগে বলাৎকার করতে গিয়ে হাতেনাতে আটক হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরলে ওসি ওমর বলেন, অভিযোগ পেলে আমরা এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।

আরও পড়ুন: ‘হুজুরের ইয়াবাবাণিজ্য’—২৯ হাজার ইয়াবাসহ ২ কারবারি পুলিশের জালে

এদিকে দুই পক্ষের সমঝোতার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে সরোয়ার উদ্দিন সবুজ (৩০) নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ। প্রথমে মুচলেকা নেওয়া হলেও পরে চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার (২৫ আগস্ট) তাকে আদালতে পাঠানো হয়।

বলাৎকারের ঘটনা ধামাচাপা দিতেই সবুজের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাঁর ছোট ভাই মো. রকিব হাসান। তিনি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, দুপুর ৩টায় থানা থেকে ফোন করে কথা আছে বলে আমার ভাইকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর মওলানা ফোরকান উদ্দিনকেও থানায় ডেকে আনেন ওসি। পরে চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে সবুজকে আদালতে পাঠানো হয়। আমাদের শুধু বলছেন— উপরের নির্দেশ আছে।

সিএম/ডিসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!