বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসির) টাকা মেরে পালিয়ে গেছে এক নারীসহ কৃষি ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা। ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৪৭২ টাকা আত্মসাতের দায়ে ইতোমধ্যে তিনজনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাদের ১২ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় খালাস পেয়েছেন তিন আসামি।
মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আব্দুল মজিদের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ড পাওয়া মীর কাশেম চন্দনাইশ কাঞ্চননগর এলাকার সৈয়দ মেয়ার ছেলে। তিনি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কমাকর্তা। তাঁকে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একইসঙ্গে দণ্ডবিধির ৪৬৮/৪৭১ ধারায় তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরাধ আইনের ৫(২) ধারায় এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত।
দণ্ড পাওয়া শাহেদ হাসান কুমিল্লার কোতোয়ালী থানা এলাকার ঠাকুরপাড়া বাগানবাড়ি পান্থ নিবাসের মৃত মো. ইব্রাহিম মজুমদারের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম নগরের কৃষি ব্যাংক বায়েজিদ চা বোর্ড শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক। তাঁকে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড; দণ্ডবিধির ৪৬৮/৪৭১ ধারায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরাধ আইনের ৫(২) ধারায় দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত।
দণ্ড পাওয়া রেজিয়া সুলতানা শাহেদ হাসানের স্ত্রী। তাঁকে দণ্ড বিধির ৪০৯ ধারায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড; দণ্ডবিধির ৪৬৮/৪৭১ ধারায় তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। আদালত।
এছাড়া খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন— একেএম নাজিম উদ্দিন, শওকত হাসান প্রকাশ শামিম ও মো. ইব্রাহিম।
দুর্নীতি দমন কমিশনের পিপি আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের নামে ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৪৭২ টাকা আত্মাসাতের দায়ে কৃষি ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা ও এক কর্মকর্তার স্ত্রীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডসহ ১২ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। রায়ের পর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী রেজাউল করিম চৌধুরী।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৩ সালের ২৬ জুন বিপিসির নামে ভুয়া এফডিআর খুলেন আসামিরা। এই অ্যাকাউন্টের চেক বই নিজেদের কাছে রেখে একই বছরের ১৭ জুলাই পর্যন্ত বিপিসির কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ১০টি চেকের মাধ্যমে ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৪৭২ টাকা আত্মসাৎ করে।
এ ঘটনায় কৃষি ব্যাংক বায়েজিদ চা বোর্ড শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক আকিকুর রহমান চৌধুরী বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয়— শাহেদ হাসান, মীর কাশেম ও এম আনোয়ারুল আজিমকে।
মামলা তদন্ত করে সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মো. আব্দুল খালেক সাতজনের নাম উল্লেখ করে আদালতে চার্জশিট দেন। এতে সাক্ষী রাখা হয় ৩৫ জনকে। এর মধ্যে ১৫ জন সাক্ষ্য দেন।
আরএস/এসআই