প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন কোনো কাজ কেউ করবেন না। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কেউ সমাজে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করলে আমরা তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবো।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, ছয় বিশিষ্ট নাগরিককে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা সংস্কারে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন সরফরাজ চৌধুরী, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে শাহদীন মালিক দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি জানান, কমিশনের অন্য সদস্যদের নাম প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। কমিশনগুলোর সভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ছাত্র, শ্রমিক, জনতা আন্দোলনের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
আরও পড়ুন : হুমকি—হামলার প্রবণতা থেকে বের হয়ে ধৈর্য ধরার আহ্বান নোবেলজয়ী ইউনূসের
কমিশন পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ আগামী ১ অক্টোবর থেকে শুরু করতে পারবে বলে আশা করছি এবং পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে এটি সম্পন্ন হবে বলে আমরা ধারণা করছি। কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শসভার আয়োজন করবে সরকার। চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাত্র সমাজ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে তিন থেকে সাত দিনব্যাপী একটি পরামর্শসভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। এতে এই রূপরেখা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তার একটি ধারণাও দেওয়া হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা সংস্কার চাই। একান্ত অনুরোধ, আমাদের ওপর যে সংস্কারের গুরু-দায়িত্ব দিয়েছেন, সেই দায়িত্ব দিয়ে আপনারা দর্শকের গ্যালারিতে চলে যাবেন না। আমাদের সঙ্গে থাকুন আপনারা। আমরা একসঙ্গে সংস্কার করবো। এটা আমাদের সবার দায়িত্ব। আপনারা নিজ নিজ জগতে সংস্কার আনুন। একটা জাতির সংস্কার শুধু সরকারের সংস্কার হলে হয় না।
সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ বিদ্যমান সব কালো আইন বাতিল ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন করা হবে জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা সবাইকে বলে দিয়েছি, আপনারা মন খুলে আমাদের সমালোচনা করেন। মিডিয়া যাতে কোনোরকম বাধা-বিপত্তি ছাড়া নির্বিঘ্নে তাদের কাজ করতে পারে সেজন্য একটি মিডিয়া কমিশন গঠন করা সরকারের বিবেচনাধীন। আর যেসব কমিশন সরকারসহ অন্য সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারে, আমরা তাদের পুনর্গঠন ও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি যাতে তারা আরও শক্তিশালী হয়, জনকল্যাণে কাজ করে।
গণ-অভ্যুত্থানে সকল শহিদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আহত সকল শিক্ষার্থী, শ্রমিক, জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে। আহতদের দীর্ঘমেয়াদি এবং ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং শহিদদের পরিবারের দেখাশোনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন নতুন তথ্য পাওয়ার ভিত্তিতে এই তালিকা হালনাগাদ করা হবে।
দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, আমাদের সামনে অনেক কাজ। আমাদের কাজ বড় কঠিন। কিন্তু জাতি হিসেবে আমাদের এবার ব্যর্থ হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। সফল হতেই হবে আমাদের। আর এই সাফল্য আপনাদের কারণেই আসবে। আপনার সহযোগিতার কারণে আসবে। আপনার-আমার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করা হবে আমাদের কাজ।
আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম