রেজাউল করিম রেজার (৩১) সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় থেকে প্রেম। এরপর তাকে বিয়ে করেন রাজধানীর চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকা (২৭)। দুবছরের মাথায় স্বামীর বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক শোধরাতে গিয়ে রাজধানীর পান্থপথের ফ্যামিলি অ্যাপার্টমেন্টে খুন হন জান্নাতুল।
ধরা পড়ার ভয়ে রেজা পালিয়ে আসেন চট্টগ্রামে। নগরের মুরাদপুরে গা ঢাকা দেন তিনি। কিন্তু র্যাবের জালে ধরা পড়ে শেষ রক্ষা হলো না তার।
আরও পড়ুন:চিকিৎসার আড়ালে নারী রোগীর শ্লীলতাহানি করেন পল্লী ডাক্তার জাহিদুল
শুক্রবার (১২ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব কথা বলেন।
গ্রেপ্তার রেজাউল করিম রেজা কক্সবাজার সদরের মৃত নবী হোসাইনের ছেলে। তিনি ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ-এমবিএ সম্পন্ন করেন। এমবিএ চলাকালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে ২০২২ সালের জুনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে যোগ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন র্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নুরুল আবছার। তিনি জানান, ২০১৯ সালে ফেসবুকে পরিচয়ের পর প্রেম। ২০২০ সালের অক্টোবরে পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেন। কিন্তু স্বামী রেজাউলের একাধিক নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারায় তাদের মধ্যে মনোমালিন্য ও বাগবিতণ্ডা হয়। অন্য নারীদের সঙ্গ নিশ্চিত করতে স্ত্রী জান্নাতুলকে খুনের পরিকল্পনা করেন রেজাউল।
রেজাউলের দেওয়া তথ্যমতে, স্ত্রী জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকাকে (২৭) খুনের উদ্দেশ্যে বেশ কিছুদিন ব্যাগে ধারালো অস্ত্র বহন করছিলেন তিনি। ১২ আগস্ট (শুক্রবার) স্ত্রীর জন্মদিন পালনের উদ্দেশ্যে ১০ (বুধবার) আগস্ট স্ত্রীসহ রাজধানীর পান্থপথের ফ্যামিলি অ্যাপার্টমেন্ট নামের একটি আবাসিক হোটেলে যান। সেখানে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি, বাগবিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সঙ্গে রাখা সেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে ছুরিকাঘাত ও গলা কেটে খুন করেন স্ত্রীকে। খুন করার পর রেজাউল গোসল করে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যান।
একইদিন (১০ আগস্ট) রাতে ঘটনাস্থল থেকে নারী চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সুরতহাল প্রতিবেদন অনুযায়ী, শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও জখমের চিহ্ন ছিল। একইদিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে রাজধানীর কলাবাগান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
নারী চিকিৎসক হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র্যাব। ১১ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব- ২ এবং র্যাব-৭ এর যৌথ অভিযানে চট্টগ্রামের মুরাদপুর থেকে আসামি রেজাউল করিম রেজাকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের সময় রেজাউলের রক্তমাখা গেঞ্জি, মোবাইল, ব্যবহৃত ব্যাগ এবং ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার রেজাউল খুনের দায় স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, পরিবারের অগোচরে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে আবাসিক হোটেলে অবস্থান করতেন। কিন্তু অন্য নারীর সঙ্গে রেজাউলের সম্পর্কের বিষয়টি আড়াল করতে ও স্ত্রীকে পথের কাঁটা ভেবে খুন করেন তিনি। সেদিন বাকবিতণ্ডা হলে রেজাউল ব্যাগ থেকে ধারালো ছুরি বের করে স্ত্রী জান্নাতুলকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। হোটেল থেকে বেরিয়ে মালিবাগে নিজের বাসা থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে যান তিনি। পরে একটি হাসপাতালে তার নিজের হাতের ক্ষত স্থান সেলাই করান এবং প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। পরে আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে চেপে চট্টগ্রামে এসে মুরাদপুর আত্মগোপন করেন।
তিনি আরও জানান, কীভাবে এই খুনের দায় থেকে বাঁচা যায় এ নিয়ে আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগও করেন তিনি।
আরএস/এসআর