নগর আওয়ামী লীগ: কেন্দ্রের চোখ তৃণমূলে, হঠাৎ গুরুত্বপূর্ণ ‘ডিসেম্বর’

চলতি বছরের ডিসেম্বরের আগেই চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের প্রতিটি ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে সম্মেলন চান কেন্দ্রীয় নেতারা। এরপর ডিসেম্বরে জেলা পর্যায়ে সম্মেলনের পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।

নেতৃবৃন্দ বলছেন, সংগঠনের কাজে গতি আনতে প্রতি তিন বছর পরপর সম্মেলনের বিকল্প নেই। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে, অনেকক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২০ বছর পরও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্মেলন হচ্ছে না। এতে দলের সাংগঠনিক কাজে গতি কমে যাচ্ছে। যোগ্য নেতারা পদ পাচ্ছেন না। মূল্যায়ন হচ্ছে না ত্যাগী নেতাদের।

কেউ নতুন করে কমিটিতে আসতে চাইছেন, কারও লক্ষ্য আরও বড় পদে যাওয়া। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন থেকে মূল দলে আসতে চাওয়া নেতাদের তালিকাও ছোট নয়। কিন্তু সম্মেলন না হওয়ায় হচ্ছে না কোনোটাই। এসব কারণে দলের তৃণমূল পর্যায়ে চাপা ক্ষোভ ও অন্তর্কোন্দলের সৃষ্টি হচ্ছে।

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনেও চিত্রটা প্রায় অভিন্ন। নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে অনেক বছর, বর্তমানে সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির নেতৃত্বে।

দীর্ঘদিন সম্মেলন হচ্ছে না নগর ছাত্রলীগ এবং যুবলীগেরও। ছাত্রলীগের নেতাদের ছাত্রত্ব নিয়ে প্রশ্ন আছে। অন্যদিকে যুবলীগ চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। তবে দীর্ঘদিনের ‘অচলাবস্থা’ কাটিয়ে ১৯ জুন সম্মেলন হয়েছে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়নি কমিটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এসব বিষয় মাথায় রেখেই সংগঠনকে তৃণমূল পর্যায়ে আরও শক্তিশালী করতে মাঠে নেমেছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। ধারাবাহিকভাবে কথা হচ্ছে চট্টগ্রামের তিন সাংগঠনিক জেলার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে।

ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এসময় দক্ষিণ জেলার নেতাদের বক্তব্য শুনেন দলের শীর্ষ নেতারা। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বেশকিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়।

এর ধারাবাহিকতায় রোববার (২০ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে কেন্দ্রীয় নেতারা কথা বলেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে। এসময় চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলার একাধিক সাংসদ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে, সংগঠনে যোগ্য নেতৃত্বকে সামনে নিয়ে আসা ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়নের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এজন্য চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নগর আওয়ামী লীগের প্রতিটি ইউনিট, ওয়ার্ড এবং থানা পর্যায়ে সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি বলেন, ক্ষমতায় আছি বলে সংগঠনের প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাচ্ছে না। সংগঠনের যে কার্যপদ্ধতি, সেটাও কোনোরকমে চলছে। অনেক জেলায় দেখেছি ১৫-২০ বছর হয়ে গেছে, কমিটির কোনো পরিবর্তন নেই।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরের প্রতিটি ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানার সম্মেলন আমরা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে করতে চাই। সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনে গতিশীলতা আসবে। যারা যথাযথ মূল্যায়ন বা পদোন্নতি পাননি, তারা এতে মূল্যায়ন পাবেন।

সংগঠনকে শক্তিশালী করতে প্রতি তিন বছর পরপর সম্মেলনের ওপর গুরুত্বারোপ করে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর মূল লক্ষ্য হচ্ছে সংগঠনকে শক্তিশালী করা। যারা কর্মঠ ও যোগ্য, তাদের নেতৃত্বে নিয়ে আসা। যারা দুর্বল বা কাজ করতে যাদের আগ্রহ নেই, তাদের ধীরে ধীরে পেছনের কাতারে নিয়ে যাওয়া।

চট্টগ্রামের অনেক নেতার কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা রয়েছে। কিন্তু আপনাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা বা নিষ্ক্রিয়তার কারণে মূল্যায়ন হচ্ছে না। প্রতি তিন বছর পরপর সম্মেলন হলে যোগ্য নেতৃত্ব চলে আসবে— যোগ করেন তিনি।

বৈঠকে উপস্থিত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, আজকের (রোববার) সভায় সাংগঠনিক কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে বৈঠকের মূল বিষয় ছিল নগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিটের সম্মেলন।

তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা পর্যায়ের সম্মেলন চায় কেন্দ্র। এর আগে নগর আওয়ামী লীগের প্রতিটি ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানার সম্মেলন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, হুইপ আবু সাঈদ মাহমুদ আল স্বপন, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং সাংসদ দিদারুল আলম।

জেডএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!