বাঁশখালীর সরল ইউনিয়নের পাইরাং গ্রামে ১৮ ফুট প্রস্থ এবং ৩৫ ফুট দৈর্ঘ্যের এক বাড়ি। ঠিক সেমিপাকা নয়, আবার পাকাও নয়। তবে রাস্তাসহ বাড়ির চারিদিকে রয়েছে ৯টি সিসিটিভি ক্যামেরা ও ৬টি বৈদ্যুতিক ডিভাইস। বাড়ির ভেতর বসেই ক্যামেরা দেখেই মাদকবাণিজ্য চালিয়ে আসছেন গ্যাস পাম্প ডাকাতি, ব্যাংক ডাকাতি, ধর্ষণ, নারী নির্যাতনসহ অন্তত অর্ধডজন মামলার ফেরারি আসামি জাহাঙ্গীর আলম (৩২)।
আরও পড়ুন: বাঁশখালীতে খুন—চেয়ারম্যান লিয়াকতসহ ২৭ জনের বিচার শুরু
জাহাঙ্গীরের ঘর থেকে প্রায়সময় নারীর কান্না শোনা যেত। কান্না শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে গেলে তাদের ওপরও চালানো হতো নির্যাতন। স্থানীয়দের ভয় দেখাতে প্রকাশ্যে ছোঁড়া হতো গুলি।
গ্রামবাসীর ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে বাঁশখালী থানা পুলিশ গত শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টায় রহস্যজনক ওই বাড়িতে অভিযান যায়। এ সময় জাহাঙ্গীর দরজায় তালা আটকে এক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ গ্রামবাসীর থেকে খবর নিয়ে জাহাঙ্গীরের সহযোগী চিহ্নিত মাদক কারবারি মো. রাজীবের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় ২০ লিটার চোলাই মদ এবং ৫০০ কেজি গাঁজাসহ রাজীবকে আটক করে পুলিশ। সে পাইরাং গ্রামের মৃত রশিদ আহম্মদের ছেলে।
এদিকে আজ (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টায় জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে যান আলোকিত চট্টগ্রাম প্রতিনিধি। এ সময় আশপাশের বাড়ির লোকজন জানান, জাহাঙ্গীর স্থানীয় মৃত ফজল কাদেরের ছেলে। তার মা নুর আয়েশা। তার দুই ভাই মামুনুর রশিদ ও হারুনুর রশিদ পাশেই তাদের পুরনো বাড়িতে থাকেন। জাহাঙ্গীর এখনো বিয়ে করেনি। ওই রহস্যজনক বাড়ির পাশে ৪টি গরু নিয়ে খামারও করেছে জাহাঙ্গীর।
প্রতিবেশী মাহমুদুল আলম, নুরুসালাম, আব্দুল মতলব, রহিমা খাতুনসহ আরও কয়েকজন জানান, জাহাঙ্গীর দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সে ৬ মামলার পলাতক আসামি। তার রহস্যজনক বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং ডিভাইস বসিয়ে সে মাদক কারবার ও জলসা বসায়। প্রায়সময় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুঁড়ে উল্লাস করে। তাকে বিভিন্ন সময় দুইটি অস্ত্র হাতে দেখা যায়। আর কয়েকটি অস্ত্রও তার কাছে থাকতে পারে।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাতে পুলিশের অভিযানের পর থেকেই ওই বাড়িতে তালা ঝুলছে। রহস্যজনক সেই বাড়ির ভেতরে-বাইরে লাইট জ্বলছিল।
এদিকে জাহাঙ্গীরের পুরনো বাড়িতে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। তালা মেরে সবাই চলে গেছে। সেখানকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, দরিদ্র জাহাঙ্গীর হঠাৎ ধনী হয়ে যায়। সেমি পাকা ও পাকা বাড়ি নির্মাণ করে মাদক কারবার চালানোর পাশাপাশি গ্রামের মহিলাদের নানাভাবে নির্যাতন করতো।
যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রশিদ বলেন, জাহাঙ্গীর আলম প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে মাদক কারবার করছে দীর্ঘদিন ধরে। তার খুঁটির জোর কোথায় বুঝি না। সে পুরো সমাজকে ধ্বংস করে ফেলেছে। তার ভয়ঙ্কর নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে পাড়ার চার গৃহবধূর সংসার ভেঙেছে।
এ ব্যাপারে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মো. আরিফুর রহমান আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে মাদক কারবারি জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছিল। ওইসময় সিসিটিভি ক্যামেরা এবং বৈদ্যুতিক ডিভাইসের মাধ্যমে অভিযানের বিষয়ে টের পেয়ে সে গুলি ছুঁড়ে বাড়িতে তালা আটকে পালিয়ে গেছে।
এদিকে জাহাঙ্গীর আলমকে ধরতে পুলিশ মাঠে তৎপর আছে বলে জানিয়েছেন বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন।
উজ্জ্বল/এসআর