বদলির পরও বহালতবিয়তে প্রকৌশলী জাহিদুল, ‘তড়িঘড়ি’ একের পর এক প্রকল্প চলছে টেন্ডার ছাড়াই
ইউএনওর নীরব ভূমিকায় হচ্ছে অনিয়ম
বদলির পরও বহালতবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী মো. জাহিদুল আলম চৌধুরী। ইতিমধ্যে তড়িঘড়ি করে একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। তবে এসব কাজের কোনো টেন্ডার কিংবা অনুমোদন নেই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, টেন্ডার ছাড়া আগেভাগেই কাজ সম্পন্ন করে নিচ্ছেন প্রকৌশলী জাহিদুল। যাতে বদলিজনিত কারণে অন্যত্রে যাওয়ার আগেই বিল তুলে নিতে পারেন। প্রকল্পগুলোর বৈধতা বা কোনো ধরনের অনুমোদন নেই। এসব কাজ উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন তহবিলের অর্থায়নে হয়েছে বলে কাগজে-কলমে তিনি পরে দেখাবেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের ভেতরে একাধিক প্রকল্পের কাজ চলমান। প্রতিবেদকও এসব কাজের সত্যতা পেয়েছেন। ইটের গাঁথুনি দিয়ে মাটির নিচ থেকে ওয়াল নির্মাণ, অর্ধনির্মিত শহীদ মিনারের সংস্কার কাজ, সড়ক নির্মাণ এবং একটি বড় গর্ত খনন করা হচ্ছে। অন্তত পাঁচটি বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। একেকটি প্রকল্প ১০ লাখ টাকা করে হলেও ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ অর্ধ কোটি টাকার কাজ রাতারাতি শেষ করে সম্পন্ন দেখাতে উঠেপড়ে লেগেছেন প্রকৌশলী জাহিদুল।
আরও পড়ুন : চলে যেতে হবে কর্ণফুলীর সেই স্যানিটারি ইন্সপেক্টরকে, ব্যবসায়ীরা খুশি
স্থানীয়দের ধারনা, বড় গর্তটি সুইমিং পুলের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া কাজগুলোতে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা অভিযোগ করেন।
এদিকে এ বিষয়ে এলজিইডি কার্যালয়ের একাধিক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই কাজগুলো নিয়ম বহির্ভূত। গোপনে আরএফকিউ (রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন) দেখিয়ে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অথচ এ ধরনের প্রকল্পে নিয়মিত টেন্ডারের মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া উচিত ছিল। আমাদের ধারনা, প্রকৌশলী জাহিদুল আলম বদলির আগে দ্রুত বিল উত্তোলনের চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্মাণকাজে সংশ্লিষ্ট একজন শ্রমিক নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, আমরা ঠিকাদার হারুনের নির্দেশে কাজ করছি। আমাদের প্রতিষ্ঠান এইচ এন্টারপ্রাইজ। তবে কাজের সম্পর্কে বিস্তারিত জানি না।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলজিইডির এক কর্মকর্তা জানান, প্রকৌশলী জাহিদুল আলম এসব কাজ দ্রুত শেষ করে বিল তুলে নিতে চাইছেন। কাজের অনুমোদন এবং টেন্ডার নীতিমালা এখানে অনুসরণ করা হচ্ছে না।
অপরদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে কর্ণফুলী এলজিইডি প্রকৌশলী মো. জাহেদুল আলম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা। এই তিনটি কাজ আলাদা বরাদ্দ। এসব কাজ করছেন উপজেলা পরিষদ ভবনের কাজ করা বিভিন্ন ঠিকাদার।
পরিষদের ভেতরে রাস্তা, পাশে ওয়াল, সুইমিংপুলে কত টাকা বরাদ্দ, কোন প্রকল্প থেকে কাজ করা হচ্ছে— এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটি সুইমিংপুল নয়। তিনটি কাজের কত টাকা বরাদ্দ মুখস্থ নেই। অফিসে আসেন, দেখে বলব।
যোগাযোগ করা হলে এলজিইডির চট্টগ্রাম বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসান আলী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
ফোন করলেও রিসিভ করেননি কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুমা জান্নাত।
তবে চট্টগ্রাম এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. জামাল উদ্দীন বলেন, এসব প্রকল্পের অর্থায়ন যদি উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন তহবিল (রাজস্ব) থেকে হয় সেক্ষেত্রে ইউএনও ভালো বলতে পারবেন। যদি এলজিইডির কোনো বরাদ্দ হতো তাহলে নির্বাহী প্রকৌশলী স্যার জানতেন। আমি তবুও নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারকে বিষয়টি জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে ১২ খেকো গিলে খাচ্ছে কর্ণফুলীর ‘বাদামতল খাল’
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউএনওর নীরব ভূমিকায় এসব কাজে অনিয়ম হচ্ছে। কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির সুযোগে ইউএনও এ অবৈধ কাজগুলোর প্রতি উদাসীনতা দেখাচ্ছেন। যার ফলে প্রকৌশলী জাহিদুল আলম সব কাজ নির্বিঘ্নে করছেন।
যোগাযোগ করা হলে এএইচ এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর ঠিকাদার মো. হারুন বলেন, এসব কাজ আমি করছি না। ইউএনও’র বাংলোর কাজ করছি। আমি সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজটি করছি।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের মুঠোফোনে সব কাজের ছবি পাঠিয়ে অভিযোগ জানানো হলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাঁর কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
তবে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, এসব কাজের খোঁজ-খবর নিচ্ছে এলজিইডি ও জেলা প্রশাসন। কীভাবে টেন্ডার ছাড়া অর্ধ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, কোন প্রকল্প এবং কোন প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে এসব কাজ করা হচ্ছে, অভিযোগের সত্যতা কতটুকু, সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ৮ জানুয়ারি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে প্রধান প্রকৌশলীর রুটিন দায়িত্বে থাকা কর্ণফুলী এলজিইডির প্রকৌশলী মো. জাহেদুল আলম চৌধুরীকে বাঁশখালী উপজেলায় বদলি করা হয়। তবে ১০ দিন আগে বদলি হলেও তিনি এখনও কর্ণফুলী ছেড়ে যাননি। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়ে নতুন প্রকৌশলী হিসেবে পদায়িত হয়েছেন আনোয়ারা উপজেলা প্রকৌশলী তাসলিমা জাহান।
আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম