যেকোনো মূল্যে বন্দর রক্ষায় প্রস্তুত চট্টগ্রামবাসী। বন্দর নিয়ে কোনো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত জনগণ মেনে নেবে না।
সোমবার (২৬ মে) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে বন্দর অভিমুখে পদযাত্রা শুরুর আগে বক্তব্যে এ কথা বলেন চট্টগ্রাম সুরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক বিপ্লব পার্থ।
চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব কোনো বিদেশি কোম্পানিকে না দেওয়া এবং বন্দরে আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেট ভাঙার দাবিতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর ভবন পর্যন্ত হেঁটে জনমত গঠন করে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হয়।
পদযাত্রাটি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, জামালখান, কাজির দেউড়ি, সার্কিট হাউস, লালখানবাজার, টাইগারপাস, চৌমুহনী, আগ্রাবাদ, বারিকবিল্ডিং, ফকিরহাট, কাস্টমস হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে গিয়ে শেষ হয়।
এদিকে পদযাত্রা শেষে বন্দর ভবনে ঢুকার চেষ্টা করলে সুরক্ষা কমিটির নেতাদের বাধা দেয় আনসার বাহিনী।
বিপ্লব পার্থ বলেন, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রামের গর্ব। এই ক্রান্তিকালে দেশের হাল ধরেছেন, চট্টগ্রামবাসী অত্যন্ত আনন্দিত। আপনি একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। ফলে এখানে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে সেটা খুবই প্রশংসার বিষয়। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে দিবেন, সেটা হবে না। চট্টগ্রামবাসী বীরের জাতি, বন্দর নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। এক রক্তবিন্দু থাকতে বিদেশি কোম্পানিকে বন্দর দিতে দিবে না চট্টগ্রামবাসী।
আরও পড়ুন : চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া যাবে না
তিনি বলেন, নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ করলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আওয়ামী লীগ সরকার এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব দুবাইভিত্তিক কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সিদ্ধান্ত এই সরকার কেন বাস্তবায়ন করছে তা চট্টগ্রামবাসীর কাছে বোধগম্য নয়। যার ফলে চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে সন্দেহ এবং হতাশা দেখা দিয়েছে। আমরা দেশীয়ভাবে পরিচালনা করতে পারবো এমন একটি ক্ষেত্র বিদেশিদেরকে তুলে দেওয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। এছাড়া দেশের এবং সরকারি স্থাপনার নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়বে বলে আমরা মনে করি।
চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকার আহ্বায়ক এম এ হাশেম রাজু বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর হচ্ছে দেশের অর্থনীতির চাবিকাঠি। এই বন্দর বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। বন্দর বিদেশিদের হাতে এক বিন্দু রক্ত থাকতে আমরা তুলে দিতে পারি না। বন্দরকে নিয়ে দেশি বিদেশি যেসব ষড়যন্ত্র শুরু করেছে তার দাঁতভাঙা জবাব চট্টগ্রাম সুরক্ষা কমিটির নেতৃত্বে চট্টগ্রামবাসীকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দিব। বিদেশিদের হাতে এই বন্দর দেওয়া হলে আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক ইব্রাহীম খোকন বলেন, বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শুরু থেকেই বলছে বন্দর পরিচালনা বন্দর কর্তৃপক্ষই করবে। ভাড়াটে হিসেবে কোনো বিদেশি কোম্পানিকে নিয়ে আসার দরকার নাই। নিজস্ব পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিকমানের গড়ে তুলতে হবে। চট্টগ্রাম সুরক্ষা কমিটির সকল কর্মকাণ্ডে বন্দর কর্মচারীদের সমর্থন থাকবে।
বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা বিদেশি বিনিয়োগের বিরুদ্ধে না। তবে সেই বিনিয়োগ হতে পারে নতুন নতুন গ্রিনফিল্ডে। যা দেশের জন্য ভালো হবে। আর বন্দরকে কিভাবে আন্তর্জাতিক মানে করা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। আমরা আশাকরি সরকার এ ধরণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে। আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সরে আসতে হবে।
এতে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন, বেসরকারি কারা পরিদর্শক উজ্জ্বল বরণ বিশ্বাস, মহানগর যুবদল নেতা ডা. রাজীব বিশ্বাস, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের নির্বাহী সদস্য হাজী আবদুল গনি, চান্দগাঁও স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা বাবলু দেবনাথ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ মহসীন, বন্দর শ্রমিক নেতা নুর হোসেন, মহানগর ছাত্রদল নেতা রাজু দাশ, সুকান্ত মজুমদার, কোতোয়ালি থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাজু দাশ, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের উপ-দপ্তর সম্পাদক নাফিজ শাহ, যুবদল নেতা মো. মামুন, খলিলুর রহমান ও অমল দাশ প্রমুখ।
আলোকিত চট্টগ্রাম