পটিয়ায় রাতের আঁধারে দখল হয়ে যাচ্ছে রেলের জমি

চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইনের পটিয়া অংশের জমি রাতের আঁধারে প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে। দখল হওয়া জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্থাপনাসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এতে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন দখলদারসহ রেলওয়ের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী। দখল বাণিজ্যের কারণে রেলওয়ের প্রকৌশল এবং এস্টেট বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীলতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনবল ও অর্থ সংকটের কারণে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রেলের অরক্ষিত ভূমি অবৈধ দখলকে কেন্দ্র করে অনেক অপরাধী চক্র সক্রিয়। এছাড়া সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, অস্ত্রধারী, মাদকসেবীদের নিরাপদ আস্তানা হয়ে উঠেছে রেলের ভূমি।

রেলওয়ের প্রকৌশল বিধি মতে, রেলপথের দুধারে ১৪ দশমিক ৩ ফুট এবং সর্বোচ্চ ৩০ ফুট জায়গা খালি রাখতে হয় নিরাপদ দূরত্বের জন্য। এই সীমানার মধ্যে কোনো স্থাপনা তৈরি করলে বিনা নোটিশে সেসব স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়ার বিধান রয়েছে। অথচ চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথের পটিয়া অংশের দুপাশ ঘেঁষে শত শত স্থাপনা হলেও এসব উচ্ছেদে গরজ নেই সংশ্লিষ্ট কারো।

আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে রেলের জায়গায় জমিদারি—চাঁদা না পেয়ে ছুরি মেরে যুবক খুন

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বেদখল জমি উদ্ধারে রেলের বিভাগীয় এস্টেট অফিসার, সহকারী এস্টেট অফিসার, সার্কেল অফিসার কানুনগো রয়েছেন। রেলভূমি রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত রয়েছে প্রকৌশল বিভাগ। এরপরও প্রতিনিয়ত বেদখল হচ্ছে ভূমি। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে রেল কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন ।

এদিকে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে রেল মন্ত্রণালয় বহুবার নির্দেশ দিলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। উচ্ছেদ অভিযানের নামে কেবল হয়েছে নাটক। রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগ অবৈধ দখল বিষয়ে ভূ-সম্পত্তি বিভাগকে অবহিত করলে তখন অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু ভূ-সম্পত্তি বিভাগে জনবল সংকটের পাশাপাশি রয়েছে অর্থ সংকট। দুসংকটের কারণে বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযানে স্থবিরতা বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ইশরাত জাহান বলেন, অর্থ এবং জনবল সংকটে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। মাত্র ২৮ জন লোক রয়েছে আমাদের বিভাগে। এদের মধ্যে তিনজন অবসরে চলে গেছেন। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে নতুন নিয়োগ বন্ধ থাকায় মাঠ পর্যায়ে কোনো লোক নেই।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক (পূর্ব) সরদার শাহাদাত আলী বলেন, রেলের ভূমি কেউ বেদখল করে নিলে তা জানানোর দায়িত্ব স্টেশন মাস্টারের। পটিয়ায় রেলের ভূমি অবৈধ দখলে থাকলে সেটি ভূ-সম্পত্তি বিভাগকে জানানো হতো দখলমুক্ত করতে। তবে এ বিষয়ে স্টেশন মাস্টার আমাকে কিছু জানাননি।

এ বিষয়ে জানতে স্টেশন মাস্টার নেজাম উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সহকারী স্টেশন মাস্টার শামসুন্নাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রেলের জায়গায় যেকোনো স্থাপনা নির্মাণ অবৈধ। তবে রাতের আঁধারে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে জনভোগান্তি তৈরি করা হচ্ছে। আমরা এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও পুনরায় আবার দখল হয়ে যায়।

রেলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দখলদারদের আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

আরবি/আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm