কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গোসল করতে গিয়ে ঘটছে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা। ফলে অতীতের ন্যায় ফের বাড়তে শুরু করেছে মৃত্যুর মিছিল।
গত এক মাসে সমুদ্রে গোসল করতে নেমে ডুবে এবং ভেসে গিয়ে শিক্ষার্থীসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি লাইফগার্ডকর্মীরা পানিতে ভেসে যাওয়ার সময় জীবিত উদ্ধার করেছে তিন শতাধিক মানুষকে।
মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে সাগরে গোসলে নামার ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে ১০ নির্দেশনা জারি করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। করোনার কারণে দীর্ঘ ৪ মাস ১৯ দিন পর্যটন স্পট বন্ধ থাকার পর গত ১৯ আগস্ট খুলে দেওয়া হয় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত। খুলে দেওয়ার পর থেকে এ অবস্থা চলছে।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে লাশ হলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র
সরেজমিন ঘুরে এবং পর্যটকসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন সমুদ্রস্নান ও বালিয়াড়ির আনন্দ থেকে বঞ্চিত পর্যটকরা এবার মাত্রাতিরিক্ত আনন্দ—হৈ হুল্লোড়ে পুষিয়ে নিচ্ছেন বিগত দিনগুলো। মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এদিক-ওদিক। ওয়াটার বাইক, স্পিডবোট ও সাঁতার টায়ারে চড়ে মনের সজীবতা ফিরিয়ে আনছেন তারা। কিন্তু বেশি আনন্দ উপভোগ করতে গিয়ে মনের অজান্তে মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিচ্ছেন অনেকে।
সূত্রমতে, গত এক সপ্তাহে সৈকতে নেমে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। হোটেলে উঠে অতিরিক্ত মদ পানে দুই পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি শখের প্যারাসাইলিংয়ে চড়তে গিয়ে আহত হয়েছেন নারী পর্যটকও।
সাগরে গোসল করতে নামা পর্যটকদের জীবনরক্ষার কাজে থাকা লাইফগার্ড কর্মী শাহাদৎ হোসেন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, পর্যটকদের অসাবধনতা ও লাইফগার্ডের দেওয়া নির্দেশনা হলো—জোয়ার-ভাটার সময়সূচি, হুঁশিয়ারি বাঁশি, বিভিন্ন সংকেত ও লাল পতাকার সংকেত। এসব অমান্য করার কারণে বারবার দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা।
এদিকে গত ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঢাকার শ্যামলীর আদাবর এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে তৌনিক মকবুলের (২৩) সাগরে গোসল করতে নেমে মারা যান। তিনি ব্রাক ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
১৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার ব্যবধানে সমুদ্র থেকে পর্যটক মেহের ফারাবি অভ্রসহ দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত ২১ আগস্ট সাগরে গোসল করতে নেমে ভেসে যায় ইরফানুল ইসলাম নামের এক স্কুলছাত্র। পরে কলাতলীর সায়মন পয়েন্টে তার মরদেহ ভেসে আসে। সে কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমির নবম শ্রেণির ছাত্র।
পাশাপাশি গত কয়েকদিন হেটেলে বসে অতিরিক্ত মদ পানে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন: বেড়াতে গিয়ে—কক্সবাজারে ‘নেতার’ সঙ্গে মদ খেয়ে মারা গেল ছাত্রলীগ কর্মীও
এছাড়া ১৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় দরিয়ানগর এলাকায় নিয়ম ভেঙে প্যারাসাইলিংয়ে চড়তে গিয়ে ঢাকার খিলক্ষেত এলাকার তারিকুল ইসলামের স্ত্রী তিন্নি আক্তার (২৬) মারাত্মক আহত হন।
সাগরে গোসলে নেমে মৃত্যুর ব্যাপারে লাইফগার্ডের সী সেইফ প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সমুদ্রসৈকতের পরিবেশ পরিবর্তন হয়ে গেছে। আগে সমুদ্রের অবস্থা যেমন ছিল এখন তেমন নেই। প্রাকৃতিক নিয়মে সাগরের তলদেশ দিন দিন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। বালু সরে গিয়ে সাগরে এখন বড় বড় গুপ্তখালের সৃষ্টি হচ্ছে। যে কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে।
এদিকে মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে গত শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে সমুদ্রে গোসল করতে আগ্রহীদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। এ সময় তিনি গোসল করতে ১০ নির্দেশনা দেন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সমুদ্রের পানিতে নামার আগে ১০টি নির্দেশনা মানতে হবে পর্যটকসহ সবাইকে। যা আমরা সতর্কবার্তা হিসেবে নির্ণয় করেছি। এসব নির্দেশনা সৈকতের উল্লেখযোগ্য পয়েন্টে লাগানো হয়েছে। পর্যটকদের জানা উচিত কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে লাইফগার্ড আছে। এখানে সিকিউরিটির ব্যবস্থা আছে। কোন চিহ্ন দিয়ে কি অর্থ প্রকাশ পায়, লাল পতাকার অর্থ কী ইত্যাদি দেওয়া আছে। আত্মীয়-স্বজন, পরিবার-পরিজন নিয়ে যারা কক্সবাজার সৈকতে বেড়াতে আসেন তারা অনেক সময় সিগন্যালগুলো খেয়াল করতে পারে না। তাদের অবগতির জন্য এ আয়োজন করা হয়েছে। তাদের সহায়তার জন্য এখানকার বিচকর্মীরা সার্বক্ষণিক সতর্ক রয়েছেন।
ডিসি