‘প্রশাসক’ সুজনের অনিয়ম তদন্তে মাঠে নামছে সিটি করপোরেশন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের বিরুদ্ধে অনিয়মের ‘অভিযোগ’ খতিয়ে দেখতে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।

প্রশাসক হিসেবে ৬ মাস দায়িত্ব পালনকালে নগরে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে প্রশংসা কুড়ালেও চসিকের জায়গা ‘পানির দরে’ ঘনিষ্ঠজনদের ভাড়া ও ইজারা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ এপ্রিল নবনির্বাচিত পরিষদের তৃতীয় মাসিক সাধারণ সভায় তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার (২০ মে) তদন্ত কমিটির অনুমোদন দেন মেয়র।

জানা গেছে, সুজন দায়িত্বে থাকাকালীন চসিকের জায়গা ইজারা কিংবা ভাড়া দেওয়ার প্রক্রিয়া সঠিক ছিল কি-না সেটা খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি। রোববার (২৩ মে) এ বিষয়ে অফিস আদেশ দেওয়ার কথা রয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মু. মোজাম্মেল হক আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সম্প্রতি সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের জায়গা বরাদ্দসহ অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেবেন কমিটির সদস্যরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত কমিটিতে প্যানেল মেয়র-২ ও বাগমনিরাম ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. গিয়াস উদ্দিনকে আহবায়ক এবং প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলামকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- আইন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী বিপ্লব কুমার দাশ ও সহকারী এস্টেট অফিসার আবদুল্লা আল-মামুন।

ভাড়া ও ইজারা দেওয়া জায়গাগুলো সরেজমিন গিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দিবে তদন্ত কমিটি।

চসিকের প্রশাসক হিসেবে ২০২০ সালের ৬ আগস্ট থেকে টানা ৬ মাস দায়িত্ব পালন করেন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।

অভিযোগ ওঠে, নগরের বিভিন্ন এলাকায় ‘পানির দরে’ ১০ জনকে ১৭ হাজার ১৮৮ বর্গফুটের ১২টি জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার। এলাকাভেদে ১ টাকা ৮০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৫০ টাকা মাসিক ভাড়া ধার্য করা হয় এসব জায়গার।

যেসব জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে

পোর্ট কানেকটিং রোডের চৌ-রাস্তার উত্তর পাশে ৬০০ বর্গফুট খালি জায়গা মীর আহমেদকে এককালীন ৬ লাখ টাকায় বরাদ্দ দেওয়া হয়।

আকতার হোসেনকে মাসিক প্রতি বর্গফুট সাড়ে ৯ টাকা ভাড়ায় বিআরটিসি মার্কেট সংলগ্ন ভবঘুরে আশ্রয়কেন্দ্রের পাশে ২৮৯ বর্গফুট ভবনের একটি অংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়।

জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরীকে ৩ টাকা মাসিক ভাড়ায় দেওয়া হয় মাদারবাড়িতে একতলা ২০০ বর্গফুট ভবন।

৪০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস ভবনের উত্তরে ১ হাজার ৭৫৭ বর্গফুট খালি জায়গা প্রতি বর্গফুট ভাড়া ১০ টাকায় সমীর মহাজনকে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

খলিলুর রহমান নাহিদকে ইউনুছ মিয়া মেটারনিটি সংলগ্ন ১ হাজার ৬৪ বর্গফুট খালি জায়গা প্রতি বর্গফুট ৫ টাকায় এবং মাদারবাড়ি ওয়ার্ড অফিসের পাশে ৬ হাজার ৫৩৪ বর্গফুট জায়গা ১ টাকা ৮০ পয়সা করে দেওয়া হয়।

ঝুমুর সিনেমা হলের পাশে ৫৪০ বর্গফুট ৫ টাকা করে রাবেয়া বেগমকে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

কে সি দে রোডে গণশৌচাগারের পাশে ৩৭৬ বর্গফুট জায়গা প্রতি বর্গফুট ১০ টাকায় বরাদ্দ দেওয়া হয় জানে আলমকে।

আইএফআইসি ব্যাংকের প্রথম তলার ছাদের উপর ৩৯০ ফুট জায়গা মাসিক ৫ হাজার ৮৫০ টাকা ভাড়ায় শাহজাহান চৌধুরীকে ভাড়া দেওয়া হয়।

এছাড়া শাহ আমানত মার্কেটে ১৫৩ বর্গফুট জায়গা মাসিক ২ হাজার ২৯৫ টাকায় এক ব্যক্তিকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, আমি কোনো অনিয়ম করিনি। এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই, আপনারা আপনাদের ইচ্ছেমত লিখেন।

ডিসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!