‘হাসপাতালবিরোধী আন্দোলনে’ এবার জুতার বাড়ির ‘বাড়াবাড়ি’—হঠাৎ সুর বদল সুজনের

খোরশেদ আলম সুজনের সমাবেশের ব্যানারে লেখা ছিল— চাটগাঁবাসীর একটি আশা, সিআরবিতে থাকবে শুধু পাখির বাসা। হাসপাতালের দোকানদারী, নষ্ট লোকের পকেট ভারি। জেগেছে আজ চাটগাঁবাসী, দেবে তাদের জুতার বাড়ি।’

আবার বৃহস্পতিবার রাত ১টার পর নিজের ফেসবুক পেজে এই লেখাটি লিফলেট আকারে দেয়ালে লাগানোর একটি ছবিও পোস্ট করেন তিনি।

জুতার বাড়ি নিয়ে আন্দোলনের বদলে চলছে বাড়াবাড়ি

অশালীন শব্দ গাঁথুনিতে সিআরবিতে হাসপাতাল সমর্থনকারীদের এমন অশালীন ইঙ্গিতকে শিষ্টাচারপরিপন্থী হিসেবে দেখছেন খোদ রাজনীতিবিদরা। ফেসবুকজুড়ে চলছে নিন্দা ও বিরূপ মন্তব্যের ঝড়। তাঁরা সবাই দুষছেন আওয়ামী লীগ নেতা খোরশেদ আলম সুজনকে।

তবে সুজন এ বিষয়ে হঠাৎ সুর পাল্টালেন। বললেন— ‘জুতার বাড়ি’ তার কথা না, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। হয়ত কোনো সমর্থক কিংবা অনুসারীর হতে পারে।

অশালীন সেই ব্যানারের সামনেই আপনি (সুজন) বক্তব্য দিয়েছেন— প্রতিবেদকের এমন কথায় কোনো মন্তব্য করেননি খোরশেদ আলম সুজন। তিনি উল্টো প্রতিবেদককে প্রশ্ন করেন, আপনারা আমার পেছনে লাগছেন কেন?

আরও পড়ুন: ‘গাছের সঙ্গে নিষ্ঠুরতা’—পেরেক ঠুকে সিআরবিতে ‘পরিবেশ’ আন্দোলন সুজনের

পথে পথে অশালীন শব্দে পোস্টার

সিআরবি রক্ষা কিংবা হাসপাতালবিরোধী আন্দোলনের নামে অশালীন শব্দে পোস্টার-ব্যানার ছেয়ে গেছে সিআরবির পথে পথে। আওয়ামী লীগ নেতা খোরশেদ আলম সুজনের এসব অশালীন শব্দের ব্যবহারকে শিষ্টাচারপরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। এ নিয়ে বুধবার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় চলছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, শিষ্টাচারপরিপন্থী কোনো বক্তব্য কিংবা পোস্টার-ব্যানারে শব্দ প্রয়োগ সমুচিত না। আমরা তো সবসময় আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলাম। এ ধরনের শব্দ প্রয়োগের কোনো নজির নেই। সমালোচনারও স্তর আছে। শালীনতার মধ্যেই সমালোচনা করা উচিত।

কী বলেছিলেন সুজন?

‘নগরের ফুসফুস খ্যাত সিআরবিতে হাসপাতাল বন্ধের চাটগাঁবাসীর হ্নদয়জুড়ে একটি আশা, সিআরবিতে থাকবে শুধু পাখির বাসা নামে’ প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত হয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।

বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুর ৩টায় সিআরবি চত্বরে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পাখির বাসা হাতে নিয়ে সুজন বলেন, চাটগাঁবাসীর একটি আশা সিআরবিতে থাকবে শুধু পাখির বাসা।

তিনি উপস্থিত জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলেন, পাখিরা যেন সিআরবিতে শান্তিতে থাকতে পারে তার জন্য সিআরবিজুড়ে পাখির বাসা গাছে ঝুলিয়ে দিবেন। আর সকালে পাখিরা যাতে খাবার খেয়ে বাঁচতে পারে সেজন্য যে যেভাবেই খাবার রেখে যাবেন।

তিনি আরও বলেন, আজকের সমাবেশ কোনো আন্দোলন না। এটা হচ্ছে সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ। সিআরবি রক্ষার্থে আন্দোলনে সরকার কখনও বাঁধা সৃষ্টি করেন নাই। হন আইস্যে হন গিয়ে আরা ন-জানি। চাটগ্যাঁইয়া অক্কল আরা বেগ্গুন একত্রে আছি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড়

ফেসবুকে অনেকেই লিখেন— চট্টগ্রামের মানুষের কথা চিন্তা করে সিআরবির পাশে গোয়ালপাড়ায় হাসপাতালের অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাই হাসপাতালের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা মানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিরোধিতা করা।

এদিকে ‘জুতার বাড়ি’ শব্দের প্রয়োগ হাসপাতালের সমর্থনকারীদের উদ্দেশ্যেই— ফেসবুকে এমন মন্তব্যও করেন অনেকে। ব্যানারে ‘জুতার বাড়ি’ শব্দ প্রয়োগের জন্য অনেকেই তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে শাস্তি দাবি করেন।

আরও পড়ুন: চসিক ‘প্রশাসক’ সুজনের অনিয়মের ‘খোঁজ’—প্রতিবেদন ১৫ দিনের মধ্যেই

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন আলোকিত চট্টগ্রামকে বলেন, সিআরবি রক্ষা মানে পরিবেশ রক্ষা করা। আমরা কোনো আন্দোলন করি নাই। আমরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি। আমরাও চাই উন্নয়ন হোক। কিন্তু পরিবেশ নষ্ট করে নয়।

আপনার ফেসবুক পেজে একটি ব্যানারে চাটগাঁবাসী দেবে জুতার বাড়ি কথা লেখা আছে, জুতার বাড়িটা কাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে— প্রশ্ন করেন প্রতিবেদক। উত্তরে সুজন বলেন, এসব বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি এমন কিছু বলিনি।

আলোকিত চট্টগ্রাম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!