বাঁশখালীতে পুকুর চুরি, হাওয়া হয়ে গেল ৭ তলা ভবন!

বাঁশখালীতে তথ্য গোপন করে ৭ তলা ভবনের রেজিস্ট্রি করার অভিযোগ উঠেছে। আর এ কাজে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ২৮ লাখ টাকা। ভবনটি পৌরসভা অফিসের কাছাকাছি হলেও অদৃশ্য কারণে নীরব সংশ্লিষ্টরা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে দায় চাপাচ্ছেন একে অপরের ওপর।

ভবনের রেজিস্ট্রি কবলায় দেখা গেছে, ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ জমির বাজার মূল্য ১ কোটি ১০ লাখ টাকা উল্লেখ করলেও ৭ তলা ভবনের ২৪ হাজার ১৯২ বর্গফুট ভবনের বাজার মূল্য ২ কোটি ৯০ লাখ ৩০ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়নি। ওই টাকা অলিখিতভাবে দাতা-গ্রহীতার মধ্যে লেনদেন হয়েছে।

তবে সাব-রেজিস্ট্রারের দাবি, জমি রেজিস্ট্রির সময় দাতা-গ্রহীতা ও দলিল লেখক অঙ্গীকার ভঙ্গ করে কারসাজি করলে তার কিছুই করার নেই।

এদিকে পৌরসভা সচিবের দাবি, পৌর এলাকায় ৭ তলা ভবন করে পৌর আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থার কথাও জানান তিনি।

আরও পড়ুন : আমেরিকা প্রবাসীর নামে ‘পুকুরচুরি’—ধরা খেল সিটি স্ক্যাপের এমডি মোমেন

রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৩ মার্চ পৌরসভার উত্তর জলদি মৌজায় প্রধান সড়ক সংলগ্ন মিয়া বাজারে ছাবের আহমদের ছেলে মোস্তাক আহমদ এবং আহমদুর রহমানের স্ত্রী রুমি আকতার মিলে মনকিচর গ্রামের আহমদুর রহমানের দুছেলে আবদুল গফুর ও আবদু ছবুরকে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ স্থাপনাবিহীন বাড়ি বিক্রি করেন। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ১৭৮৯/২৫ নম্বর দলিলে স্থাপনাবিহীন বাড়ি দেখিয়ে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা জমির বাজার মূল্য দেখানো হয়। বাজার মূল্যের সাড়ে ৯ শতাংশ হিসেবে সরকারি কোষাগারে রাজস্ব মূল্য দেওয়া হয় ১০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। অথচ ওই ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ জমিতে রয়েছে ৭ তলা ভবন। ভবন রেজিস্ট্রির সরকারি নিয়ম অনুসারে প্রতি বর্গফুট ভবনের বিক্রয় বাজার মূল্য ১ হাজার ২শ টাকা। প্রতি তলা ৩ হাজার ৪৫৬ বর্গফুট হিসাবে ৭ তলা ভবনে ২৪ হাজার ১৯২ বর্গফুট ভবন। ওই ভবনের প্রতি বর্গফুট ১ হাজার ২শ টাকা হিসাবে বাজার মূল্য হবে ২ কোটি ৯০ লাখ ৩০ হাজার ৪শ টাকা। এই মূল্যের সঙ্গে জমির মৌজার মূল্য ১ কোটি ১০ লাখ টাকা যোগ করলে হবে ৪ কোটি ৩০ হাজার টাকা। ৭ তলা ভবনের স্থাপনাসহ বাজার মূল্য ৪ কোটি ৩০ হাজার টাকার সাড়ে ৯ শতাংশ হিসেবে সরকারি কোষাগারে রাজস্ব মূল্য দিতে হবে ৩৮ লাখ ২ হাজার ৮৫০ টাকা। কিন্তু কবলা মূলে দেখা গেছে, ২৭ লাখ ৫৭ হাজার ৮৫০ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে জমি ক্রয়ে গ্রহিতারা সরকারি কোষাগারে রাজস্ব দিয়েছেন মাত্র ১০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে জমির ক্রেতা মো. আবদুল গফুর বলেন, জমি কেনার সময় ৭ তলা ভবনটি ছিল ঠিক। তবে ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় ভবনের কথা ও ভবনের বাজার মূল্য দলিলে ধরা হয়নি। এজন্য দলিলে স্থাপনাবিহীন বাড়ি উল্লেখ করা হয়। তবে সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিতে এ কাজ করা হয়নি।

পৌর আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আমি করিনি। আমার কাছে যিনি ভবন বিক্রি করেছেন তিনিই নির্মাণ করেছিলেন।

যোগাযোগ করা হলে দলিল লেখক মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, দাতা-গ্রহীতা যা বলেন আমরা তা লিখি। ঘটনাস্থলে কী আছে তা জানি না। তবে দলিল রেজিস্ট্রিতে জমির বাজার দামের ব্যাপারে দলিল লেখকের অঙ্গীকার থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাব-রেজিস্ট্রার রতন অধিকারী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, জমি রেজিস্ট্রির সময় দাতা-গ্রহীতা ও দলিল লেখক অঙ্গীকার ভঙ্গ করে কারসাজি করলে আমার কিছু করার নেই। জমি রেজিস্ট্রির সময় আমাদের ঘটনাস্থলে যাওয়ার সুযোগ নেই।

একই বিষয়ে বাঁশখালী পৌরসভার সচিব তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পৌর এলাকায় ৫ তলা ভবনের চেয়ে উঁচু তলার ভবনের অনুমোদনের নিয়ম নেই। ৭ তলা ভবন করে পৌর আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। ওই ভবনের ফাইল খোঁজা হচ্ছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm