বড় হলো হিন্দুদের জোট, ৮ দফার সঙ্গে আরও দাবি
নতুন নামে ঐক্যবদ্ধ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট
চট্টগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হলো হিন্দুদের দুই বড় সংগঠন। সম্প্রতি লাখো হিন্দুর সমাগম ঘটানো বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট অভিন্ন প্লাটফর্মে মিলিত হয়েছে। এ দুই সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মের নাম ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’।
রোববার (১৭ নভেম্বর) দুপুর ৩টায় নগরের প্রবর্তক ইসকন মন্দিরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।
সংবাদ সম্মেলনে পূর্বঘোষিত ৮ দফা দাবির সঙ্গে যুক্ত করা হয় আরও ৫টি দাবি। একইসঙ্গে গত ৫ নভেম্বর হাজারী লেনের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানানো হয়।
আরও পড়ুন : পতাকাকাণ্ড—প্রধান উপদেষ্টাকে সনাতন জাগরণ মঞ্চের স্মারকলিপি
লিখিত বক্তব্যে চিন্ময় ব্রহ্মচারী বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, উপাসনালয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নজিরবিহীন হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, জায়গা-জমি দখল, লুটপাট, নিমর্ম নির্যাতন ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। অনেক নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে। এসব ন্যাক্কারজনক ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র বা সরকারকে কোনো দৃশ্যমান আইনি পদক্ষেপ নিতে আমরা দেখিনি। এখনও সারাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা প্রতিনিয়ত আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে।
তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করলাম, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে ৮ দফার যৌক্তিকতা স্বীকার করে এর সাথে সংহতি জানালেও সনাতনী সম্প্রদায়ের গত ২৫ অক্টোবর লালদীঘি ময়দানে শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং বহির্বিশ্বে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অশুভ উদ্দেশ্যে জাতীয় পতাকার অবমাননার কথিত অভিযোগে ৩০ অক্টোবর ১৯ জনের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়। সনাতন ধর্মের অনুসারীরা নিজের মাতৃভূমিকে মাতৃতুল্য রূপে শ্রদ্ধা করে। মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সঙ্গে সনাতনী সম্প্রদায়ের অসীম ত্যাগের ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা দেশকে মাতৃরূপে শ্রদ্ধা করি। এটি আমাদের ধর্মীয় শিক্ষা।
চিন্ময় ব্রহ্মচারী বলেন, সনাতন সম্প্রদায়ের চলমান ৮ দফা আন্দোলন ও আন্দোলনের সাথে যুক্ত সাধুসন্ত ও সংগঠকদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতিক্রিয়াশিীল অপশক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্নভাবে অপপ্রচার ও উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে। দুর্ভাগজনকভাবে ফেসবুকে সনাতন ধর্ম ও ইসকনের বিরুদ্ধে মানহানিকর ও কুরুচিপূর্ণ মিথ্যা অপপ্রচারের ঘটনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
আরও পড়ুন : চিন্ময় প্রভুর বক্তব্য ‘সুপার এডিট’, ক্ষুব্ধ সনাতনীরা, নিন্দা জানাল বড় সংগঠনগুলো
তিনি বলেন, আমরা কোনো অপরাধীর পক্ষে নই। হাজারী গলিতে সেদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর কোনো দুষ্কৃতিকারী যদি হামলা করে থাকে আমরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে শুধুমাত্র ধর্মীয় বিদ্বেষ এবং সনাতন সম্প্রদায়ের চলমান যৌক্তিক আন্দোলনকে নস্যাৎ করার অশুভ উদ্দেশ্যে এই মামলাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে নিরীহ হিন্দু জনগোষ্ঠীকে হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে বিশেষ কোনো গোষ্ঠী এই অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে।
এদিকে এদিন ৬ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। যার এক নম্বরেই রয়েছে আগের সেই ৮ দফা। দাবিগুলো হলো— অবিলম্বে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যৌক্তিক ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, ৫ নভেম্বর হাজারী গলির ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচারের স্বার্থে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন, একই ঘটনায় আটক ও নির্মম নির্যাতনের শিকার নিরীহ সনাতনীদের মুক্তি দিয়ে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, আটকদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিভিন্ন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করা, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে গভীর রাতে নিরীহ সনাতনীদের ওপর অন্যায়ভাবে নির্যাতন করা- অতিউৎসাহীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যৌক্তিক আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সাধু-সন্ত ও সংগঠকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন লীলারাজ গৌরদাস ব্রহ্মচারী, অজপানন্দ ব্রহ্মচারী, অক্ষরানন্দ পুরি মহারাজ, বীরেশ্বরানন্দ পুরী মহারাজ ও স্বতন্ত্র দাস ব্রহ্মচারী।
আলোকিত চট্টগ্রাম