বিদ্রোহীর পক্ষ নিয়ে আনোয়ারায় ‘নৌকা’ ডোবাতে চান আওয়ামী লীগ নেতারা!

পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আনোয়ারায় চেয়ারম্যান পদে অধিকাংশ ইউনিয়নে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা।

এরমধ্যে বারশত ইউনিয়নে প্রকাশ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারণায় অংশ নিয়ে ভোট চাইতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের।

জানা যায়, ১১ ইউনিয়নের ১০টিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপরীতে আছেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। এরমধ্যে ৭ ইউনিয়নের ৭ বিদ্রোহী প্রার্থীকে ইতোমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে দল থেকে। তবে আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতাকর্মীরা বিদ্রোহীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় দলের ভেতর উত্তেজনা বিরাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পঞ্চম ধাপে বারশত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের সঙ্গে আনারস প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল হক। ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন আওয়ামী লীগ সদস্য আবদুল হালিম, নুর কাইয়ুম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি নবী হোসেন, বারশত ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাঈনুদ্দিন গফুর খোকন, ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. জানে আলম, ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সেলিম, সাধারণ সম্পাদক মো. নুর খান, মাদক ব্যবসায়ী জালালসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী।

৫ নম্বর বরুমচড়া ইউনিয়নে নৌকা প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল ইসলাম চৌধুরীরে সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহাদাত হোসেন চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বশর।

তাঁদের পক্ষে কাজ করছেন বরুমচড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক আমির খান।

এ অভিযোগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সেলিমের। যারা নৌকার বিরোধিতা করছেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান তিনি।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে বারশত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাঈনুদ্দিন গফুর খোকন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। আমি কেন নৌকার বিরোধিতা করব? ব্যক্তি ভালো লাগছে না, তাই কোনো পক্ষের হয়ে কাজ করছি না।
এদিকে রায়পুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান জানে আলমের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী, রায়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি আমিন শরীফ ও আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুল কাদের।

বটতলী ইউনিয়নে অধ্যাপক এমএ মান্নান চৌধুরীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী সোহেল।

আনোয়ারা সদর ইউনিয়নে অসীম কুমার দেবের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী দিদারুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম।

পরৈকোড়া ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফ চৌধুরীরে সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী নাজিম উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হাসান জিয়াউল ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আবদুল হক।

হাইলধর ইউনিয়নে উপজেলা আওযামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. সোলেমান ও আবু তাহের।

আরও পড়ুন : বিদ্রোহী প্রার্থী—সমর্থকরা আওয়ামী লীগে থাকতে পারবে না : মাহবুব উল আলম হানিফ

প্রতিটি ইউনিয়নে রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে বাড়িতে গিয়ে বিদ্রোহীর পক্ষে প্রচারণা করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছেন বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।

বারশত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. মহিউদ্দিন বলেন, ব্যক্তি কোন্দলের কারণে নৌকার পরাজয়ের জন্য প্রকাশ্যে কাজ করছেন অনেক নেতাকর্মী। বিদ্রোহী প্রার্থীর হয়ে নির্বাচনি মাঠে দিন-রাত কাজ করছেন। তবে হাজারো ষড়যন্ত্রের পরও নৌকার জয় সুনিশ্চিত করতে আমরা মাঠে রয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ মালেক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, দলের হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সহযোগিতা করা দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের সামিল। যারা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে যেসব নেতাকর্মী কাজ করছেন তাদের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

যোগাযোগ করা হলেলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নৌকার বিরোধিতা করায় তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে সুপারিশসহ নামের তালিকা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে যেসব নেতা কাজ করছেন বা প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছেন তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ৫ জানুয়ারি আনোয়ারার ১১ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে বৈরাগ ইউনিয়নে চেয়ারম্যানসহ ৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

ইমরান/ডিসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!