বিলে রগকাটা নারীর লাশ—খুনির মুখে পরকীয়া ও টাকার কথা

পাওনা টাকা দেওয়ার কথা বলে ডেকে এনে মোহছেনা আক্তারকে খুন করার কথা স্বীকার করেছে খুনি মো. রিদুয়ান।

বৃহস্পতিবার (২৭জানুয়ারি) আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে সে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে।

এর আগে ২৫ জানুয়ারি পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের মেহেরনামার নুইন্যমুইন্যা ব্রিজের নিচে থেকে হাত-পায়ের রগ কাটা এবং ছুরিকাহত মোহছেনা আক্তারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

আরও পড়ুন: হাত-পায়ের রগকাটা, বুকে ছুরিকাঘাত—বিলে পড়ে ছিল নারীর লাশ

এ ঘটনায় নিহতের বড় ছেলে মো. আরিফ বাদি হয়ে রিদুয়ানকে প্রধান আসামি করে পেকুয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মোহছেনা আক্তার কক্সবাজারের সদর উপজেলার খাজামঞ্জিলের ছাবের আহমদের মেয়ে এবং মৃত মো. তৈয়বের স্ত্রী।

মামলার পর র‌্যাব-১৫ এবং পুলিশ অভিযান চালিয়ে উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে রিদুয়ান ও মো. সুজনকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার রিদুয়ান চকরিয়া উপজেলার কোণাখালী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল হালিমপাড়ার নুরুল আলম ওরফে কালা বদার ছেলে। সুজন একই এলাকার সাজেকঘোনার কবির হোসেনের ছেলে।

আদালতের বরাত দিয়ে পেকুয়া থানার অপারেশন অফিসার এসআই মোজাম্মেল হোসেন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, রিদুয়ান ৪/৫ বছর আগে অবৈধ পথে ট্রলারে করে মালয়েশিয়ায় যায়। ওখানে গিয়ে মোহছেনার স্বামী মো. তৈয়বের সঙ্গে পরিচয় হয়। সেই সূত্রে তৈয়বের স্ত্রী মোহছেনার সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ হতে থাকে রিদুয়ানের। এরমধ্যে মোহছেনার স্বামী তৈয়ব মালয়েশিয়ায় মারা যান। পরে তার মরদেহ দেশে নিয়ে আসার জন্য সহযোগিতা করে রিদুয়ান।

গত বৃহস্পতিবার চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারকের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে রিদুয়ান এসব কথা স্বীকার করে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন: রক্তাক্ত মহাসড়ক—শনাক্ত হয়নি লাশ, গাড়িও

রিদুয়ান জবানবন্দিতে বলেন, তৈয়ব মারা যাওয়ার বছরখানেক পর মালয়েশিয়া সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করে জেল খেটে দেশে আসি। দেশে এসে কক্সবাজার যাই মোহছেনার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে। এরপর থেকে মোহছেনার সঙ্গে সম্পর্ক হয়। এরমধ্যে আমার বাড়ি কোণাখালীতেও আসা-যাওয়া করতেন মোহছেনা। কিন্তু বিষয়টিকে ভালোভাবে নেননি আমার স্ত্রী কামরুন্নাহার। পরে কামরুন্নাহার বিষয়টি মোহছেনার বড় ছেলে মো. আরিফকে জানান।

এসআই মোজাম্মেল হোসেন আরও বলেন, সম্পর্কের সূত্রে রিদুয়ান ব্যবসার কথা বলে মোহছেনার কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা নেন বলে দাবি করেন ছেলে আরিফ। তবে রিদুয়ানের দাবি, ১ লাখ টাকা ধার নিয়েছিল মোহছেনার কাছ থেকে। ইতোমধ্যে ৫০-৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন বলে দাবি করে রিদুয়ান। বাকি টাকার জন্য কয়েকদিন ধরে খুব বিরক্ত করছিল মোহছেনা। এই টাকা না দিতেই মোহছেনাকে হত্যার পরিকল্পনা করে রিদুয়ান। বিষয়টি নিয়ে রিদুয়ান তার বন্ধু রাজমিস্ত্রি সুজনের সঙ্গে আলাপও করেন। হত্যার জন্য কেনা হয় ধারাল ছুরি।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫ জানুয়ারি রিদুয়ান টাকা নিতে মোহছেনাকে চকরিয়ায় আসতে বলে। কথা অনুযায়ী মোহছেনা ওইদিন বিকালে চকরিয়া আসেন। এ সময় রিদুয়ান ও সুজন মিলে মোহছেনাকে নিয়ে চকরিয়ার একটি রেস্টুরেন্টে নাস্তাও করেন। রিদুয়ান একজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দেওয়ার কথা বলে একটি অটোরিকশা করে মোহছেনাসহ পেকুয়ার দিকে রওনা দেয়। অটোরিকশাটি পেকুয়া সদর ইউনিয়নের নুইন্যামুইন্যা এলাকায় পৌঁছলে রাতে এক বন্ধুর বাসায় থেকে সকালে টাকা নিয়ে কক্সবাজার ফিরে যাওয়ার কথা বলে মোহছেনাসহ নেমে যায় রিদুয়ান।

পরে তারা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নুইন্যামুইন্যা ব্রিজের নিচে বিল দিয়ে হাঁটা শুরু করে। এ সময় সুজন ছুরি বের করে মোহছেনার বুকে পরপর সাতবার ছুরিকাঘাত করে। একপর্যায়ে চিৎকার করে মোহছেনা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে রিদুয়ান ও সুজন ছুরি দিয়ে তার পা ও হাতের রগ কেটে পালিয়ে যায়।

আরও পড়ুন: ইটভাটার পাশে অজ্ঞাত বৃদ্ধার লাশ, দেহে আঘাত

পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, র‌্যাব-১৫ ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে মোহছেনা হত্যাকাণ্ডে জড়িত রিদুয়ান ও সুজনকে গ্রেপ্তার করে।

বৃহস্পতিবার তাদের চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হলে ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে তারা হত্যার দায় স্বীকার করে ঘটনার বর্ণনা দেয়। পরে আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বলে জানান ওসি।

মুকুল/ডিসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!