পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতকে দুটি জোনে ভাগ করে ২৫ বছরের জন্য বাণিজ্যিকভাবে ইজারা দিতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। পর্যটক ও সাধারণ জনগণের অধিকার হরণের এমন চেষ্টার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম।
শনিবার (১৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সুলতান আহমদ মিলনায়তনে এই প্রতিবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এ সময় সংগঠন সভাপতি ও ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেকান্দার খান বলেন, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত জনগণের সম্পদ। সেটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সরকারের। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জনগণের অধিকার হরণ করে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত বাণিজ্যিকভাবে ইজারা দিতে পারে না। ইজারা দিয়ে জনগণের প্রবেশাধিকার রুদ্ধ করা যাবে না।
আরও পড়ুন: পতেঙ্গায় ইজিবাইক ঘিরে চাঁদাবাজি, গিলছে বিদ্যুৎ—রাস্তায় নামলেই চাঁদা
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সহসভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া। তিনি বলেন, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত সংলগ্ন ৭ কিলোমিটার পরিসরের ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার পরিসরকে পর্যটন জোন-১ এবং পর্যটন জোন-২ হিসেবে ভাগ করে টেন্ডারের মাধ্যমে ২৫ বছরের জন্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ইজারা দিতে যাচ্ছে চউক। এছাড়া যেকোনো উন্নতমানের নগরীতে সর্বশ্রেণির মানুষের অবকাশ ও বিনোদনের জন্য খেলার মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত পরিসরের নেটওয়ার্ক থাকে। চট্টগ্রাম নগরে তার সিকিভাগও নেই। নানান উপায়ে তাতে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার সীমিত বা বন্ধ করা হয়েছে। অথচ বর্তমানে উন্নত বিশ্বের পরিশীলিত নগরগুলোতে উন্মুক্ত পরিসর বৃদ্ধির জন্য রীতিমত প্রতিযোগিতা চলছে। ব্যক্তিগত খাতে ইজারা দিয়ে বিস্তৃত সৈকত বা নদী তীরে প্রবেশ মূল্যের বিনিময়ে কোথাও প্রবেশের অধিকার হরণ করা হয়েছে এমন তথ্য আমাদের জানা নাই।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নগরের উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা এবং বিস্তৃত অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) পতেঙ্গা সৈকতকে পাবলিক ওপেন স্পেস বা সর্বজনের উন্মুক্ত পরিসর হিসেবে সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। ঢাকায় তুরাগ নদীর দখল ও দূষণ নিয়ে করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, সকল উন্মুক্ত জলাভূমি, সমুদ্রসৈকত, নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওর, বিল, নদীর পাড়, পাহাড়-পর্বত, টিলা, বন ইত্যাদি কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানিকে বাণিজ্যিকভাবে ইজারা দেওয়া চলবে না মর্মে হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। কার্যত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কোনো স্থান আইনগতভাবে ইজারা দেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে না।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি বিপুল ব্যয়ে আউটার রিং রোড নির্মাণের পর পর্যটনের যে ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই ক্ষতি এড়ানোর লক্ষ্যে রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিকভাবে ব্যক্তি পর্যায়ে লিজ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের মতো একটি সর্বজনীন উন্মুক্ত পরিসরে ভ্রমণ পিপাসুদের আগমন উন্মুক্ত রেখেও বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব। সৈকতে আগতদের বিনোদন ও অবসরের পরিপ্রেক্ষিতে জলযান ভ্রমণ, ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট, হরেক রকমের দোকান, খেলার ব্যবস্থা ইত্যাদি নির্মাণ করে চউকের নিয়ন্ত্রণাধীনে রেখে এসব পরিচালনার সুযোগ লাভ ও ব্যক্তিগত খাতে ইজারা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। যাতে বিনিয়োগকারী কর্তৃক নিরাপত্তাসহ ভ্রমণকারীদের সকল সুবিধা নিশ্চিত করে সহজেই মুনাফা উঠিয়ে আনা যায়। আমরা চউককে সেই পথে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তাছাড়া কোনো স্থাপনা বা এলাকার সংরক্ষণ ব্যয় সংস্থানের জন্য কেবল সেই স্থাপনা বা এলাকাকে বেসরকারি পর্যায়ে লিজ দেওয়া একমাত্র সমাধান নয়। এই কথাটি নীতি নির্ধারকদের বিবেচনায় আসতে হবে। যেকোনো শর্তেই লিজ দেওয়া হোক না কেন চূড়ান্ত বিচারে তা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়। সৃজনশীল চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির সহায়তা গ্রহণ করে জনকল্যাণমুখী বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার বিষয়ে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম পরামর্শ প্রদান করছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি আহমেদ জিন্নুর চৌধুরী, প্রকৌশলী এবিএম এ বাসেত ও সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাসলিমা মুনা।