ট্রলারেই পচছে টনে টনে পেঁয়াজ—আধুনিক সুবিধার অভাব, নাকি বাড়তি টাকার লোভ

দেশে সঙ্কট মোকাবেলায় মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিনই টেকনাফ স্থলবন্দরে পেঁয়াজভর্তি জাহাজ এবং ট্রলার ভিড়ছে। কিন্ত খালাসের আগে টেকনাফ বন্দরে ট্রলারেই পচে যাচ্ছে মিয়ানমারের পেঁয়াজ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর থেকে দেশের বাজারে সংকট দেখা দেয়। এর ফলে পেঁয়াজের দর দ্রুত বাড়তে থাকে। এ সময়ে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা।

প্রথমদিকে পেঁয়াজের চালান দ্রুত দেশের অভ্যন্তরীন বাজারে সরবরাহ করা হলেও এখন শ্রমিক সংকট ও একটি জেটি দিয়ে আমদানি-রপ্তানির মালামাল লোড আনলোডের কারণে সময় বেশি লাগছে। ফলে শত শত বস্তা পেঁয়াজ ট্রলারেই পচে যাচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

আরও পড়ুন: পেঁয়াজের দাম—পাইকারিতে কমছে, খুচরা বাজারে আগুন

টেকনাফ স্থল বন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, দেশের স্বার্থে সঙ্কট মোকাবেলায় ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানি বাড়াতে আরও উৎসাহিত করা হচ্ছে। সরকার পেঁয়াজ আমদানিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু টেকনাফ স্থলবন্দরে পচনশীল এই পণ্য ট্রলার থেকে খালাসে যে ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকা প্রয়োজন তার কোনোটিই নেই।

ব্যবসায়ীরা জানান, পর্যাপ্ত জেটি ও শ্রমিকের অভাবে মূলত ট্রলার থেকে পেঁয়াজ খালাস করতে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে বন্দরে নোঙর করার তিন থেকে চারদিন পেরিয়ে গেলেও ট্রলার থেকে পেঁয়াজ খালাস করা যাচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পচা পেঁয়াজের গন্ধে বন্দরের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। খালাসের অপেক্ষায় বন্দরে প্রায় ৩০টি পেঁয়াজবাহী ট্রলার নোঙর করা রয়েছে। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় আমদানি করা পেঁয়াজ খালাসের আগেই ট্রলারে পচে যাচ্ছে। এরই মধ্যে কিছু পেঁয়াজ ট্রাকে করে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ৫ দিনের ব্যবধানে আবারও টেকনাফে বাচ্চা হাতির মৃত্যু

আমদানিকারক মো. সজিব বলেন, খালাস করতে দেরি হওয়ার কারণে আমদানি করা প্রায় ৩০০ বস্তা পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন সেগুলো থেকে ভালো পেঁয়াজ বাছাই করে কোনোরকমে লোকসান কমানোর চেষ্টায় আছি। একইভাবে অন্য ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে খালাসে দেরি হওয়ার কারণে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, খালাসে দেরি করার পেছনে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অসৎ উদ্দেশ্যও রয়েছে। সময় নষ্ট করে ট্রাকে লোড করা পণ্য বিকেল ৫টার পর স্কেলে তোলা গেলে একেকটি ট্রাক থেকে নাইটচার্জ হিসেবে বন্দরের অতিরিক্ত আয় হয় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার মতো। আবার রাতের শ্রমিকদের দিতে হয় অতিরিক্ত চার্জ। এটাও দেরি করার অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন ওই ব্যবসায়ী।

টেকনাফ স্থলবন্দরের ব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিনের কাছে জেটি ও শ্রমিক সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তবে তিনি জানান, কচ্ছপ গতিতে হলেও পেঁয়াজ খালাস করা হচ্ছে।

তিন থেকে চারদিন পর্যন্ত ট্রলার নোঙর করে থাকলেও কেন খালাস হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমদানির ঘোষণাপত্রসহ (আইজিএম) অন্যান্য ডকুমেন্ট জমা দিতে না পারায় খালাস করতে দেরি হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ভোগ্যপণ্যে আগুনের আঁচ টিসিবিতেও—বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ডাল-তেল

যোগাযোগ করা হলে টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামূল হক বাহাদুর বলেন, জাহাজ বন্দরে নোঙর করার সঙ্গে সঙ্গেই আইজিএম জমা দেওয়া হয়। কাঁচা পণ্য হিসেবে যত দ্রুত পেঁয়াজ খালাস করার কথা বন্দর কর্তৃপক্ষ শত চেষ্টা চালিয়ে গেলেও তাদের সেই সামর্থ্য না থাকায় তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। ফলে পেঁয়াজের মতো বাজার অস্থিতিশীল করা পণ্য পচে যাচ্ছে ট্রলারেই। এতে ব্যবসায়ীরা লোকসানের শিকার হচ্ছেন।

এসি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!