পাঁচলাইশে ওসি—ভূমিদস্যু ‘একজোট’ গৃহবধূর জায়গা দখলে, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞায় ‘বৃদ্ধাঙ্গুলি’
ওসিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গেল সিএমপিতে, দায়মুক্তি পেতে ওসির কাণ্ড—৩০ লোক জড়ো করে সাজানো 'মানববন্ধন'
চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশে অসহায় এক গৃহবধূর জায়গা দখলে উঠেপড়ে লেগেছে ভূমিদস্যু চক্র। অভিযোগ রয়েছে, দুষ্ট সেই চক্রকে সহায়তা করছে পুলিশ। হাইকোর্টের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিষেধাজ্ঞার জমিতে বালু ভরাট হচ্ছে খোদ পাঁচলাইশ থানার ওসির ইশারায়!
এদিকে এ ঘটনায় গত ১৮ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী নারী চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার বরাবরে ওসি, এএসআইসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন।
অভিযুক্তরা হলেন— হামজারবাগ রেল গেট এলাকার মৃত রব্বত আলীর ছেলে শাহেদ আলী রানা ও তালেব আলী, বিবিরহাট বড় বাড়ির মৃত কালা মিয়া কন্ট্রাক্টরের ছেলে আবু হায়দার, নাজিরপাড়ার মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে মো. জসিম উদ্দিন, হামজারবাগ রেল গেট এলাকার আবদুর সালামের ছেলে খোরশেদ আলম জনি, পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন মজুমদার এবং পাঁচলাইশ থানার এএসআই মো. ইলিয়াছ।
হামজা খাঁ লেনের শাহ আমানত আবাসিক এলাকার বাসিন্দা রীনা আক্তার এ অভিযোগ করেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনারের কাছে। লিখিত অভিযোগের ১০ দিনেও মেলেনি কোন সুরাহা।
বরং অভিযোগের খবর পেয়ে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদার নিজেই গৃহবধূ রীনা আকতারকে ফোন করে সিএমপি কমিশনারের কাছে তার বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ করেছেন, জানতে চান। এছাড়া ফোনের পরদিন ২১ ডিসেম্বর গৃহবধূকে থানায়ও আসতে বলেন তিনি।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ ডিসেম্বর রাত সোয়া ১২টার দিকে অভিযুক্ত প্রথম পাঁচ ব্যক্তি উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমিতে বালু ফেলতে দুট্রাক বালু আনেন। বাধা দিলে তারা অভিযোগকারী ও তার স্বামীকে প্রাণনাশের হুমকি দেন।
পরে বাদীর স্বামী ৯৯৯-এ ফোন দিলে কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে আসেন পাঁচলাইশ থানার এএসআই মো. ইলিয়াছ। তাঁকে ওইসময় উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও জায়গা কেনার দলিল দেখান বাদী রীনা আক্তার। পরে পুলিশের সামনেই অভিযুক্তরা তাদের ওপর চড়াও হন।
আরও পড়ুন: রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ও কর্মচারী ইউনিয়নের সমাবেশে ৯ দাবি
এরপর পাঁচলাইশ থানার ওসিকে রাত আনুমানিক ১টার পর হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দিলে তিনি এসআই মামুনকে ঘটনাস্থলে পাঠান। তাকেও কাগজপত্র দেখান রীনা আক্তার। এরপর পুলিশ দুপক্ষকে সরে যেতে এবং কাজ বন্ধ রাখতে বলেন। পুলিশ যাওয়ার ১৫ মিনিট পর আবারও বালুভর্তি ট্রাক নিয়ে আসা হয়।
অভিযোগে রীনা আক্তার আরও উল্লেখ করেন, বালুভর্তি ট্রাক আসলে আমরা আবারও এএসআই ইলিয়াছকে ফোন দিই। কিন্তু তিনি বিষয়টি এসআই মামুনকে জানাতে বলেন। এ সময় মামুনকে ফোন দিলে তিনি বিষয়টির দায়িত্ব এএসআই ইলিয়াছকে দেওয়া হয়েছে বলে জানান। ততক্ষণে দুট্রাক বালু ফেলে চলে যায় অভিযুক্তরা। এরপর আরও দুট্রাক বালু আনা হয়। এ সময় আবারও ৯৯৯-এ ফোন দিলে এএসআই ইলিয়াছ এসে ঘটনাস্থলে অভিযুক্তদের কিছু না বলে উল্টো আমাদের বাসায় চলে যেতে বলেন। বালু ফেলায় বাধা দিলে গ্রেপ্তার করতে ওসির ‘নির্দেশনা’ রয়েছে বলে জানান এএসআই ইলিয়াছ।
এরপর এএসআই ইলিয়াছ বালুভর্তি ট্রাক, জমির ছবি এবং ভিডিও নেন।
অভিযোগে রীনা উল্লেখ করেন, এরপর আরও দুটি বালুভর্তি ট্রাক এলে আমরা আবারও এএসআই ইলিয়াছকে ফোন দিই। কিন্তু তিনি তখন ফোন রিসিভ করেননি। এর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে টহল গাড়িসহ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ইলিয়াছকে। এ সময় তার কাছে গেলে তিনি নানা বাহানায় সময়ক্ষেপণ করেন। পরে ওই বালুভর্তি ট্রাকও বালু ফেলে চলে যাওয়ার সময় এএসআই ইলিয়াছ ঘটনাস্থলে যান। তখন তিনি অভিযুক্তদের কাউকে কিছু বলেননি। ইলিয়াছ আমাদের বাসায় চলে যেতে বলেন।
‘এমনকি বালু ফেলায় বাধা দিলে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলের ঘানি টানানোর হুমকিও দেন এসআই ইলিয়াছ। তিনি বলেন, এ বিষয়ে ওসির নির্দেশনা আছে।’
এ ঘটনার সম্পূর্ণ ভিডিও ধারণ আছে বলে অভিযোগে জানান রীনা আক্তার।
থানা সূত্রে জানা গেছে, সিএমপিতে অভিযোগের বিষয়টি পাঁচলাইশ থানার ওসি ২০ ডিসেম্বর জানতে পারেন। এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে থানায় বৈঠক বসেন গত ২১ ডিসেম্বর। এ সময় ওসি নিজের দায়মুক্তি জন্য জায়গার মালিক রীনা আক্তার ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে মানববন্ধনের ‘নির্দেশ’ দেন।
স্থানীয়রা জানান, গত ২৩ ডিসেম্বর মাত্র ৩০ নারী-পুরুষ-শিশু জড়ো করে একটা ‘হাস্যকর’ মানববন্ধন দেখিয়ে তৃপ্তি মেটান পাঁচলাইশের ওসি নিজাম। অথচ এর আগে ওসি নিজেই ভূমিদস্যুদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে দাবি করে আসছেন, এই আবাসিকে ২ হাজার পরিবারের বসবাস।
আলোকিত চট্টগ্রাম