বাঁশখালীতে ‘সংঘাত’ ছাড়াই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, বিএনপি নেতার ভিন্ন দাবি

বাঁশখালীতে কোনো সংঘাত ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। সকাল থেকেই ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখের পড়ার মতো। পুরুষের পাশাপাশি নারী ভোটাররা প্রয়োগ করেছেন তাদের ভোটাধিকার। যদিও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতার দাবি ভিন্ন। তাঁর দাবি, নির্বাচনে ডিজিটাল কারচুপি হয়েছে।

পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ১১টি কেন্দ্রেই ভোটারদের উপস্থিতি ছিল দেখার মতো। বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ নিয়ে তিন স্তরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং ৯ জন ম্যাজিস্ট্রেটের সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণে ভোটাররা সুশৃঙ্খলভাবে ভোট প্রয়োগ করে ঘরে ফিরেছেন। ৯টি ওয়ার্ডের ২৫ হাজার ৯৮০ ভোটের জন্য তুমুল লড়াইয়ে ছিলেন ২ জন মেয়র প্রার্থীসহ ৫৭ জন সংরক্ষিত ও সাধারণ আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী।

অপরদিকে ভোট চলাকালীন বেলা ১২টায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা বিএনপি নেতা কামরুল ইসলাম হোসাইনি উপজেলা পরিষদ মাঠে ছিলেন। তিনি কয়েকজন সাংবাদিককে অনানুষ্ঠানিকভাবে বলেন, ১১টি ভোটকেন্দ্রে ডিজিটাল কারচুপির হচ্ছে, তাই আমি ভোট বর্জন করলাম।

নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়েছেন বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর মনোনীত প্রার্থী এসএম তোফাইল বিন হোসাইন। যিনি বাঁশখালী আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাঁশখালী পৌরসভা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।

আরও পড়ুন: রাত পোহালেই নির্বাচন : বাঁশখালীতে আওয়ামী লীগ—বিএনপি লড়াই, নাকি অন্য কিছু?

অপরদিকে ‘মোবাইল’ র্মাকা নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন প্রভাবশালী বিএনপি নেতা ও বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল ইসলাম হোসাইনি। তাঁর র্মাকা ‘মোবাইল’। এমপিবিরোধী এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী একটি গ্রুপ তাঁর পক্ষে ছিল বলে এলাকায় প্রচার ছিল।

মনোনয়নপত্র নেওয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপি নেতা কামরুল ইসলাম হোসাইনিও দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের অর্থ সম্পাদক ও শিল্পপতি সিআইপি মুজিবুর রহমানের একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিন ধরে ব্যবস্থাপক ছিলেন। এমনকি সিআইপি পরিবারের বহু আর্থিক অনুদানও তাঁদের হয়ে বিতরণ করেছিলেন কামরুল ইসলাম হোসাইনি।

তিনি আবার সম্প্রতি দুর্গাপূজার সময় বাঁশখালী থানার সামনে বাঁশখালী কেন্দ্রীয় কালীবাড়িতে হামলা মামলার ২ নম্বর আসামি। উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের জামিনে এসে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন। অবশ্য এ ব্যাপারে কামরুল ইসলাম হোসাইনির দাবি, তিনি যাতে মেয়র প্রার্থী হতে ব্যর্থ হন সেজন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলাটি করা হয়েছিল। কারণ তিনি মন্দির পোড়া ঘটনার আগে থেকে একটি দুর্ঘটনায় পা ভাঙা অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

এদিকে সরেজমিন ঘুরে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে নজিরবিহীন ভোটারদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সকাল ৭টায় ৭নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ জলদি আস্করিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, ভোটকেন্দ্রে থেকে ৬০০ হাত পর্যন্ত লম্বা নারী-পুরুষের সারিবদ্ধ লাইনে দেড় হাজারেরও বেশি ভোটার! ওই কেন্দ্রে ১০ জন কাউন্সিলর প্রার্থী থাকায় মূলত তাঁরাই ভোটারদের উদ্বুব্ধ করেন ভোর থেকে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হতে। ওই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৩৩২।

ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা উপজেলা প্রকৌশলী কাজী ফাহাদবিন মাহমুদ আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করেছেন। এই কেন্দ্রে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা হয়নি।

পূর্ব জলদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. সমরঞ্জন বড়ুয়া বলেন, সকাল থেকে বিপুলসংখ্যক ভোটার উপস্থিত হয়েছে। আমার কেন্দ্রে কোনো ধরনের সংঘাত হয়নি।

আরও পড়ুন: প্রতীক বরাদ্দের রাতেই বাঁশখালী পৌরসভা কার্যালয়ে ‘রহস্যের’ আগুন, এখনই জিডি নিবে না পুলিশ

যোগাযোগ করা হলে বাঁশখালী পৌরসভা নির্বাচনে নিয়োজিত রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা হয়নি। স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগেরও সত্যতা পাননি ভোটগ্রহণ কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা।

বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ১১টি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও থেকে কোন ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

নৌকা প্রতীক প্রার্থী এস এম তোফাইল বিন হোসাইন বলেন, জনগণ নৌকার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে এসেছে। ইভিএম ভোটে কখনও কারচুপি করা যায় না। স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ অবান্তর।

উজ্জ্বল/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!