চট্টগ্রামে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে বাড়ছে ট্রেন দুর্ঘটনা। এ অবস্থায় নিরাপদ ভ্রমণে যাত্রীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আস্থার সংকট। এর চেয়েও বড় বিষয়, ট্রেনের ছাদ থেকে তিন কিশোরের পড়ে যাওয়া এবং একজনের নিহতের বিষয়টিও জানেন না রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম)
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ সেপ্টেম্বর আন্তঃনগর রেল সোনার বাংলার ছাদে উঠে পড়া চার কিশোরের মধ্যে ৫০০ টাকা নিয়ে তর্কের জেরে তিন কিশোরকে ছাদ থেকে ফলে দেয় সঙ্গে থাকা আরেক কিশোর। এদিন রাতে লাকসামের লালমাই বাঘমারা এলাকা থেকে একজনের লাশ ও দুকিশোরকে আহত অবস্থায় উদ্বার করে লাকসাম রেলওয়ে পুলিশ। পরে ১৬ সেপ্টেম্বর আখাউড়া স্টেশন এলাকা থেকে জড়িত সেই কিশোরকে আটক করে রেলওয়ে পুলিশ।
এছাড়া ২১ সেপ্টেম্বর ইঞ্জিনের সঙ্গে বগির হুক না লাগানোর কারণে চাঁদপুরগামী সাগরিকা এক্সপ্রেসের যাত্রা বাতিল করা হয়। সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে রেলটি চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল।
আরও পড়ুন কিশোর গ্যাং—৫০০ টাকার জন্য চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে ফেলে দেয় ৩ কিশোরকে
অভিযোগ আছে, রেল ছাড়ার এক ঘণ্টা আগে পিএসএম (প্লাটফর্ম স্টেশন মাস্টার) মঈন উদ্দিন মামুন বগির সঙ্গে ইঞ্জিন লাগানোসহ সবকিছু দেখাশুনা করার কথা থাকলেও তিনি দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। এছাড়া বিষয়টি কন্ট্রোলকে জানানো হয়নি। পরে যাত্রীদের বিক্ষোভের মুখে টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হয়। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
অভিযোগের বিষয়ে পিএসএম মঈন উদ্দন মামুন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বিষয়টি আমি কন্ট্রোল অফিসে অবহিত করি। পরে নতুন একটি ইঞ্জিন লাগালেও ট্রেনটি ছাড়েনি। এরপর যাত্রা বাতিল করে যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হয়।
এদিকে ২৪ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস সাড়ে ৯টার দিকে ভাটিয়ারি ঢুকার সময় একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। জানা গেছে, রেললাইনের ত্রুটির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে দুর্ঘটনার সময় ট্রেনের গতি কম থাকায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগীয় সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শন করেছি। এ ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে ঘটনার আসল কারণ জানা যাবে।
এদিকে রেলে একের পর এক দুর্ঘটনার কারণে যাত্রীদের আস্থা কমছে। নিয়মিত ট্রেনে যাতায়ত করা বেশ কয়েকজন যাত্রী বলেন, রেলযাত্রাকে আরও নিরাপদ করতে সার্বিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করা জরুরি। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলাকারীদেরও জবাবদিহি ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
রেলের যাত্রী আবদুল করিম বলেন, নিরাপদ বাহন হিসেবে ট্রেনে ভ্রমণে সবসময় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তবে মাঝে মাঝে বিভিন্ন সমস্যার কারণে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তাই সার্বিক ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করলে যাত্রীদের আস্থা বাড়বে।
জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. জাহাঙ্গীর আলম আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, রেলের দুর্ঘটনা একেকটি একেক ধরণের। তাই একটির সঙ্গে অন্যটির কোনো মিল নেই। রেলের যাত্রীদের আস্থা সংকটের কোনো অভিযোগ আমি পাইনি।
আন্তঃনগর রেল সোনার বাংলার ছাদ থেকে পড়ে এক কিশোর নিহত ও দুজন আহতের ব্যাপারে জানতে চাইলে জিএম উল্টো প্রতিবেদককে প্রশ্ন করেন, এরকম কোনো ঘটনা ঘটেছে নাকি? এরপর তিনি বলেন, আমি জানি না।
আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম