চট্টগ্রামের আতঙ্কের এক উপজেলা ‘বাঁশখালী’। খুন, ডাকাতি, ধর্ষণ থেকে শুরু করে এমন কোনো অপরাধ নেই যা এখানে হতো না। তবে হালে বদলে গেছে সেই চিত্র। বাঁশখালী থানায় এক বছরে মাদকের মামলা বাড়লেও কমে গেছে খুন, ধর্ষণ, ডাকাতিসহ ভয়ঙ্কর সব অপরাধ।
সচেতন মহল বলছে, মো. কামাল উদ্দিন বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে যোগদানের পর থেকেই লাগাম টেনেছেন অপরাধের। অবশ্য এর স্বীকৃতিও পেয়েছেন কামাল উদ্দিন। তিন তিনবার তিনি চট্টগ্রাম জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি’র স্বীকৃতি পেয়েছেন।
জানা যায়, ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর বাঁশখালী থানায় ওসি হিসেবে যোগ দেন কামাল উদ্দিন। এর পর ধীরে ধীরে অপরাধের লাগাম টানতে শুরু করেন। এতে কমতে থাকে খুন, নাশকতা, ডাকাতি, ধর্ষণের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধ।
থানা সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে বাঁশখালী থানা পুলিশ ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। সাজাপ্রাপ্ত, জিআর, সিআর মামলা মিলে ১ হাজার ২৩৯টি ওয়ারেন্টভুক্ত দাগি আসামির ওয়ারেন্ট তামিল করে।
আরও পড়ুন: বাঁশখালীতে কৃষি বিপ্লব : দুই খাল খননে বদলে গেল ৫ হাজার কৃষকের ভাগ্য
বাঁশখালী থানায় এক বছরেই মাদকের মামলা হয়েছে ১২৮টি। এসব মামলায় ২১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ৩ লাখ ১০ হাজার ১২টি ইয়াবা, ১ হাজার ৩৮৯ লিটার চোলাই মদ এবং ৯ কেজি ৩৫০ গ্রাম গাঁজা।
এদিকে অপরাধ দমন করায় এর প্রভাব পড়েছে নির্বাচনেও। এখানকার পৌরসভা নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এবং জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়েছে কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই। ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, দুর্গাপূজাসহ ধর্মীয় উৎসবগুলোও উদযাপিত হয়েছে নির্বিঘ্নে।
ফিরে দেখা বাঁশখালী
একসময় আতঙ্কের এক নাম ছিল ‘বাঁশখালী’। ২০০৩ সালে বাঁশখালীর সাধনপুরে ১১ জন হিন্দুকে পুড়িয়ে হত্যা করার পর দেশজুড়ে আলোচনা উঠে আসে বাঁশখালী। এর আগে ২০১১ সালে ৩১ জেলেকে সাগরে রশি দিয়ে বেঁধে হত্যা করা হয়। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের রায়ের পর বাঁশখালী আদালত, উপজেলা ভূমি অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়, ভাংচুর করা হয় থানা। ডাকাতি, জলদস্যুতা, খুন, ধর্ষণ ছিল এখানকার নিয়মিত ঘটনা। ২০১৫ সালে সাধনপুরে পাহাড়ে বিশাল জঙ্গি আস্তানা থেকে ৪ জঙ্গিসহ ব্যাপক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এছাড়া এই বাঁশখালীতেই ২০২১ সালে দুর্গাপূজায় ১৫টি মণ্ডপে হামলা ও প্রতিমা ভাংচুর করা হয়।
বদলে যাচ্ছে বাঁশখালী
অতীতের সব লোমহর্ষক ঘটনাকে পাশ কাটিয়ে অন্যরকম এক উপজেলায় রূপ নিচ্ছে বাঁশখালী। পুলিশের সতর্ক অবস্থানের কারণে এ উপজেলায় অপরাধ এখন অনেকটাই কমে গেছে। স্থানীয়রা এজন্য কৃতিত্ব দিতে চাইছেন তিনবারের শ্রেষ্ঠ ওসি মো. কামাল উদ্দিনকে।
যোগাযোগ করা হলে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাশক্তি ও ভালোবাসা দিয়ে আইনি কাঠামো বাস্তবায়নে থানাকে মানুষের আশ্রয়স্থল বানিয়েছি, ভয়কেন্দ্র নয়। মানুষ যখন থানায় আসে প্রচণ্ড ক্ষোভ, আক্রোশ, প্রতিশোধ, হিংসা এবং ধ্বংসাত্মক মন নিয়ে আসে। বিক্ষিপ্ত মনকে কোমল ও পরিচ্ছন্ন করতে থানার সামনে নানা জাতের ফুলের বাগান করেছি। সুন্দর সুন্দর ফুল দেখে অনেকের মন শান্ত হয়ে যায়। কেউ অপরাধী হয়ে জন্ম নেন না, অপরাধীকেও সঠিক পথে নিয়ে আসা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।